আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

বাবুল, শাহ আলম, মান্নান এবং মধ্যবিত্ত হিপোক্রেটদের সুপরিকল্পিত শহর

সাহিত্যের সাইটhttp://www.samowiki.net। বইয়ের সাইট http://www.boierdokan.com

কয়দিন ধইরা আঙ্গুল খচখচ করতেছে একটা লেখার জন্য। কিন্তু সুমায় কইরা উডতে পারতেছিলাম না। এখন একটু সময় পাওয়া গেল। দেখি লেখতে পারি নিকি।

এই সরকারের বিপ্লবী গৃহায়ন ও গণপূর্ত প্রতিমন্ত্রী আব্দুল মান্নান খান। উনার লগে এ নিয়া দুই দফা ভূমিদস্যুদের বিতণ্ডা হইলো। বাংলাদেশের তাবড় তাবড় ভূমিদুস্যুর লগে বিপ্লবী একজন মন্ত্রী ফাইট দিতেছেন দেইখা মন ভাইরা যাওয়ার কথা। আমারও প্রথম দফা মন ভইরা গেছলো। প্রতিমন্ত্রী ভূমিদস্যুদের ধমক দিতেছেন টিভি ক্যামেরায় দেখতেছিলাম।

শুনা যায়, সরকারের বহু নেতা এই দস্যুদের কেনা গোলাম। সেই জায়গায় একজন প্রতিমন্ত্রী একা একা ফাইট দিতেছেন এইটা কেন জানি বিশ্বাস হইতে চায় না। জানি না, ক্ষমতা-পুঁজি-দস্যুতার লগে এই প্রতিমন্ত্রীর কিসের শত্রুতা। উনি কী করতে চান? কোন লক্ষ নিয়া উনি দস্যুদের বিরুদ্ধে ক্ষেপছেন। তবে উনার গতিবিধি যা খেয়াল করলাম তাতে, ওনার দৌড় বেশি না বইলা মনে হইলো।

প্রথমবার যখন যমুনা গ্রুপের বাবুল সাহেবরে উনি শায়েস্তা করতে মনস্থ করলেন তখন আপনেদের মনে পড়বে কী হইছিল। রাজউক যমুনা গ্রুপরে চিঠি দিছিল, যে আপনেরা যমুনা ফিউচার পার্কের টাওয়ার অনুমোদনের বাইরেও উচা করছেন। আমরা টাওয়ার ভাঙতে যাবো। যেই কথা সেই কাজ, রাজউকের মিস্ত্রিরা হাইকোর্ট, সুপ্রীম কোর্ট পাশে রেখে যমুনার দামি বিদেশী কাচ ভাঙতে লাগলো। প্রশ্ন উঠে পারে, যমুনা ফিউচার পার্কের মাথা ভাইঙ্গা কী লাভ হইলো? এতে রাজউকের দুর্নীতিগ্রস্ত কর্মচারী আর দস্যুরা মিলে যে একটা অসহনীয় সিটি বানাইছে তার কোনো সুরাহা কী হইবে? কিন্তু একটা জিনিশ বুঝা যায়, এতে শহরের কোনো উপকার না হইলেও মন্ত্রীর ইগো প্রশমিত হইলো।

বাবুলের দর্প চূর্ণ হইলো। এর বেশি কোনো লাভ হইলে সেইটা কী, জানার ইচ্ছা করে। এইবার শাহ আলমের লগে প্রতিমন্ত্রীর বিতণ্ডার পর প্রতিমন্ত্রীর দৌড় কিছু বুঝা গেল আবার। রাজউক আবার বসুন্ধরার দর্প চূর্ণ করার উদ্যোগ নিলো। শাহ আলমরে নোটিশ দিল।

বসুন্ধরার চূড়া ভাঙতে পারলে মন্ত্রীর ইগো শান্ত হইতো বটে। কিন্তু কেন জানি জিনিশটা আগাইলো না। হইতে পারে শাহ আলম আরও মন্ত্রী মিনিস্টারদের হাত করছেন। হইতে পারে, এমপিদের মাধ্যমে উনি চাপ দিতেছেন। ফলে, মন্ত্রী বলতেছেন, ওনারা আমার ভাই, ওনারা আমার খালা।

আবার বলতেছেন, ওনারা রাষ্ট্রের চাইতে নিজেদের শক্তিমান ভাবে। যে কোনো মূল্যে ড্যাপ আমরা বাস্তবায়ন করবো। শুনা যাইতেছে, ড্যাপ বাস্তবায়ন হইলে শাহ আলম আর বাবুল বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হবেন। তারা রাজধানীর চাইরদিকে জলাশয়ে বড় প্রজেক্ট নামাইছেন। ফলে মন্ত্রীর লগে একটা ঘোর গণ্ডোগল লাগছে।

