১৯৯৭ সাল। প্রেক্ষাগৃহে অশ্লীল চলচ্চিত্র। তাও আবার দেশি। চরম অস্থিরতা। হতবাক দর্শক। একটি শ্রেণী ছাড়া সবাই প্রেক্ষাগৃহ ছাড়ল। বিশেষ করে মহিলারা একেবারেই বিমুখ। নোংরামির মহোৎসব চলছে। সবই ঘটছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারীদের সামনে। তারা দেখেও দেখছেনা। চলচ্চিত্র দস্যুদের দখলে এফডিসি। মান সম্মান বাঁচাতে গুণী নির্মাতা ও শিল্পীরা এ জগত ছাড়লেন। এরই সঙ্গে যুক্ত হলো পাইরেসি। অবস্থা আরও ভয়াবহ। এ অবস্থায় মধ্য ও উচ্চবিত্তের দর্শক বাধ্য হয়ে ছোট পর্দায় ভিনদেশি ছবিতে ঝুঁকল। শেষ হলো বাংলা চলচ্চিত্রের সোনালি অধ্যায়। ক্ষোভের সঙ্গে ঢাকাই চলচ্চিত্রের এই অপমৃত্যুর কথা জানালেন চলচ্চিত্রকার রাজ্জাক, চাষী নজরুল ইসলাম, আমজাদ হোসেন, আজিজুর রহমান, মতিন রহমান প্রমুখরা। তাদের কথায়, এভাবে প্রায় দেড় যুগ কেটে গেল। কোনো ভাবেই হারানো গৌরব ফেরানো যাচ্ছিল না। মাঝে মধ্যে একটু আধটু আশার আলো জ্বললেও পরক্ষণে তা অন্ধকারে মিলিয়ে গেছে। চলচ্চিত্র নির্মাণ হ্রাস ও অনবরত প্রেক্ষাগৃহ বন্ধের ডামাডোলে চারদিকে হাহাকার আর হতাশা ক্রমেই জমাট বাঁধছে। এ সুযোগে চলচ্চিত্র দস্যুরা এদেশে ভারতীয় বাজার তৈরির অপতৎপরতায় মেতে উঠে। কিন্তু অন্ধকার যত নিকষ কালোই হোক তা কখনো স্থায়ী হয় না। রাতের শেষে দিন আসবেই। ২০১২ সাল থেকে চলচ্চিত্রের পশ্চিমাকাশে ঘুম ভাঙানিয়া আলোর রেখা ফুটে উঠতে শুরু করে। একদল নতুন নির্মাতার মুনশিয়ানায় চলচ্চিত্র শিল্প ঘুরে দাঁড়ায়। মৌলিক এবং বাণিজ্যিক, দুইধারার চলচ্চিত্রে আসে নতুনত্বের ছোঁয়া। দর্শক গুটি গুটি পায়ে আবার প্রেক্ষাগৃহমুখী হতে শুরু করে। মৌলিক ধারায় মোস্তফা সরয়ার ফারুকী, স্বপন আহমেদ, মুহাম্মদ মুস্তফা কামাল রাজ, রেদোয়ান রনির মতো একঝাঁক প্রতিশ্রুতিশীল তরুণ নির্মাতা আর বাণিজ্যিক ধারায় এম এ জলিল অনন্ত বিপ্লব ঘটান। মৌলিক ধারায় টেলিভিশন, লালটিপ, প্রজাপতি, চোরাবালি এবং অনন্তর দ্য স্পীড, খোঁজ দ্য সার্চ, মোস্ট ওয়েলকাম ইত্যাদি বাণিজ্যিক চলচ্চিত্র বৈপ্লবিক পরিবর্তন ঘটায়। এসব চলচ্চিত্র দেখতে ছোট পর্দায় আবদ্ধ হতাশ দর্শকরা প্রবল উৎসাহে প্রেক্ষাগৃহে ফিরতে শুরু করে। এ ধরনের চলচ্চিত্রের গল্প ও নির্মাণ ছিল আধুনিকতার ছোঁয়ায় সমৃদ্ধ। বিশেষ করে অনন্তের বাণিজ্যিক ধারার চলচ্চিত্র আন্তর্জাতিক মানের অ্যাকশন, লোকেশন, গল্প, গান, নৃত্য আর আধুনিক প্রযুক্তি নির্ভর হয়ে উঠায় সহজেই তা দর্শক নজর কাড়ে। তামিল ফ্লেভারে তার অভিনয় ও নির্মাণ ব্যাপকভাবে দর্শক গ্রহণযোগ্যতা পায়। ২০১২ সালে শুধু নির্মাণেই পরিবর্তন আসেনি, প্রদর্শনেও আধুনিকতা এসেছে। জাজ মাল্টিমিডিয়া নামক একটি প্রযোজনা সংস্থা প্রায় দুইশ প্রেক্ষাগৃহকে ডিজিটাল প্রযুক্তির আওতায় নিয়ে আসে। এতে নির্মাণেও এ প্রযুক্তির সুবিধা পাওয়ায় নির্মাণ ব্যয় কমে আসে। ফলে স্বল্প ব্যয়ে উন্নত প্রযুক্তির চলচ্চিত্র নির্মাণ ও প্রদর্শন লাভজনক হয়ে উঠায় দর্শক, প্রদর্শক এবং নির্মাতাদের মধ্যে স্বস্তি ফিরে আসে। ফিরতে শুরু করে ঢালিউডের সুদিন। এই ঈদে মুক্তি পাওয়া চলচ্চিত্রগুলো গত প্রায় তিন দশকের ব্যবসায়িক রেকর্ড ভঙ্গ করে। এ সাফল্যকে চলচ্চিত্রকাররা ঢালিউডের নবজন্ম হিসেবে দেখছে। পাশাপাশি এ সাফল্য ধরে রাখতে তারা দৃঢ় প্রতিজ্ঞ বলেও জানিয়েছেন।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।