ফিলিপাইনের কিছু জানা অজানা তথ্য - ১ মানে আগের পর্বে খুব বেশি বই পুস্তক কথা হয়ে গেল, তবে এবার চেষ্টা করব একটু মজার তথ্য দিতে। সমস্যা কিন্তু এই এক জায়গায়, কে যে কিসে মজা পান.....
১। আচ্ছা ভাই আপনারা যারা চাকরি করেন, আপনারা মাসে ঠিক মত বেতন পান? আচ্ছা ভাই মাসে কয়বার বেতন পান? চোখ মাথায় উঠাবেন না, ফিলিপাইনের আইনে মাসে দুই বার বেতন দেওয়া বাধ্যতা মুলক, মাসের ১৫ তারিখ ও মাসের ৩০ তারিখ। এটা সরকারি অফিস যেমন বেসরকারি অফিসের জন্য ও প্রযোজ্য। যেমন জানুয়ারী মাসের বেতন জানুয়ারী মাসের ১৫ তারিখ ও ৩০ তারিখ পাবেন।
আপনি এটাকে হয়ত হাফ বেতন দুই বার বলতে পারেন। কিন্তু মাসে দুই বার বেতনের দিন, ভাবতেই তো অন্জন দত্তের সেই মাসের প্রথম দিনটা গানের কথা মনে পড়ে যায়। বেতনের দিন নিয়ে বেস্ট গানটার কথাগুলি ও চেন্জ করতে হতো।
২। ফিলিপাইনে স্ট্রীট ফুড বা খোলা দোকানের খাবার চিকেন ফ্রাই, মাছ ফ্রাই, শুকরের মাংস ফ্রাই, ডাবের পানি।
ডাবের পানিকে বলে বোকো জুস, পরিবেশন আবার একটু অন্য রকমই। অনেক ডাব কেটে বরফ দেওয়া একটা পাত্রে রাখা হয়। সেখান থেকে প্লাস্টিকের ওয়ান টাইম গ্লাসে ৫ / ১০ পেসোতে বিক্রী হয়। আবার অনেক দোকানে ডাবের পানি ২/৩ রকমের ফ্লেভারে ও পাওয়া যায়, যেমন অরেন্জ ফ্লেভার বা বানানা ফ্লেভার। তবে সবচেয়ে জনপ্রিয় স্ট্রীট ফুড সিদ্ধ ডিম।
যেন তেন ডিম নয় কিন্তু যে সমস্ত ডিমের ভিতর বাচ্ছা প্রায় হয়ে গিয়েছে সেই ডিম টাই সিদ্ধ করে সস সহ খাওয়া হয়। আপনাদের কি হয়েছে জানি না, আমার কিন্তু শুনেই তলপেট মোচড় দিয়েছিল।
৩। ফিলিপাইনে এসে গরুর মাংস বা বীফ খুজতে যবেন না। এরা বলে বাকা মিট, মোটামুটি খুব কম জায়গাতেই গরুর মাংস পাওয়া যাবে।
স্ট্রীট ফুড হিসাবে বীফ ফ্রাই প্রায় পাওয়াই যাবে না, কারন গরুর মাংসের কেজি বাংলা টাকায় ৬৫০/৭০০ টাকা, সেখানে শুকরের মাংস, এরা বলে বাবুই, কেজি বাংলা টাকায় ২০০/ ২৫০ টাকা। মুরগির মাংস, চিকেন ই বলে এরা কেজি বাংলা টাকায় ২৫০/ ৩০০ টাকা।
৪। সস্তা বলে ফিলিপাইনের যে কোন খাবারে শুকরের মাংস না থাকাটা অস্বাভাবিক। এমনকি ব্রেড কেনার সময় ও চেক করতে হবে হেম ব্রেড কিনে ফেলেননি তো।
তাই ফিলিপাইনে এসে যেখানেই খাবারের অর্ডার দিবেন জেনে নিবেন শুকরের মাংস আছে কিনা, শুধু যদি বলেন মুসলিম, নো বাবুই, তাতেই কিন্তু ওরা বুঝবে।
৫। ফিলিপাইনের সকল খ্রীস্ট ধর্মীয় ছুটি ই সরকারি ছুটি, মানে আগে থেকেই ঘোষনা থাকে। আবার দুই ঈদের দুই দিন ছুটি তার আগের দিন সরকারি সাধারন ছুটি হিসাবে ঘোষনা হয়। আবার কিছু ছুটি প্রাদেশিক ছুটি যেমন ঈদে মিলাদুন নবী বা শবে মেরাজ মিন্দানাও এলাকার মুসলিম প্রদেশ গুলিতে ছুটি থাকে।
তাই সরকারি ছুটি জানা থাকলেও হঠাৎ পেয়ে যেতে পারেন কোন প্রাদেশিক ছুটি।
