আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

ফিলিপাইনের ডায়েরী = পর্ব - ৯ ফিলিপাইনের কিছু জানা অজানা তথ্য - ১



পশ্চিম প্রশান্ত মহাসাগরে অবস্থিত ৭১০৬ টি দ্বীপ নিয়ে গঠিত ফিলিপাইনের আয়তন ৩ লক্ষ বর্গ কিলোমিটার বা ১ লক্ষ ১৬ হাজার বর্গ মাইল (বাংলাদেশের দ্বিগুন)। জনসংখ্যা প্রায় ১০ কোটি (বাংলাদেশের দুই তৃতীয়াংশ)। রাজধানী শহর ম্যানিলা । মুদ্রা পেসো। ভুমিকা আর না বাড়িয়ে চলুন ফিলিপাইনের কিছু জানা অজানা তথ্য জেনে নেই।



১। ফিলিপাইনের নামকরন : স্পেনের রাজা ফিলিপ দ্বিতীয় এর নামের সম্মানে ফিলিপাইন নামকরণ করা হয়। 1521 সালে পর্তুগিজ অভিযাত্রী ম্যাগেল্লান ফিলিপাইনে আসেন এবং স্পেন জন্য দ্বীপপুঞ্জ দাবি করে নাম দেন আস্তুরিয়াস প্রিন্স (Prince of Asturias)। কিন্তু ১৫৭১ সালে স্পেনীয় কলোনি হওয়ার পর পুরো দ্বীপপুঞ্জের নামকরন করা হয় ফিলিপাইন দ্বীপপুঞ্জ (Las Islas Filipinas)। ১৮৮৯ সালে আমেরিকান ঔপনিবেশিক শুরু হলে তখন নামকরন হয় ফিলিপাইন দ্বীপপুঞ্জ (The Philippine Islands), নাম শুধু অনুবাদ হয়।

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের শেষে ১৯৪৬ সালের স্বাধীনতার সময় নামকরন হয় ফিলিপাইন প্রজাতন্ত্র (Republic of the Philippines)।

২। ফিলিপাইনের সংক্ষিপ্ত ইতিহাস : ফিলিপাইনের আদি অধিবাসী নেগ্রিতো জাতির লোকেরা প্রায় ৩০ হাজার বছর আগে বোর্নিও ও সুমাত্রা দ্বীপ থেকে এখানে এসেছিল। এরপর দক্ষিণ থেকে মালয় জাতির লোকেরাও এখানে আসা শুরু করে। মালয়রা এখানে বারাংগে নামে পরিচিত।

৯ম শতকে চীনা ব্যবসায়ীরা এখানে আসে ও বসতি স্থাপন করে।

কখনও কখনও আরবদের জাহাজও এখানে ভিড়ত, তবে ১৪শ শতকে শরীফ মোহাম্মদ নামে এক আরব সুফীর মাধ্যমে ফিলিপাইনের দক্ষিণে Mindanao প্রদেশে ইসলামের প্রচলন শুরু হয়। ধীরে ধীরে ইসলামী শাসন Mindanao প্রদেশ থেকে উত্তরে Luzon পর্যন্ত ছড়িয়ে পড়ে।

পর্তুগিজ অভিযাত্রী ফের্দিনান্দ মাগেলান ১৫২১ সালে ফিলিপাইনে পৌঁছান এবং স্পেনের হয়ে দ্বীপটি দাবী করেন। পরবর্তীতে স্পেনীয় শক্তি এখানে ধীরে ধীরে প্রভাব বিস্তার করতে থাকে এবং খ্রিস্টধর্মের পত্তন ঘটায়।

১৮১০ সালে মেক্সিকো স্পেন থেকে স্বাধীনতা ঘোষণার আগ পর্যন্ত ফিলিপাইনের দ্বীপগুলি স্পেনীয় উত্তর আমেরিকার অধীনে ছিল এবং ফিলিপাইন ও উত্তর আমেরিকার মধ্যে উল্লেখযোগ্য পরিমাণে যাতায়াত বিদ্যমান ছিল। লুসন দ্বীপের ম্যানিলা শহরকে কেন্দ্র করে স্পেনীয় ঔপনিবেশিক ব্যবস্থা গড়ে ওঠে এবং লোকজন গণহারে রোমান ক্যাথলিক ধর্মে ধর্মান্তরিত হতে শুরু করে। তবে কেন্দ্রীয় ফিলিপাইন ও লুসনের বাইরে, যেমন মুসলমান অধ্যুষিত Mindanao দ্বীপে স্পেনীয় প্রভাব ছিল কম। ১৯শ শতকের শেষের দিকে ইউরোপে শিক্ষিত ফিলিপিনোরা স্পেনীয় শাসনের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানাতে থাকে এবং ফিলিপিনোদের মধ্যে জাতীয়তাবাদের উন্মেষ ঘটে।

১৮৯৮ সালে স্পেনীয়-মার্কিন যুদ্ধে মার্কিনীরা ম্যানিলা উপসাগরে স্পেনীয় নৌবহরকে পরাজিত করে।

চীনা-বংশোদ্ভূত ফিলিপিনো নেতা এমিলিও আগিনালদো ঐ বছরের ১২ই জুন ফিলিপাইনকে স্পেন থেকে স্বাধীন ঘোষণা করেন। কিন্তু অচিরেই তাদের স্বপ্ন ভংঙ্গ হয়। কারন, স্পেনীয়দের পরাজিত করার পর মার্কিনীরা ফিলিপাইনের দখল নেয়। স্পেন প্যারিস শান্তি চুক্তিতে দ্বীপগুলি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রকে ২০ মিলিয়ন ডলার এর বিনিময়ে দিয়ে দেয়। কিন্তু ১৮৯৯ সালেই মার্কিন শাসনের বিরুদ্ধে ফিলিপিনোরা বিদ্রোহ শুরু করে দেয়।