মন্ত্রী চান, ড্যাপ, ওনারা চান না। ড্যাপ কইরা শান্তি পাওয়া মন্ত্রী যে আমাদের দেশে আছে এইটা ভাবতেও ভাল লাগে। যাই হউক, মন্ত্রী কেন এত সাহসী আর কেন এত দস্যু বিরোধী এই প্রশ্নের উত্তর আমার কাছে নাই। এ জন্য আরও উচ্চতর গবেষণা প্রয়োজন। এই গবেষণায় না গিয়া ড্যাপ নিয়া একটু ভাবি।

দেশে শহর একটাই। ঢাকা। এই শহরকে কেন্দ্র কইরা আমরা রাজনীতি, প্রশাসন, বাণিজ্য সব গইড়া তুলছি। শহর যে আরও দরকার তা ভাবি নাই। আর শহরও গড়ি নাই।

ফলে কোটি মানুষ এই শহরে জড়ো হইছে। আরও আসতেছে। এখন এই শহর উপচায়ে পড়তেছে। এইখানে নিম্নবিত্ত আসছে, বস্তি দরকার। মধ্যবিত্ত আসছে ফ্লাট দরকার।

উচ্চবিত্ত আসছে গুলশান বনানী দরকার। মধ্যবিত্ত আর উচ্চবিত্ত মিলে গাড়ি কিনতেছে, আমরা কইলাম সমস্যা গাড়ি না সমস্যা রিকশা। রিকশা তুইলা দেও, সমস্যার সমাধান হবে। রিকশা তোলা হইলো, এখন জ্যামের মধ্যে খালি গাড়ি, জ্যাম কমে না। এখন এই অল্প রাস্তা যারা দখল কইরা নিজেদের গাড়ি রাখতেছে তাদের আমরা কী বলবো? রাস্তা দস্যু? মধ্যবিত্ত কোনোদিনই গাড়ি কেনার সময় চিন্তা করে না, এই গাড়ির জায়গা কই হবে।

একজনকে বলেন, ভাই আপনে গাড়ি কিইনেন না। জায়গা দখল হবে। কী উত্তর পাবেন? আমার প্রশ্ন হইলো গাড়ি দিয়া রাস্তা দখল কইরা যারা দস্যুতা করলো তারা দস্যু না যারা গাড়ি আমদানি করলো তারা দস্যু? নাকি দস্যু সরকার যারা প্রত্যাশিতভাবে রাস্তা বাড়াইতে পারে নাই উপরে নিচে, ডাইনে বামে? গাড়ি দিয়া মধ্যবিত্ত যেমনে রাস্তা দখল করে ততো সহজে তো জমি দখল করা যায় না। ফলে মধ্যবিত্ত কী করে? তারা দস্যু নিয়োগ করে। যদি বলি মধ্যবিত্ত বাবুল, শাহ আলমদের দিয়া নিজেদের জন্য জমি দখল করায় তাইলে কী ভুল বলবো? একজন তার জীবনের সমস্ত আয় তুইলা দেয় একজন ডাকাইতের হাতে।

যারে প্রথম আলো ডাকাইত কয়, মিডিয়া ডাকাইত কয়, মন্ত্রী কয় তার হাতে সারা জীবনের সঞ্চয় মধ্যবিত্ত তুইলা দেয় কী মনে হইরা, এই প্রশ্নের উত্তর কে দিবে? আমার মনে, আমাদের মধ্যবিত্ত যদি সচেতন হইতো, আগে নিজে বদলায়ে অপরকে বদলানোর কথা চিন্তা করতো তাইলে বাবুল-শাহ আলমরা এত উন্নতি করতে পারতো না। মধ্যবিত্তরে ফ্লাট দরকার সে নদী, খালবিল নালা দখল কইরা বানানো বাড়ি কিনে। গাড়ি দরকার সে রাস্তা দখল কইরা গাড়ি চালায়। তারপর সে কয়, আমার সুখ দরকার। একটা সুখের শহর দরকার।

পরিকল্পিত নগর দরকার। এই জন্য সরকার ড্যাপ বানায়। বুড়িগঙ্গা থিকা স্থাপনা উচ্ছেদ করে। এইটা করে সেইটা করে। কিন্তু কিছুতেই কিছু হয় না।

এর মধ্যে একটা পরিহাসের মতো উপস্থিত হয় মন্ত্রীর হম্বিতম্বি। যে শহরে তিল ধারণের জায়গা নাই সেইখানে একটা ফ্লাটের স্বপ্ন বুকে নিয়া যখন মধ্যবিত্ত পত্রিকা পড়ে আর জামিলুর রেজা চৌধুরীর ড্যাপ কপচায় আর শাহ আলম বাবুলদের ডাকাইত কয় তখন হাসি লাগে। চোরের সাক্ষী গাইট কাটা। তার আবার ডিটেইল এরিয়া প্লান! মান্নানের লগে বাবুল শাহ আলমদের এই তর্কাতর্কির মধ্যে আমি এই মধ্যবিত্তের অনন্ত বাসনার দিকে তাকায়া থাকি।


সোর্স: http://www.somewhereinblog.net     দেখা হয়েছে বার

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.