আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

ফিলিপাইনের ডায়েরী = পর্ব - ৩ ওলংগাপো বাংলাদেশ মসজিদ



আমি যে হোটেলে উঠেছি তার নাম বে ফ্রন্ট হোটেল, সুবিক । হোটেলটি খুব ছোট কিন্তু সুন্দর, পরিপাটি, সমুদ্রের পাশে, আমার রুমের জানালা দিয়ে সমুদ্র দেখা যায়। রাত্রী যাপন ৩৫০০ পেসো / রাত। সুইমিং পুল এ সাতার কাটা অসম্ভব, বড়জোর গোসল হতে পারে। মনে হয় সুইমিং পুল শুধু একটি ষ্টার বাড়ানোর চেষ্টা।

সকালের নাস্তা ফ্রী মেনু কোরিয়ান / আমেরিকান / জাপানিজ। তবে আমি মজা পেয়েছি (বলতে পারেন প্রেমে পড়েছি) কোরিয়ান স্পাইসী সী ফুড নুডুলস (জামবং রামিয়ান)।

আচ্ছা একটা ফুটো দেখাই, একেবারে খাওয়ার সময়ের ফটো



সুবিক একটি ছোট মেট্রোপলিটন সিটি (সুবিক বে মেট্রোপলিটন সিটি। এখানে আসলে একসাথে দুইটি শহর সুবিক এবং ওলংগাপো। ফিলিপাইন কিন্তু আমেরিকা থেকে স্বাধীনতা লাভ করেছে কিন্তু এই ওলংগাপো শহরে আমেরিকার নৌঘাটি ছিল ১৯৯৭ সাল পর্যন্ত (ফিলিপাইনের ইতিহাস নিয়ে কিছু জানাব অন্য কোন এক পর্বে)।

১৯৯৭ সালের পর আমেরিকার নৌঘাটি টি রুপান্তরিত হয় সুবিক বে মেট্রোপলিটন সিটি আর ওলংগাপো তার নিজস্ব নামে সিটি গর্ভমেন্ট এর আওতায় পরিচালিত। ফিলিপাইনের রাষ্ট্রীয় ধর্ম খ্রীষ্টান। প্রায় ১০ কোটি মানুষের ৯০% ই খ্রীষ্টান যারা প্রধানত ক্যথলিক আর ৫% মুসলমান, ২% বৌদ্ধ বাকি অন্যান্য। এই মুসলমান জনগোষ্ঠীর বাস দেশটির একেবারেই দক্ষিনে মিন্দানাও রিজিওন এর নানা প্রদেশে।

সুবিকে মুসলমানদের সংখ্যা কম।

আমি সুবিকে আসার ২/৩ দিন পর হটাৎ মনে হল একটা মসজিদ খুজে বের করা দরকার। যেহেতু ১ বছর থাকবো, মসজিদ চেনা থাকলে সময় করে নামাজের ব্যবস্থাটা হয়ে যায় আর মুসলিম দের সাথে আলাপ করে হালাল খাবারের দোকানের ও সন্ধান পেতে পারি। মসজিদ তো আর এমনি এমনি খোজা যায় না, তাই ভাবলাম টুপি মাথায় দেয়া অথবা মাথায় স্কার্ফ দেয়া মহিলার সাহায্য চাওয়া যেতে পারে। খুজতে খুজতে বাচ্ছাদের তৈরী জামার দোকানে একটা টুপি মাথার লোক দেখে দোকানে ডুকলাম। দোকানে আরো ৪/৫ জন মহিলা ছিল মাথায় স্কার্ফ দেয়া, মনে হলো ঠিক জায়গায় আসছি।

বল্লাম নামাজ পড়তে চাই, আশে পাশে কোন মসজিদ আছে কিনা। লোকটি শুধু হু হা করল, বুঝলাম এ লোক ইংরেজি বুঝে না। এক মহিলা এগিয়ে এসে বল্লেন, হ্যা আছে "বাংলাদেশ মসজিদ", আমি কিন্তু "বাংলাদেশ মসজিদ" কথাটা শুনার জন্য মনে হয় প্রস্তুত ছিলাম না। আমার প্রথমেই মনে হল আমি যে বাংলাদেশ থেকে আসলাম এটা এ মহিলা বুঝলো কেমনে? এর পর মহিলা যখন বল্ল সামনের মোড় থেকে ট্রাই সাইকেলে (হোন্ডার সাথে সংযুক্ত) বাংলাদেশ মসজিদ বল্লে ২০ পেসো তে নিয়ে যাবে, তখন বুজলাম, মসজিদটির নামই হলো বাংলাদেশ মসজিদ। আমি আপনাদের বলে বুঝাতে পারবো না, তখন আমার অনুভুতি কেমন হয়েছিল।

শুধু আমার প্রতিটি লোমকুপ দাড়িয়ে গিয়েছিল, আর অজানা এক আনন্দ আনুভুতিতে আচ্ছন্ন ছিলাম অনেকটা সময়। এটাই সুবিক আর ওলংগাপোতে একমাত্র মসজিদ যেখানে জম্মার নামাজ ও পড়া হয়।

চলুন ঘুরে দেখে আসি ওলংগাপো "বাংলাদেশ মসজিদ"

প্রথমে দেখি, বাইরে থেকে দেখতে মসজিদ টি কেমন ?



মসজিদ টির নাম ফলক



মসজিদ টির ভিতরের কিছু ছবি





মসজিদ টি কিভাবে হল ? কখন হল ? আপনাদের মন এটা নিয়ে কিন্তু আমার ও অনেক কৌতুহল ছিল এবং এখনো আছে। এটি তৈরীতে যে কোন এক মহান দেশপ্রেমিক ও দানবীর বাংলাদেশীর অগ্রনী ভূমিকা ছিল, তা মসজিদ টির নামের মাঝেই লুকায়িত। দানবীর বলার কারন বঝতে হলে এই সুবিক আর ওলংগাপোর জীবন মান বুঝতে হবে।

এখানে ৭০০ স,ফিট এর একটি বাসা ভাড়া ৩৫০০০ পেসো (বাংলাদেশী টাকায় প্রায় ৬৫০০০ টাকা), তাহলে জমির দাম টা কতটা মূল্যবান। সেখানে প্রায় ৫/৬ কাঠার উপর জায়গা মসজিদের জন্য দান করলে তাকে আমি দানবীর না বলে পারছিনা। আর মহান দেশপ্রেমিক জন্য দেখুন মসজিদের ফলক, এই ফলক ছাড়া মসজিদে আর কোন ফলক নেই, উনি প্রতিষ্ঠাতা হিসাবে উনার নামটি ও কোথায় ও নেই। বাংলাদেশ থেকে প্রায় ৩৩০০ কিমি দূরে এক অচেনা এলাকায় তিনি পরিচয় করিয়ে দিয়েছেন মাতৃভূমি বাংলাদেশকে।

চলবে ................

পূর্বের পর্ব গুলো এখানে Part 2 / Part 1


অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.