৬। কুকুর পোষা ফিলিপিনো দের একটা প্যাশন বলতে পারেন। মোটামুটি সকল মহিলা এবং টিন এজ ছেলে মেয়ে সবার হাতেই একটা ছোট খাট ফ্যাশনেবল কুকুর ই। প্রতিটি সুপার স্টোরেই এই কুকুরের জিনিস পত্রের জন্য আলাদা তাক পাবেন।
কিন্তু মজার ব্যাপার হলো, যখন তারা কুকুরটি পরিবর্তন করতে চান, কিন্তু বিক্রি বা চেন্জ করতে না পারেন, তখন এটাকে দিয়ে ভূঁড়ি ভোজ করেন। কিন্তু কুকুরের মাংস খাওয়া ও বিপনন ফিলিপাইনের নিসিদ্ধ।
৭। সেকেন্ড হোম, কথাটা বলেই বাংলাদেশে সবার চোখে ভেসে উঠে স্বপ্নের মালয়েশিয়া। কিন্তু ফিলিপাইনে সেকেন্ড হোম মানে কিন্তু সপিং মল।
এখানে সপ্তাহের শেষে শনিবার ও রবিবার সপিং মল গুলোতে যে পরিমান ভীড় হয়, আমাদের ঈদে ও মনে হয় এত ভীড় হয় না।
৮। এখানে রাস্তার মোড়ে মোড়ে বার পাবেন, প্রতিটি সুপার স্টোরেই এই এই সব হট ড্রিংকস জন্য আলাদা তাক পাবেন। তাই হয়ত রাস্তার পাশে ১৩/১৪ বছরের বাচ্ছাকে ও ড্রাংক অবস্থায় পাবেন, যদিও ফিলিপাইনের ১৮ বছরের নিচে যে কারো মদ পান, এমন কি বিয়ার পান ও নিসিদ্ধ।
৯।
ফিলিপাইনের সাধারন মানুষ ফাস্ট ফুড এবং স্ট্রীট ফুড কে ডায়েট ফুড মনে করে। তাদের এই ধারনাকে পুঁজি করে ম্যাকডোনাল্ড, কে এফ সি, জলিবি, চৌকিং এর মত বিখ্যাত ব্রান্ডের পাশাপাশি নানা রকম ফাস্ট ফুড সপ পাবেন যে কোন অলিতে গলিতে। ব্রান্ডের খাবারের দোকানে আপনি যখনই যাবেন মহিলাদের বা টিনএজদের বিরাট লাইন পাবেন।
১০। পন (pawn shop) সপ।
মানে বন্ধকী দোকান। আপনার মুল্যবান জিনিষপত্র বন্ধকী রেখে একটা নির্ধারিত সুদে টাকা ধার নেওয়া। যেটা বাংলাদেশে এখন আর আছে কিনা (গ্রামে হয়ত থাকতে পারে, কিন্তু ঢাকা শহরে আমি দেখি নাই) আমার জানা নাই। কিন্তু এখানে আপনি এমন দোকান অনেক পাবেন, খুবই জাঁকজমক করে সাজানো।
১১।
ফিলিপাইনে মেয়েদের বাইরে পরার প্রিয় পোষাক শর্ট হাফ প্যান্ট এবং শর্ট ও ফিটেড টি শার্ট। আমি অনেক বয়স্কা মহিলাকে ও এই পোষাকে দেখেছি। কিন্তু এমন কোন ছেলে পাবেন না যে হাফ প্যান্ট পরে বাইরে এসেছে, কিছু কিছু ত্রি কোয়াটার প্যান্ট পরা পাবেন, তবে অধিকাংশই ফুল প্যান্ট পরা পাবেন। আবার মুসলিম মহিলাদের মুখ আর হাতের কব্জি ছাড়া সবই ডাকা থাকে। মুসলিম ছেলেদের ত্রি কোয়াটার প্যান্ট এবং টি শার্ট ই কমন।
এমনকি একদিন মসজিদের ঈমাম সাহেব কেও দেখলাম ত্রি কোয়াটার প্যান্ট এবং টি শার্ট পরা অবস্থায় নামাজ পড়াতে।
১২। ফিলিপাইনে মাল্টি ক্রস জেনারেশন মানে একটি ভিন্ন জাতিগত পটভূমি পাবেন। কেউ চীনা ফিলিপিনো, স্প্যানিশ ফিলিপিনো, আমেরিকান ফিলিপিনো, মালয় ফিলিপিনো আবার কেউ কোরিয়ান বা জাপানিজ ফিলিপিনো। অধিকাংশই উপনিবেশিকতার ফলাফল, আবার কিছু আন্চ্ঞলিকতার ফলাফল।
তবে মালয় ফিলিপিনো দেরকেই এখন নেটিভ বা আদি ফিলিপিনো বলা হয়।
বাকি গুলি পরের পর্বে
ধন্যবাদ।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।