আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

শঙ্খ ঘোষের ২৭টি কবিতা

নর্দমার রাত, হিরন্ময় তাঁত

মুখ ঢেকে যায় বিজ্ঞাপনে একলা হয়ে দাঁড়িয়ে আছি … তোমার জন্যে গলির কোণে ভাবি আমার মুখ দেখাব মুখ ঢেকে যায় বিজ্ঞাপনে। একটা দুটো সহজ কথা ….বলব ভাবি চোখের আড়ে জৌলুশে তা ঝলসে ওঠে বিজ্ঞাপনে,রংবাহারে। কে কাকে ঠিক কেমন দেখে …. বুঝতে পারা শক্ত খুবই হা রে আমার বাড়িয়ে বলা হা রে আমার জন্ম ভূমি। বিকিয়ে গেছে চোখের চাওয়া …. তোমার সাথে ওতপ্রত নিয়ন আলোয় পণ্য হলো যা কিছু আজ ব্যাক্তিগত। মুখের কথা একলা হয়ে …. রইলো পড়ে গলির কোণে ক্লান্ত আমার মুখোশ শুধু ঝুলতে থাকে বিজ্ঞাপনে।

_____________________________________ চুপ করো, শব্দহীন হও এত বেশি কথা বলো কেন? চুপ করো শব্দহীন হও শষ্পমূলে ঘিরে রাখো আদরের সম্পূর্ণ মর্মর লেখো আয়ু লেখো আয়ু ভেঙে পড়ে ঝাউ, বালির উত্থান, ওড়ে ঝড় তোমার চোখের নিচে আমার চোখের চরাচর ওঠে জেগে স্রোতের ভিতরে ঘূর্ণি, ঘূর্ণির ভিতরে স্তব্ধ আয়ু লেখো আয়ু লেখো আয়ু চুপ করো, শব্দহীন হও ________________________________________ ঝরে পড়ার শব্দ জানে তুমি আমার নষ্ট প্রভু ১. নষ্ট হয়ে যায় প্রভু, নষ্ট হয়ে যায়। ছিলো, নেই- মাত্র এই; ইটের পাঁজায় আগুন জ্বালায় রাত্রে দারুণ জ্বালায় আর সব ধ্যান ধান নষ্ট হয়ে যায়। ২. নষ্ট হয়ে যাবার পথে গিয়েছিলুম, প্রভু আমার! তুমি আমার নষ্ট হবার সমস্ত ঋণ কোটর ভরে রেখেছিলে। কিন্তু আমার অমোঘ মুঠি ধরে বুকের মোরগঝুঁটি সন্ধ্যাবেলা শুধু আমার মুখের রঙে ঝরে পড়ার ঝরে পড়ার ঝরে পড়ার শব্দ জানে তুমি আমার নষ্ট প্রভু! ৩. সকল প্রতাপ হলো প্রায় অবসিত জ্বালাহীন হৃদয়ের একান্ত নিভৃতে কিছু মায়া রয়ে গেলো দিনান্তের, শুধু এই- কোনোভাবে বেঁচে থেকে প্রণাম জানানো পৃথিবীকে। মূঢ়তার অপনোদনের শান্তি, শুধু এই- ঘৃণা নেই, নেই তঞ্চকতা, জীবনযাপনে আজ যতো ক্লান্তি থাক, বেঁচে থাকা শ্লাঘনীয় তবু।

