নানা ঘটনায় চরম অস্থির অবস্থায় পড়েছে ঢালিউড। হরতাল-অবরোধ, এফডিসির আধুনিকায়ন নেই, ভারতীয় চলচ্চিত্র ছাড়ের অনুমতি, চলতি বছর চলচ্চিত্রের ব্যবসায়িক ব্যর্থতা, প্রেক্ষাগৃহ বন্ধ, শাবনূরের বিয়ে নিয়ে বিভ্রান্তি এবং পিয়ার আপত্তিকর মন্তব্যে বিব্রতকর অবস্থায় পড়েছে চলচ্চিত্রজগৎ।
চলতি বছরের শেষ দিকে এসে টানা অবরোধ হরতালে চলচ্চিত্র নির্মাণ ও মুক্তি ব্যাহত হচ্ছে। এতে ক্ষতির মুখে পড়েছে নির্মাতা এবং প্রেক্ষাগৃহ মালিকরা। বিশেষত গত ঈদে ও ঈদের পর মুক্তিপ্রাপ্ত চলচ্চিত্র গুলো হরতাল-অবরোধের কবলে পড়ে। এ কারণে বেশির ভাগ প্রেক্ষাগৃহ বন্ধ থাকায় চলচ্চিত্র নির্মাতা ও প্রেক্ষাগৃহ মালিকদের বড় অঙ্কের আর্থিক লোকসান গুনতে হয়েছে। যা এখনো অব্যাহত রয়েছে। এর ফলে বেশির ভাগ চলচ্চিত্রের মুক্তিও পিছিয়ে গেছে। ফলে অনিশ্চয়তা দেখা দিয়েছে চলচ্চিত্র ব্যবসায়।এফডিসির উন্নয়নে সরকার ২০১১ সালে প্রায় ৬০ কোটি টাকার আর্থিক সহায়তা দেয়। কিন্তু এ পর্যন্ত সংস্থার আধুনিকায়নে ওই অর্থ ব্যবহারে ব্যর্থ হয়েছে কর্তৃপক্ষ। ফলে উন্নয়নের সিংহ ভাগ অর্থ সরকারের কাছে ফেরত গেছে। বর্তমানে ডিজিটাল পদ্ধতিতে চলচ্চিত্র নির্মাণ শুরু হলেও এফডিসি কর্তৃপক্ষ গত ঈদের আগে প্রায় দুই কোটি টাকার নেগেটিভ ক্রয় করে সরকারকে আর্থিক ক্ষতির মুখে ফেলেছে বলে অভিযোগ করেছে চলচ্চিত্রকাররা। চলচ্চিত্র নির্মাণ ও প্রদর্শন ব্যবস্থা গত বছর থেকে ডিজিটাল পদ্ধতিতে হওয়ায় এই নেগেটিভের কোনো প্রয়োজন পড়ছে না। একথা জেনেও কর্তৃপক্ষ নেগেটিভ কেনায় ক্ষুব্ধ হয়েছে চলচ্চিত্র সংশ্লিষ্টরা।ডিজিটাল প্রযুক্তির ফলে চলচ্চিত্র ব্যবসার কিছুটা উন্নতি সত্ত্বেও সরকার ২০১২ সালে আমদানিকৃত এবং মামলাধীন থাকা চারটি হিন্দি চলচ্চিত্রকে ৩ নভেম্বর বিমানবন্দর থেকে ছাড়ের অনুমতি দেওয়ায় হতাশ হয়েছে চলচ্চিত্রকাররা। কারণ এতে আবার চলচ্চিত্র ব্যবসায় ধস নামার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে।
চলতি বছরের নভেম্বর পর্যন্ত ৫০টি চলচ্চিত্র মুক্তি পেলেও ব্যবসা সফল চলচ্চিত্রের সংখ্যা খুবই কম। মাত্র চারটি চলচ্চিত্র কোনোভাবে লগি্নকৃত অর্থ তুলতে পেরেছে। এ নিয়েও হতাশা রয়েছে চলচ্চিত্রকারদের মধ্যে। এ অবস্থার জন্য ডিজিটাল পদ্ধতির সুযোগে চলচ্চিত্রের নামে ঢালাওভাবে টেলিফিল্ম নির্মাণ ও প্রদর্শন করে দর্শক প্রতারণার চেষ্টাকে দায়ী করেছে সিনিয়র নির্মাতারা। কারণ এতে দর্শক বিক্ষুব্ধ হয়ে আবার প্রেক্ষাগৃহ বিমুখ হচ্ছে। তাছাড়া গল্প, গান, নির্মাণ ও অভিনয়ের মানের দিকে লক্ষ্য রাখা হচ্ছে না বলেও অভিযোগ রয়েছে।