আজকে ব্লগে কিছু লিখবো বলে শুরুতেই কিন্তু শিরোনামটি লিখি তবে ধর্ম শব্দটি বারবার মাথায় টোকা মারছে, হয়ত এটি এখন বাংলাদেশের প্রধান আলোচ্য বিষয় বলে। এর সাথে প্রায় সমোচ্চারিত শব্দ গুলো সেকুলারিজম, ৭২ এর সংবিধান, হিন্দু নির্যাতন ইত্যাদি। আমরা এই অঞ্চলের মানুষরা ধার্মিক ও অসামপ্রদায়িক। এই যে কিছু দিন আগে হিন্দু নির্যাতন হলো, তার আগে কি হিন্দু মুসলমান দাঙ্গার কোন পরিবেশ তেরী হয়েছিল? অবশ্যই না, তার মানে এটা রাজনৈতীক হতে পারে। কোন হিন্দু পরিবার কি বলেছে, আমার পাশের বাড়ির অমুকের ছেলেকে আগুন দিতে দেখেছি? এখনো উত্তর টা না।
তার মানে এরা বহিরাগত, তার মানে এটা রাজনৈতীক হতে পারে। তাহলে ব্যপারটা হিন্দু মুসলমান সংঘাত নয়। জোর করে কেউ আমাদের ঐ দিকে টেনে নিচ্ছে কোন অসৎ উদ্দেশ্যে। সমস্যার তাই স্থায়ী সমাধান রাজনৈতিক সমাধান, এটি অতীব জরুরী।
সেকুলারিজম, ৭২ এর সংবিধান একথাগুলো ও রাজনৈতিক মনে হয়।
যেমন, ৭২ এর সংবিধান না বলে কেন বলি না ২০১৪ এর সংবিধান। কেন ৪২ বছর আগে ফিরে যাওয়া? এই ৪২ বছরে কি বাংলাদেশ এগিয়ে যায় নি? কেন বলি না ২০১৪ সালে আমরা এমন একটি সংবিধান চাই যেটা হবে উন্নয়ন নির্ভর, মানুষের সকল মৌলিক অধিকার নির্ভর, এমনকি সামনের ৪২ বছরের চিন্তা চেতনার প্রতিফলন থাকবে। শুধু সেকুলারিজম শব্দের জন্য ৪২ বছর আগে ফিরে যাওয়ার কোন মানে হয় না, এটি তো যে কোন সময়ই অন্তর্ভূক্ত করা যায়। সেকুলারিজম মানে যেমন ধর্মহীনতা নয়, আবার সেকুলারিজম অন্তর্ভূক্ত করা হলেই কি সব সমস্যার সমাধান হয়ে যাবে? ভারতে তো ৭২ এর পর সেকুলারিজম অন্তর্ভূক্ত করা হয়েছে তবু ও কি বিজেপি এর মত ধর্মীয় দল নেই? শিব সেনার মত উগ্রবাদী সংগঠন নেই? আসলে সমস্যা সমাধানে যেটা প্রয়োজন সেটা হলো সমস্যা সমাধানের ঐকান্তিক ইচ্ছা ও মানসিকতা, যেটা আমাদের সাধারন মানুষের ইচ্ছা থাকলেও আমাদের রাজনীতিক দের নেই, কারনটা খুবই সহজ, এটাই তাদের পুঁজি।
ফিলিপাইনের সংবিধান ও সেকুলার।
ফিলিপাইনের কথা যখন আসলো তখন বাংলাদেশ প্রসঙ্গ থাক, কারন বাংলাদেশ এখন মোটামুটি দুইভাগ, কিছু বল্লে আবার কে তেড়ে আসে? ফিলিপাইনে রাস্ট্রীয় সকল রীতিনীতি এবং আইন কানুন প্রনয়নে খ্রীষ্টান ক্যথলিক গির্জা সমুহের অত্যন্ত প্রভাব। একটু ইতিহাস টেনে বলি, ফিলিপাইনের আদি অধিবাসীরা প্রায় ৩০ হাজার বছর আগে বোর্নিও ও সুমাত্রা দ্বীপ থেকে এখানে এসেছিল। এরপর দক্ষিণ থেকে মালয় জাতির লোকেরাও এখানে আসা শুরু করে। ৯ম শতকে চীনা ব্যবসায়ীরা এখানে আসে ও বসতি স্থাপন করে। তবে ১৬শ শতকে স্পেনীয়দের আগমনের আগে মালয়রাই ছিল ফিলিপাইনের প্রধান জাতি।
পর্তুগিজ অভিযাত্রী ফের্দিনান্দ মাগেলান ১৫২১ সালে ফিলিপাইনে পৌঁছান এবং স্পেনের হয়ে দ্বীপটি দাবী করেন। পরবর্তীতে স্পেনীয় শক্তি এখানে ধীরে ধীরে প্রভাব বিস্তার করতে থাকে এবং খ্রিস্টধর্মের পত্তন ঘটায়। বর্তমানে ফিলিপাইনের রাষ্ট্রীয় ধর্ম খ্রীষ্টান। প্রায় ১০ কোটি মানুষের ৯০% ই খ্রীষ্টান (৮০% ক্যথলিক খ্রীষ্টান, ১০% প্রোটেস্ট্যন্ট খ্রীষ্টান)। বিশ্বব্যাপী যেমন ক্যথলিক খ্রীষ্টানরা রক্ষনশীল এখানেও তার ব্যতিক্রম নয়।