______________________________ এজলাশ মাতঙ্গিনী হাজরাকে আমরা গুলি করে মেরেছি ধর্মাবতার সত্যি যে, মেরেছি আসামের স্কুলছাত্রী কনকলতা বরুয়াকে ঘরের বউ ভোগেশ্বরী ফুচননি-কে- সত্যি যে, দৈবাত আমরা নারীঘাতী, অসহায়ভাবে নারীঘাতী আমরা দৈবাত্। কিন্তু ভাবুন ধর্মাবতার, ভাবুন ঐ আন্দোলনওলাদের ধাষ্টামো “ভারত ছাড়ো’ হাঁক দিয়ে কাপুরুষেরা সামনে এগিয়ে দিয়েছিল মেয়েদের আমাদের হাত কলঙ্কিত করে দেবার জন্য ভাবুন কী ঘৃণ্য সেই চক্রান্ত, ধর্মাবতার। অমৃতসরে আমাদের নিছকই এক বদলা নেবার দিনটায় পাঁচিলঘেরা বাগানে যেখানে একটাই মাত্র সরু প্রবেশপথ যত্কিঞ্চিত নারীশিশুকে আমরা খুন করে ফেলেছি ঠিকই ওদের বুকের দিকে ছিটকে ছিটকে গেছে গুলি মাত্র ষোলশো রাউণ্ড আর খামোখাই লালরঙে ভিজে গেছে মাটি। ঠিক, কিন্তু ভাবুন ধর্মাবতার কোন হীন মতলবে ওখানে ওদের টেনে এনেছিল পাঞ্জাবের বুরবকরা আমাদের-শুধু আমাদেরই জব্দ করবার জন্য ! কিন্তু না কোনো এজলাশে একথা বলতে পারেনি কেউ আশ্চর্য যে সাফাই গাইবার জন্য এইটুকু বুদ্ধিও সেদিন হয়নি হাবা ইংরেজদের। ____________________________________________ ছুটি হয়তো এসেছিল | কিন্তু আমি দেখিনি | এখন কি সে অনেক দূরে চ’লে গেছে? যাব | যাব | যাব | সব তো ঠিক করাই আছে | এখন কেবল বিদায় নেওয়া, সবার দিকে চোখ, যাবার বেলায় প্রণাম, প্রণাম! কী নাম? আমার কোনো নাম তো নেই, নৌকো বাঁধা আছে দুটি, দুরে সবাই জাল ফেলেছে সমুদ্রে— __________________________________________ আন্দোলন ময়দান ভারি হয়ে নামে কুয়াশায় দিগন্তের দিকে মিলিয়ে যায় রুটমার্চ তার মাঝখানে পথে পড়ে আছে ও কি কৃষ্ঞচূড়া? নিচু হয়ে বসে হাতে তুলে নিই তোমার ছিন্ন শির, তিমির।

নিহত ছেলের মা আকাশ ভরে যায় ভস্মে দেবতাদের অভিমান এইরকম আর আমাদের বুক থেকে চরাচরব্যাপী কালো হাওয়ার উত্থান এ ছাড়া আর কোনো শান্তি নেই কোনো অশান্তিও না। ________________________________________ ক্রমাগত এইভাবে হতে থাকে ক্রমাগত কেউ মারে কেউ মার খায় ভিতরে সবাই খুব স্বাভাবিক কথা বলে জ্ঞানদান করে এইদিকে ঐ দিকে তিন চার পাঁচ দিকে টেনে নেয় গোপন আখড়ায় কিছু-বা গলির কোণে অ্যাসফল্ট রাজপথে সোনার ছেলেরা ছারখার অল্প দু-চারজন বাকি থাকে যারা তেল দেয় নিজের চরকায় মাঝে মাঝে খড়খড়ি তুলে দেখে নেয় বিপ্লব এসেছে কতদূর এইভাবে, ক্রমাগত এইভাবে, এইভাবে ক্রমাগত ____________________________________ ত্রিতাল তোমার কোনো ধর্ম নেই, শুধু শিকড় দিয়ে আঁকড়ে ধরা ছাড়া তোমার কোনো ধর্ম নেই, শুধু বুকে কুঠার সইতে পারা ছাড়া পাতালমুখ হঠাত্ খুলে গেলে দুধারে হাত ছড়িয়ে দেওয়া ছাড়া তোমার কোনো ধর্ম নেই, এই শূন্যতাকে ভরিয়ে দেওয়া ছাড়া। শ্মশান থেকে শ্মশানে দেয় ছুঁড়ে তোমারই ঐ টুকরো-করা-শরীর দু:সময়ে তখন তুমি জানো হলকা নয়, জীবন বোনে জরি। তোমার কোনো ধর্ম নেই তখন প্রহরজোড়া ত্রিতাল শুধু গাঁথা- মদ খেয়ে তো মাতাল হত সবাই কবিই শুধু নিজের জোরে মাতাল ! _______________________________ থাকা একটি কথা কখনো বলব না ভেবেছি আদি থেকে বন্ধুরা তবুও বারেবারে টেনে নিতে চায় সেই অমোঘ বর্ণেরই দিকে, বলে : সময় কি হয়নি জানার? ব্যথায় ভরেছে মাটি-জলের আঘাত লেগে লেগে শুয়ে আছে ম্রিয়মাণ বুকে উড়ে-আসা বটপাতা স্থির হয়ে রয়েছে কপালে মধু তুলে এনেছি ঝিনুকে। মুখে দিয়ে বলি : এই ধুনো, এই আলোর সেতুতে মিলে যাওয়া জলের দুধার যা ছিল যা আছে আর থাকবে যা-সব এক হয়ে ভরে থাক মুহূর্ত তোমার।

