আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

ম্যারাডোনার মেক্সিকো-বাধা! তবু্ও আমি আর্জেন্টিনা...............

এভাবে আর চলতে দেয়া যায়না...

মেক্সিকো কি চেয়েছিল আর্জেন্টিনাকে? উত্তর: না। ইংল্যান্ড কি চেয়েছিল জার্মানিকে অথবা জার্মানি ইংল্যান্ডকে? উত্তর: না। কিন্তু বিশ্বকাপের নিয়তি এবার এভাবেই চারটি দলের পথ বেঁধে দিল। গ্রুপের তিনটি ম্যাচই জিতে ম্যারাডোনার আর্জেন্টিনা স্বপ্ন দেখছে দুই যুগের শিরোপা-খরা ঘোচানোর। মেক্সিকোও সহজ প্রতিপক্ষ নয়, কিন্তু মেক্সিকো নিয়ে এত ভাবলে কি আর বিশ্বকাপ জেতার স্বপ্ন দেখা মানায়! জার্মানি-ইংল্যান্ড অবশ্যই দ্বিতীয় রাউন্ডের ম্যাচ হওয়ার কথা ছিল না।

ইংল্যান্ড গ্রুপ রানার্সআপ হয়ে যাওয়াতেই এত আগেই দেখা হয়ে যাচ্ছে দুই পরাশক্তির। যাদের দ্বৈরথকে শুধু ঐতিহ্যবাহী বললে সবটা বলা হয় না। যা সন্দেহ, ঈর্ষা, পারস্পরিক অবিশ্বাস, জাতীয়তাবোধের বিন্দুগুলো ছুঁয়ে পৌঁছে গেছে সারা বিশ্বের ফুটবলপ্রেমীর আগ্রহের শীর্ষবিন্দুতে। ১৯৬৬ বিশ্বকাপে জিওফ হার্স্টের হ্যাটট্রিকে জার্মানিকে ৪-২ গোলে হারিয়ে পাওয়া একমাত্র শিরোপার ঘ্রাণই এখন পর্যন্ত ইংল্যান্ডের সেরা অর্জন। যদিও জার্মানি সেই শ্রেষ্ঠত্বকে এখনো দেখে সন্দেহের চোখে।

হার্স্টের একটি গোলে বল গোললাইন পেরিয়েছিল কি না, ৪৪ বছর পরও তা অমীমাংসিত থেকে গেছে। আন্তর্জাতিক ফুটবলে সেই ১৯০৮ সাল থেকে দুই দলের লড়াই চলছে। বিশ্বকাপেও তো কত স্মরণীয় লড়াই। ১৯৯০ বিশ্বকাপের সেমিফাইনালে টাইব্রেকারে হার এখনো ইংল্যান্ডের বুকের গভীরে বিঁধিয়ে রেখেছে কাঁটা। ২০০৪ ইউরো সেমিফাইনালে আবারও টাইব্রেকারে হার।

ইংল্যান্ডের কাছে জার্মানি মানেই তাই টাইব্রেকার-দুঃস্বপ্ন। এ কারণে ২৩ জুন দ্বিতীয় রাউন্ড নিশ্চিত হওয়ার পর থেকেই পেনাল্টি প্র্যাকটিসটা ইংলিশদের কাছে অবশ্যকরণীয় বিষয় হয়ে উঠেছে। নানা প্রান্তের সাবেক গোলরক্ষকদের পরামর্শ প্রার্থনা করছে তারা। নানাজনের নানা রকম টোটকা আসছে ইংলিশ শিবিরে। প্রথম ম্যাচে রবার্ট গ্রিন শিশুসুলভ গোল খাওয়ার পর ইংল্যান্ডের গোলবারের নিচে আবারও দাঁড়িয়েছেন ডেভিড জেমস।

এই গোলরক্ষকও স্পট কিক ঠেকানোর জন্য প্রস্তুত হচ্ছেন। ২০০৪ ইউরোর কোয়ার্টার ফাইনালে পর্তুগাল গোলরক্ষক রিকার্ডোর স্পট কিকেই তো হূদয় ভেঙেছিল ইংলিশদের। বলা তো যায় না, জেমস যদি এবার হয়ে ওঠেন ইংল্যান্ডের সৌভাগ্যের প্রতীক! এ তো গেল পেনাল্টির কথা, যদি ওই পর্যন্ত খেলাটা যায়, তবেই এটির আলোচনা। কিন্তু নির্ধারিত সময়ের খেলায় কারা এগিয়ে? ফ্রাঞ্জ বেকেনবাওয়ার ইংলিশদের তাতিয়ে দিয়েছেন। বলেছেন, এই ইংল্যান্ডের চেয়ে জার্মানি দলটা অনেক ভালো।

কারণ ইংল্যান্ডকে দেখে মনে হয়েছে তারা ক্লান্ত। ল্যাম্পার্ড-জেরার্ডরা হুমকি দিয়েছেন, ‘দেখাই যাবে, আমরা ক্লান্ত কি না। বিশ্বকাপ আমাদের এখানেই শুরু। ’ পুরো ইংল্যান্ডে রব উঠেছে, যুদ্ধে যাও জিতে এসো, ম্যাচ আমাদের একটাই। দক্ষিণ আফ্রিকার যত ইংলিশ বংশোদ্ভূত গোটা জনগোষ্ঠীই সম্ভবত ব্লুমফন্টেইনে চলে গেছে।