যা ফিলিপাইনের স্বাধীনতা যুদ্ধ নামে পরিচিত। তিন বছর বিক্ষিপ্ত মার্কিন-ফিলিপিনো যুদ্ধে বহু হাজার ফিলিপিনো ও মার্কিন সেনা নিহত হয়। ১৯০২ নাগাদ ফিলিপিনো নেতা এমিলিও আগিনালদো নিহত হলে শান্তি প্রতিষ্ঠিত হয় এবং অচিরেই স্বাধীনতার অঙ্গীকার করা হয়। এর ফলশ্রুতিতে ১৯৩৬ সালে ফিলিপাইন কমনওয়েলথ গঠিত হয়।

কিন্তু ১৯৪২ সালে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্বের সময় মার্কিন শাসিত ফিলিপাইনের দখল নেয় জাপান।

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্বে এখানে অনেক নৃশংসতা ও যুদ্ধাপরাধ সংঘটিত হয়েছিল যেমন Bataan মৃত্যু মার্চ ও ম্যানিলার গণহত্যা। মিত্র বাহিনী ১৯৪৫ সালের ম্যানিলা যুদ্ধে জাপানিদের পরাজিত করে এবং এ যুদ্ধে এক মিলিয়ন ফিলিপিনো মারা গিয়েছিল বলে অনুমান করা হয়।

অবশেষে ১৯৪৬ সালের ৪ঠা জুলাই মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ফিলিপাইনের স্বাধীনতা সনদে সাক্ষর করে। ফিলিপাইনের স্বাধীনতা ও জাতীয় দিবস তাই ১২ই জুন, ৪ঠা জুলাই নয়।

৩।

ফিলিপাইনের জাতীয় পতাকা
: ১৮৯৭ সালে ফিলিপাইনে জাতীয় পতাকার ডিজাইন করা হয়। প্রত্যেক পতাকারই কিছু না কিছু প্রতীকি ব্যাখ্যা আছে। দেখি ফিলিপাইনের জাতীয় পতাকা কি বলে ....



সূর্য্য : স্বাধীনতা ও নতুন যুগের সূচনার প্রতীক।
সূর্য্যের ৮ টি আলো : ১৯ শতাব্দীতে স্পেনীয় শাসনের বিরুদ্ধে যে ৮টি প্রদেশে বিদ্রোহ শুরু হয় তার প্রতীক।
৩ টি সোনালি তারা : ৩ টি প্রধান ভৌগলিক অঞ্চল Luzon, Visayas এবং Mindanao.
সাদা রঙ - শান্তি এবং বিশুদ্ধতা প্রতিনিধিত্ব করে
লাল ডোরা - সাহস এবং বীরত্ব প্রতিনিধিত্ব করে
নীল ডোরা - উন্নত চরিত্র আদর্শের প্রতিনিধিত্ব করে

৪।

এক দেশ, দুই পতাকা
: সম্ভবত ফিলিপাইন বিশ্বের অনন্য একটি দেশ, যেখানে শান্তিকালীন সময়ের জন্য একটি পতাকা ও যুদ্ধকালীন সময়ের জন্য আরেকটি পতাকা আছে।



পতাকায় যদি লাল রংটি উপরে থাকে তবে যুদ্ধকালীন



পতাকায় যদি নীল রংটি উপরে থাকে তবে শান্তিকালীন।

৫। জাতীয় পতাকার নবম তারা : ১৯৯৮ সালে Zambales এর প্রাদেশিক সরকার জাতীয় পতাকার নবম তারা হিসাবে তাদের স্বীকৃতি দানের জন্য আবেদন করে, কিন্তু জাতীয় ঐতিহাসিক গবেষণা ইনস্টিটিউট এর রিপোর্টের উপর ভিত্তি করে, এই প্রস্তাব প্রত্যাখান হয় এবং ঐ রিপোর্টে মুসলিম অধ্যুষিত মিন্দানাও এর মরো জাতির সন্মানে জাতীয় পতাকার নবম তারা হিসাবে তাদের স্বীকৃতি দানের জন্য বলা হ্য়, কারন প্রায় ৪০০ বছর স্প্যানিশ শাসন থাকলে ও মিন্দানাও দখলে নিতে পারে নি। ২০০৯ সালে এ জন্য সিনেটে একটি বিল ও আনা হয় যা এখনো চুড়ান্ত রূপ পায় নি।



৬। ফিলিপাইনের জাতীয় সংগীত : স্বাধীনতার ১৪৮ বছর আগে স্প্যানিশ ভাষায় রচিত এই সংগীত ১৮৯৮ সালে জাতীয় সংগীত হিসাবে গৃহীত হয়। তবে বর্তমানে এটি শুধু তাগালগ ভাষায় ই গাওয়া হয়।



৭। ফিলিপাইনের জাতীয় প্রতীক : জাতীয় প্রতীক বা Coat of arms টি গৃহীত হয় ১৯৪৬ সালের ৩ জুলাই।

নিচের সিংহ ও ঈগল যথাক্রমে স্প্যানিশ ও শাসনের প্রতীক। বাকি গুলি জাতীয় পতাকার মতই একই অর্থ প্রকাশ করে।



৮। ফিলিপাইনের জাতীয় শ্লোগান : খুবই সুন্দর "For God, People, Nature, and Country" আমরা সৃষ্টিকর্তার জন্য, মানুষের জন্য, প্রকৃতির জন্য এবং দেশের জন্য।

ধন্যবাদ।



অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.