আগেই বলেছি, রাস্ট্রীয় সকল রীতিনীতি এবং আইন কানুন প্রনয়নে খ্রীষ্টান ক্যথলিক গির্জা সমুহের অত্যন্ত প্রভাব। তাই বেশ কিছু ক্যথলিক আইন, ফিলিপাইনের রাস্ট্রীয় আইন হিসাবে স্বীকৃত, তার মধ্যে সবচেয়ে উল্ল্যেখযোগ্য হল ডিভোর্স। হ্যাঁ, ফিলিপাইনের রাস্ট্রীয় আইনে ডিভোর্স নিসিদ্ধ। কারন, ক্যথলিকরা মনে করে বিবাহের জন্য নারী পুরুষের যুগল গড কর্তৃক নির্ধারিত হয়, তাই মানুষের তা ভাঙ্গার অধিকার নেই। এটুকু পড়ে যাদের কপালে চিন্তার বলিরেখা দেখা দিয়েছে ( ) তাদের জন্য আশার আলো কিংবা যারা ভাবছেন ফিলিপাইনে জন্ম না নিয়ে তো বেচে গেলাম, তাদের জন্য দু:ক্ষের ( ) সংবাদ হলো ফিলিপাইনে লিভং টুগেদার () বৈধ।
আবার এখানকার বেরেতো বা এনজেল সিটি আমাদের দেশের বানিয়া সান্তা, টান বাজারের মত বস্তি নয়, এগুলো পাব, বার, নাইট ক্লাব, চোখ ধাঁধাঁলো আলোর ঝলকানি আর ইউরোপিয়ানদের আনাগোনা আমাদের পরিবেশের মানুষের জন্য এক কঠিন পরীক্ষা। আবার ফিলিপাইনের রাস্ট্রীয় আইনে জন্মনিয়ন্ত্রনের কথা বলা ছিলো না, কিন্তু সরকার এখন যখন জন্মনিয়ন্ত্রনের জন্য আইন প্রনয়নের উদ্যোগ নিল, তখন ই ক্যথলিক গির্জা সমুহের প্রচন্ড বিরোধের মুখে পড়ল, কারন, ক্যথলিক ধর্মমতে জন্মনিয়ন্ত্রনের বিধান নেই।
এবার একটা ডিনারের গল্প বলি। গত ৭ ই ডিসেম্বর আমাদের কম্পানির ফিলিপাইনে কর্মরত সকল কর্মকর্তা জন্য আয়োজন ছিল বাৎসরিক ডিনার, ম্যানিলার একটি সুন্দর হোটেলের রেস্টুরেন্ট এ। সর্বমোট ৫০ জনের মত।
অধিকাংশই ফিলিফিনো, আমরা ১০/১২ জন বিদেশী, জার্মান, ইংরেজ, কোরিয়ান, গ্রীক আর একমাত্র বাংলাদেশী আমি। বাংলাদেশ এ প্রচলিত একটা প্রবাদ ,,খাওনের আগে আর দরবারের শেষে,, আমরা খুব একটা না মানলেও ফিলিপাইনে এটাই সত্যি। খাবারের পর কারাওকি গান ফিলিপিনো দের কালচার, অনেক বছর ধরে ফিলিপাইনে থাকা আমার জার্মান কলিগ বল্ল ফিলিপিনো দের স্বাভাবিক ক্রোমোজম থেকে ও একটি ক্রোমোজম বেশী, তা হল সিংগিং (গান গাওয়ার) ক্রোমোজম। কারাওকি গানের সাথে চলে ড্রিংকিং। দেখে মনে হবে প্রতিযোগিতায় নেমেছে সবাই।
এ সময়টা আমার জন্য খুবই অস্বস্তিকর, কারন আমার হাতে সফট ড্রিংকস বা ফ্রুট জুস কেন প্রায় প্রতিজনকে এর উত্তর দিতে দিতে হয়রান হতে হয়। তো সে দিন আমি একটা কোনার টেবিলে চলে যাই আলাদা হওয়ার জন্য। কিছুক্ষন পরে আমার জার্মান ও ইংরেজ কলিগ ও আমার টেবিলে আসে, তারপর আমাদের ম্যনিলা অফিসের মেয়ে কলিগরাও (এডমিন / একাউন্টস) আমাদের টেবিলে চলে এসে আমার টেবিল আবার ভরপুর হয়েগেল। ইংরেজ কলিগ এবার সব মেয়েদের হিস্ট্রি নেয়া শুরু করল, বিয়ের কথা জিজ্ঞাসা করতেই একটা মেয়ে বলে উঠল সে এম,বি,এ সাথে সাথে আরো ২/৩ জন বলে উঠল তারাও এম,বি,এ। এবার জার্মান কলিগ বল্ল এম,বি,এ করলে কি বিয়ে করতে নেই? তোমরা এম,বি,এ করে এত ছোট পোস্টে জব কর কেন? তখন সিনিয়র এক মেয়ে কলিগ বল্ল এদের এম,বি,এ ডিগ্রী নেই, এরা আসলে ম্যারিড বাট এভেইলেবল, ইফ ইউ নিড।
তখন পুরো টেবিল জুড়ে হাসির রোল উঠে। তারপর অন্যান্য প্রসঙ্গে কথা চলে যায়। অনেক পরে জানলাম, ফিলিপাইনে ডিভোর্সের কোন আইন নেই, তাই বিয়ের পর বনিবনা না হলে তারা নিজেদের এম,বি,এ ডিগ্রীর পরিচয় দেয়, লিভ টুগেদার এর জন্য।
চলবে.........................
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।