নিজের বিষয়ে কিছুই বলিবার নাই
আসসালামু আলাইকুম,
আমাদের দেশে গণতন্ত্রের সমস্যার অন্ত নাই। আর সেই সমস্যার কথা বলা শুরু করিলে সুশীল হইতে দুঃশীল--প্রায় সকলেই সর্বপ্রথমে যে-বিষয়টির প্রতি অগ্নিবর্ষণ শুরু করিয়া থাকেন তাহা হইতেছে এই দেশের গণতন্ত্র নাকি পারিবারিক!!!। গণতন্ত্র জনগণের তন্ত্র। এইখানে পারিবারিক গণতন্ত্র বলিয়া কোনো বিষয় নাই। একই পরিবার হইতে এসাথে বা ভিন্ন-ভিন্ন সময়ে অনেকেই রাজনীতিতে আসিতে পারেন।
তাহাতে দোষের কিছু নাই বলিয়া মনে করি। আর তাহা ছাড়া জনগণ যদি পছন্দ না-করিয়া থাকেন তাহা হইলে রাজনৈতিক ''পরিবারের সদস্য বলিয়া'' কোনো-একজনকে জনগণের ঘাড়ের উপর চাপাইয়া দেয়াটা সহজ নয়। চাপাইয়া দেওয়া হইলেও তাহা শেষ পর্য্ন বজায় রাখা কঠিন হইতে কঠিনতর হইয়া যায়। ভারতে ইন্দিরা-গান্ধী পুত্র সঞ্জয় গান্ধীকে সেই দেশের জনগণকে মনে-প্রাণে গ্রহণ করিতে পারে নাই। আর সেই কারণে ইন্দিরা গান্ধীকে ানেক মূল্য দিতে হইয়াছিলো।
আমাদের দেশেও তারেক রহমানের উদাহরণ দেয়া যায়। জনগণ তাহাকে যে-আবেগ দিয়া প্রথমে গ্রহণ করিয়াছিলো তিনি শেষ পর্যন্ত সেই আবেগের প্রতি ভালোবাসার প্রতি যথার্থ সম্মান বজায় রাখিতে পারেন নাই। তাহার জন্যও বেগম খালেদা জিয়াকে অনেক মূল্য দিতে হ্য়াছে। হয়তো আরো দিতে হইবে।
এইখানে এইসব কথা বলিবার উদ্দেশ্য কী? উদ্দেশ্য কিছুই না।
শুধু এইটুকু কহিয়া যায় দরিদ্র দেশের অনেক সমস্যা । তাহার গণতন্ত্রেও হাজারও সমস্যা থাকিবে। তাই বলিয়া সেই সমস্যার কথা বলিতে গিয়া গণতন্ত্রকে যেন আঘাত করিয়া না বসি।
দক্ষিণ-এশিয়ার ফিলিপাইন আমাদের মতোই একটি উন্নয়নশীল দেশ। সেই দেশেও রাজনৈতিক-অর্থনৈতিক জাতিগত সঙকটের অন্ত নাই।
সেখানে সম্প্রতি অনুষ্ঠিত নির্বাচনে বিজয়ী হইয়া দেশের ১৫ তম প্রেসিডেন্ট হিসাবে শপথ নিয়াছেন বেনিগনো নয়নয় একুইনো( পুরা নাম Benigno Simeon "Noynoy" Cojuangco Aquino III)। জনগনের নিকট তিনি ''নয়নয়'' নামেই বেশি পরিচিত।
কে এই নয়নয় একুইনো?
