আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

কালের খেয়াল

আদর্শটাকে আপাতত তালাবন্ধ করে রেখেছি

'অমৃত মেঘের বারি, মুখের কথায় কি মেলে চাতক, স্বভাব না হলে' * চাতকের হয়তো খেয়াল নেই পৌরাণিক কাহিনীর যুগ শেখ। তার হাহাকার সমুদ্রে মিশে গেলেও যেতে পারে; কিন্তু নীলকন্ঠ যতোই মন্থনের সংহারে গলাটাকে ব্যস্ত রাখুন না কেনো- চাতকের ভাগ্যে অমৃতের বৃষ্টি ঝরার আশংকা খুবই ক্ষীণ, কারণ কখনোই নীলকণ্ঠের অভ্যাস হবে না জীবনের বিষ গিলে ফেলা। রাটিনাস খেয়ে মরার সৌভাগ্য কোটি মানুষের একজনের হয়, তাও সারাজীবনে একবার। চাতকের স্বভাব যন্ত্রণাদায়ক। 'চাতক জাতির এমনি ধারা, তৃষ্ণায় জীবন যায় গো মারা' * চাতকের স্বভাব যন্ত্রণাদায়ক।

তবে তা নিশ্চয়ই অন্য চাতকের কাছে নয়। বৃষ্টিবাদলার দিনে পুকুরে ডুব দিয়ে ময়লা আর পরিষ্কার পানি মেশানো গোসলে তৃষ্ণার জলের তৃষ্ণা সারা অঙ্গ দিয়ে ছুটতে গিয়ে সব পানি শুকিয়ে যখন শরীরের ঘাম বাতাসের জলীয় বাষ্প বাড়ায়, চোখের জলও তখন ঘামের সাথে পাল্লা দিয়ে পারে না। একদিন অনেক চোখের জল ঝরবে জানি, সেটা দেখবে না কেউ। 'অন্য বারি খায় না তারা, শুধু মেঘের জল নইলে' * একদিন অনেক চোখের জল ঝরবে জানি, সেটা দেখবে না কেউ, সেটাও জানি। কিন্তু অন্য বারির জন্য চাতকীয় সময় আস্তে আস্তে কীভাবে পার হয়ে গেলো, সেলুলয়েডের ফিতা সেগুলো ইথারে ভাস‍ালেও ভাসতে পারে।

চাতকের জন্য বিজ্ঞান লাগে না, বাতাসে কোনো ইথার আছে কি নেই, তার ধার ধারে না জগতের কোনো চাতকই; কিন্তু পানি পানের বিরতিতে মনে হয় কেউ যেনো ছিলো কোথাও! কোনো এক অন্ধকার জগতে চলে গেছে সে! 'মেঘে কত দেয় গো ফাঁকি, তবু চাতক মেঘের গো কি' * কোনো এক অন্ধকার জগতে চলে গেছে সে! ফাঁকি দিয়ে কি? অনেক কঠিন প্রশ্ন। উত্তর কিছুটা জীবনানন্দীয় হলেও জীবনের কাছে মোটেও আনন্দজনক ছিলেন না ওই জীবনানন্দ। সারাটা জীবন তাকে পেঁচা ডেকেছে, মশা ভুগিয়েছে কোনো এক সঙ্ঘারামে, কিন্তু জীবনকে সবাই ফাঁকি দিতে পারলেও বস্তুগত জীবন জীবনানন্দকে কত ফাঁকিই যে দিয়েছে! জীবনানন্দের জীবনটা নিয়ে আনন্দটাকে ছড়িয়ে দিয়েছে সারাজগতপানে, জীবন‍ানন্দ শুধু বিষাদে ছুঁয়ে শুয়ে আছে কোনো এক রাত্রির গুহায়। বিছানাটা আমার পাশে। আমি দেখছি ওই বিছানা।

'তেমনি নিরিখ রাখলে আঁখি, তারে সাধক বলে' * আমি দেখছি ওই বিছানা। একলব্যের দৃষ্টি দিয়ে। আমি কি আসলেই কোনো সাধক! সূর্যপানে তাকাতে হয় না সেকেন্ডখানেকও, অতৃপ্তের কিংবা অনধিকারের অশ্রু বেয়ে আসে চোখের কোণ দিয়ে। তার সাথে কি দুঃখাশ্রুর স্বাদে কোনো পার্থক্য আছে? মোহনার পানি নদীর, কিন্তু স্বভাবে সমুদ্র। নদী তাকে ঠেলে দেয় পর করে, সমুদ্র তাকে মনে করে পতিত।

পতিত মানুষেরই উড়ে বেড়াবার বড় সাধ হয়! 'মন হয়েছে পবন গো কি, উড়ে বেড়ায় দিবারাতি' * পতিত মানুষেরই উড়ে বেড়াবার বড় সাধ হয়! ওই যে, মন নামের অব্যাখ্যাত অগুরুত্বপূর্ণ অবস্তুটিকে মানুষ অতি খামাকা ফেনিয়ে তুলে। জীবনের মানে ছোট নয় জানি, একটি দুটি বৃন্ত থেকে ফুল ফুটলেও অসংখ্য বৃন্ত মোটেও ফলবতী হয় না; কিন্তু তাতে তো ফলের মূল্য কমে যায় না! মর্দা পুরুষ গাছ থেকে সোমত্ত নারী গাছ একটু মনোযোগ আশা তো করতেই পারে। উড়ে বসা মৌমাছির ঘামের গন্ধ হয়তো সেই চাতকের মতোই তৃষ্ণা নিভিয়ে দিতে পারে। যেভাবেই হোক, তৃষ্ণা মেটানোই চাতকের বড় দায়। আমি কাউকে কিছু বলি না।

'লালন বলে গুরুর প্রতি, মন রয় না সুহালে' * আমি শুধু কাউকে কিছু বলি না। আমার কোনো মন নেই।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।