মন্দ ব্যবসায় হতাশ প্রেক্ষাগৃহ মালিকরা আবারও প্রেক্ষাগৃহ বন্ধ করতে শুরু করেছে। সারাদেশে বেশ কটি প্রেক্ষাগৃহ গত কয়েকমাসে বন্ধ হয়েছে। সর্বশেষ গত মাসে ভালুকার একমাত্র প্রেক্ষাগৃহ 'শাপলা সিনেমা' বন্ধ হয়ে গেছে।
এত সব নেতিবাচক অবস্থার মধ্যে শাবনূরের গোপন বিয়ে ও অনাগত সন্তানের খবর ফাঁস হয়ে পড়লে চলচ্চিত্র শিল্পীরা বিব্রতকর অবস্থায় পড়ে। চলচ্চিত্রকারদের মতে বিয়ে করা অপরাধ নয়। কিন্তু শাবনূর বার বার বিয়ের কথা অস্বীকার ও গোপন করে এখন বলছেন ২২ ডিসেম্বর সন্তান জন্ম দিতে যাচ্ছেন তিনি। এতে তার বিয়ে নিয়ে সাধারণ মানুষের মধ্যে সন্দেহ দেখা দিয়েছে। এ সন্দেহ জোরালো করেছেন শাবনূর ও তার স্বামী অনিক। শাবনূর বলছেন তারা বিয়ে করেছেন ২০১১ সালের ৬ ডিসেম্বর। আর অনিক বলছেন ২০১২ সালের ২৮ ডিসেম্বর। তাদের কথার এই গড়মিলে চলচ্চিত্র শিল্পী বিশেষত নায়িকাদের চরিত্র নিয়ে সাধারণ মানুষের কাছে সন্দেহ বেড়েছে। এ ঘটনার রেশ না কাটতেই নতুন করে সমালোচনার ঝড় তুলেছেন চলচ্চিত্রের উঠতি নায়িকা পিয়া। গত ৪ ডিসেম্বর নিজের ফেসবুকে সাংবাদিক ও সংবাদ মাধ্যম সম্পর্কে আপত্তিকর স্ট্যাটাস দিয়ে গণমাধ্যম ও চলচ্চিত্রকারদের মধ্যে রোষের জন্ম দিয়েছেন তিনি। এক স্ট্যাটাসে তিনি লেখেন 'আজকাল কিছু নিউজ পেপার লিড অ্যাক্টরদের বাদ দিয়ে সেকেন্ড অ্যাক্টরদের নিয়ে নিউজ দেয়, বাহ বেশ ভালো। দর্শক যখন মুভি দেখবে, পরে জুতা মারবে, ওটাই তাদের জন্য ভালো।' অন্যটিতে লেখেন, 'আজকাল কিছু জার্নালিস্ট লিড অ্যাক্টরদের বাদ দিয়ে সাইড অ্যাক্টরদের নিয়ে নিউজ বানিয়ে ফেলে, বাহ ভালো তো ভালো না। দর্শক যখন দেখবে মুভি তখন পরে জুতা মারবে- এটাই তাদের জন্য প্রযোজ্য।' এই আনকোড়া উঠতি নায়িকার এহেন গর্হিত আচরণে ফুঁসে উঠেছে সংবাদ মাধ্যম। সাংবাদিকরা বলছেন, অতীতে চলচ্চিত্রের কোনো মানুষ সাংবাদিকদের সঙ্গে এমন নিন্দনীয় আচরণ করেনি। পিয়ার সংবাদ বর্জনসহ তাকে এর সমুচিত জবাব দিতে হবে। সে যদি এর জন্য ক্ষমা না চায় তাহলে তার ভবিষ্যৎ সুখকর হবে না। এ ঘটনায় চলচ্চিত্রকাররাও সংবাদ মাধ্যমের কাছে লজ্জাজনক অবস্থায় পড়েছে। এসব ঘটনায় ঢালিউড এখন অস্থির সময় পার করছে বলেও চলচ্চিত্রকারা ক্ষোভের সঙ্গে জানান।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।