বিমানের টিকিট নেই, বাসের টিকিটের জন্যও হাহাকার পড়ে গেছে। তাদের মুখেও স্লোগান, ‘এবার জার্মানির বিদায়। ’ ওদিকে জার্মানি তাদের মতোই নিরাসক্ত। লোহার বর্মে ঘিরে রাখা আবেগ নিয়ে তারা অপেক্ষায়। ২০০২ বিশ্বকাপের সোনার বল জেতা জার্মান গোলরক্ষক অলিভার কান এখন দক্ষিণ আফ্রিকায়।

তাঁর কথা, ‘হ্যাঁ, ইংল্যান্ড জিততেই পারে। তবে ফ্যাবিও ক্যাপেলোকে আগে নিশ্চিত করতে হবে অতীতের ভূত তাড়াতে পেরেছেন। ’ ইন্টারনেটের ব্লগে লাখ লাখ জনমতের সংখ্যাগরিষ্ঠ অংশ জয়ের মালা পরিয়ে রেখেছে জার্মানিকে। তবে নিরপেক্ষ বিচারে, ইংল্যান্ডকে পিছিয়ে রাখার উপায় নেই। তারা অভিজ্ঞ, তাদের আছে প্রতিপক্ষের ডিফেন্স ছিঁড়েখুঁড়ে ফেলার মতো একজন রুনি।

গ্রুপ পর্বটা পেরোনোর পর এই ইংল্যান্ড যে আবার ফেবারিটের চেহারা নেয়নি, কে বলতে পারে! জার্মানির দলটি তারুণ্যদীপ্ত। জোয়াকিম লোর ভরসা ছয় তরুণ—গোলরক্ষক ম্যানুয়ের নিউয়ার, জেরোম বোয়েটাং, সামি খেদিরা, মেসুত ওজিল, ডেনিস অ্যাউগু এবং মার্কো মারিন। একমাত্র নিউয়ার বাদে আর সবাই ২০০৯ অনূর্ধ্ব-২১ ইউরো চ্যাম্পিয়নশিপ দলের সদস্য। যে ফাইনালে ইংল্যান্ডকে ৪-০ গোলে বিধ্বস্ত করেছিল তারা। এটাই সাহস দিচ্ছে জার্মানিকে।

তা ছাড়া ইংল্যান্ডের খেলাটা জার্মানির ধরনের সঙ্গে যায়ও। এই জার্মানি অলঙ্ঘনীয় প্রাচীর নয়। এরা অনেক বেশি উন্মুক্ত খেলে। লাল কার্ডের শাস্তি ভোগ করে ফিরে এসেছেন মিরোস্লাভ ক্লোসা। তবে পেটের পেশিতে টান পড়ায় খেলতে পারবেন না স্ট্রাইকার কাকাউ।

বাস্তিয়ান শোয়েনস্টাইগারকে ফিরে পাবেন বলে আশাবাদী ম্যানেজার অলিভার বিয়েরহফ। আজ দুটি ম্যাচ। কিন্তু ইংল্যান্ড-জার্মানির পাঁচালি বড় হয়ে যাওয়ার কারণ, এই ম্যাচটাই বেশি উত্তেজিত করে তুলেছে মানুষকে। তবে জোহানেসবার্গ মাতিয়ে রেখেছে আর্জেন্টাইন সমর্থকেরা। এই বিশ্বকাপে তারাই সবচেয়ে প্রাণোচ্ছল সমর্থকের মর্যাদা পেয়েছে।

আকাশি-সাদা জার্সি, দুই রঙের নকল চুলটা দুই দিন আগেই তাদের অঙ্গের ভূষণ। অন্তত জোহানেসবার্গকে মনে হচ্ছে আর্জেন্টাইনদের দখলে। এখন ম্যাচের দখল নিতে পারলেই হয়। ডিয়েগো ম্যারাডোনা অবশ্য মেক্সিকোকে ফুলিয়ে ফাঁপিয়ে দেখার পথ বেছে নিয়েছেন। কাল সংবাদ সম্মেলনে বললেন, ‘ওরে বাবা, মেক্সিকোর আক্রমণভাগটা ভয়ংকর।

ওদের ঠেকানোই আমাদের বড় চিন্তা। আমরা ওদের শ্রদ্ধা করি। ’ গত বিশ্বকাপেও দ্বিতীয় রাউন্ডে মেক্সিকো সামনে পড়েছিল আর্জেন্টিনার সামনে। ম্যাক্সি রদ্রিগেজের অতিরিক্ত সময়ের দুর্দান্ত এক গোলে শেষ আটে পৌঁছেছিল অ্যালবিসেলেস্তিরা। এবার শুধু রদ্রিগেজের ভরসায় তারা বসে থাকবে না।

মাঠের খেলা দেখে মনে হয়, এঁদের ১০ জনই গোল করতে পারেন। মেসি গোল পাচ্ছেন না, তাতে কী? দরকার হলে ডেমিকেলিস গোল করে আসবেন। তবে মেক্সিকোর চিন্তা ওই একজনই—মেসি। ‘নেই’ ‘নেই’ করেও প্রতিপক্ষের স্বপ্ন খুন করে ফেলছেন ছোট্ট জাদুকর। মেসির বার্সেলোনা-সতীর্থ রাফায়েল মার্কেজ ‘দায়িত্ব’ নিয়েছেন, মেসিকে তিনিই আটকাবেন।

তাহলে আজও মেসির গোল পাওয়া হবে না? কিন্তু এখানকার জ্যোতিষীরা বলছেন, মেসির আজ গোল পাওয়ার দিন। তৃতীয় বিশ্বকাপ শিরোপা থেকে আর মাত্র তিন পা আগে পা ফেলার দিন আর্জেন্টিনার। এএফপি http://www.mstechnologybd.com

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.