ফিলিপাইনের মার্কোস-জামানার কথা অনেকেরই জানা। একটি গণতান্ত্রিক সরকারও যে ক্ষমতার মোহে অন্ধ হইয়া কীভাবে ধীরে-ধীরে পাশবিক স্বৈরতন্ত্রের দিকে ধাবিত হয় তাহার এক জঘন্য নজির স্থাপন করিয়াছিলেন এই ফার্ডিনান্ড মার্কোস (Ferdinand Marcos)
তাহার সেই একনায়কতন্ত্রের বিরুদ্ধে যিনি রুখিয়া দাড়াইয়াছিলেন তিনি হইতেছেন সিমিয়ন একুইনো (Benigno Simeon "Ninoy" Aquino)। মার্কোস নিজের ক্ষমতা কুক্ষিগত করিবার স্বার্থে তাহাকে মার্কিন-মুলুকে নির্বাসনে পাঠায়।
তিন বছর নির্বাসনে থাকিবার পর দেশে ফিরিবার মাত্র কয়েক মিনিটের মধ্যে ম্যানিলা-বিমানবন্দরেই এই গণতান্ত্রিক নেতা আততায়ীর গুলিতে নিহত হন। সকলেই এই ঘটনার কারণে মার্কোসকে দায়ী করিলেও মার্কোস সাহাব প্রথমে সেই ঘটনার দায়-দায়িত্ব অস্বীকার করেন আর এই ঘটনার জন্য সেই দেশের কমিউনিস্টদেরকে জড়াইবার নানান চেষ্টা-কসরত করেন। (যেখানে যা কিছু ঘটে অনিস্টি/মূলে কেটা তার কমিউনিস্টি!!!)। সারা দেশ এই অমানবিক ঘটনায় উত্তাল হইয়া উঠে। একুইনো মৃত্যুর পর তাহার পত্নীও জনগণের সহিত রাস্তায় নামিয়া আসিয়াছিলেন।
শুধু তাহাই নয়। ১৯৮৫ সালে একুইনোর বিধবা-পত্নী নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করিবার ঘোষনা দেন।
১৯৮৬ সালের ৭ ফেব্রুয়ারির নির্বাচনে মিসেস একুইনে জয়ী হয়েন। তাহার পরে বিস্তর কাহানী। এইখানে শুধু বলিয়া রাখি নির্বাচনের ফলাফল বজায় রাখিবার জন্য ফিলিপাইনের জনগণকে শুধুই যে রাস্তায় নামিয়া আসিতে হইয়াছিলো তাহা নহে সেনাবাহিনীর সাজোয়া-যানের সামনেও অকুতোভয়ে দাড়াইতে হইয়াছিলো।
সেনাবাহিনী স্বৈরাচানী মার্কোসকে এইবার ক্ষমতায় রাখিতে পারে নাই। জনগণের সমর্থন নিয়া একুইনো ক্ষমতায় আসিলেন আর ২৫ ফেব্রয়ারি তারিখে মার্কোস তাহার প্রভুর দেশ মারইকন মুলুকের হনুলুলতে পলায়ন করেন। এইভাবে তাহার ২০ বছরের রাজত্বের অবসান হয়। গণতন্ত্রের মহাপ্রতিনিধির দেশ মার্কিন মুলুকেই১৯৮৯ সালে স্বৈরাচার মার্কোসের মৃত্য হয়।
কোরাজন একুইনো (পুরা নাম Maria Corazon "Cory" Sumulong Cojuangco Aquino (January 25, 1933 – August 1, 2009) একজন জনপ্রিয় রাষ্টপতি ছিলেন।
১৯৮৬ সালের মার্র্কিন ''টাইম ম্যাগাজিন'' তাহাকে নিয়া প্রচ্ছদ রচনা করে। যাহার শিরোনাম ছিলো : উইমেন অব দ্য ইয়ার (woman of the year)। । ঐ একই ম্যাগাজিন তাহাকে ''গণতন্ত্রের সন্ত'' (Saint of Democracy)হিসাবেও প্রশংসিত করে।
এইবার এই ২০১০ সালে ফিলিপাইনের রাষ্ট্রপতি হিসাবে শপথে নিয়াছেন তাহারই পুত্র নয়নয় একুইনো।
শুধু পিতা-মাতার ভাবমূর্তিকে কাজে লাগাইয়াই তিনি ক্ষমতায় আসেন নাই। একজন রাজনীতিনীতিবিদ হিসাবে তাহার নিজের যোগ্যতা যেমন কম নহে তেমনি তাহারও গণতান্ত্রিক আভিজ্ঞতা কম নয়। তিনি ক্ষমতায় আসিবার পূর্বেই দেশের দূর্নীতির বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করিবার অঙ্গীকার করিয়াছিলেন। তাহার শ্লোগান ছিলো :'' দূর্ণীতি নাই তো গরিবিও নাই'' (If there is no corruption, there is no poor)। শপথ নিবার পরেও তিনি তাহার সেই কথা পুনরায় স্মরণ করিয়া বলিয়াছেন :If there is no corruption, there is no poor.This is not just a slogan for a poster, this is the principle behind my administration।
ক্ষমতায় আসিবার পূর্বে এবং পরে অনেকে রাষ্ট্রনায়কই নানারকম বাগাড়ম্বর করিয়া থাকেন। দেখা যাক ফিলিপাইনের নয়নয় একুইনো দেশকে কতোটুকু অগ্রসর করিতে পারেন।
ফিলিপাইনের গণতন্ত্র দীর্ঘজীবী হউক।
সকলে ছহি-ছালামতে থাকিবেন।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।