একটি কথা কখনৈ বলব না ভেবেছি সোজাসুজি হয়নি তা বলার সময় আছি, তবু ভাঙা এই দেশকাল নিয়ে আজও আছি- এরও চেয়ে বড়ো কিছু হয়? ______________________________________ পুনর্বাসন যা কিছু আমার চার পাশে ছিল ঘাসপাথর সরীসৃপ ভাঙা মন্দির যা কিছু আমার চার পাশে ছিল নির্বাসন কথামালা একলা সূর্যাস্ত যা কিছু আমার চার পাশে ছিল ধ্বংস তীরবল্লম ভিটেমাটি সমস্ত একসঙ্গে কেঁপে ওঠে পশ্চিম মুখে স্মৃতি যেন দীর্ঘযাত্রী দলদঙ্গল ভাঙা বাক্স প’ড়ে থাকে আমগাছের ছায়ায় এক পা ছেড়ে অন্য পায়ে হঠাত সব বাস্তুহীন | যা কিছু আমার চার পাশে আছে— শেয়ালদা ভরদুপুর উলকি-দেয়াল যা কিছু আমার চার পাশে আছে— কানাগলি স্লোগান মনুমেন্ট যা কিছু আমার চার পাশে আছে— শরশয্যা ল্যাম্প পোস্ট লাল গঙ্গা সমস্ত এক সঙ্গে ঘিরে ধরে মজ্জার অন্ধকার তার মধ্যে দাঁড়িয়ে বাজে জলতরঙ্গ চূড়োয় শূণ্য তুলে ধরে হাওড়া ব্রিজ পায়ের নিচে গড়িয়ে যায় আবহমান | যা কিছু আমার চার পাশে ঝর্না উড়ন্ত চুল উদোম পথ ঝোড়ো মশাল যা কিছু আমার চার পাশে স্বচ্ছ ভোরের শব্ দ স্নাত শরীর শ্মশান শিব যা কিছু আমার চার পাশে মৃত্যু একেক দিন হাজার দিন জন্ম দিন সমস্ত একসঙ্গে ঘুরে আসে স্মৃতির হাতে অল্প আলোয় বসে থাকা পথ ভিখারি যা ছিল আর যা আছে দুই পাথর ঠুকে জ্বালিয়ে নেয় এতদিনের পুনর্বাসন | ___________________________________ প্রতিচ্ছবি জংলা পথের মধ্যিখানে সেই আমাদের সত্যিকারের বিভেদ। তখন থেকে উলটোমুখে চলছি দুজন ঝড়ঝঞ্ঝায় বাঁয়ের পথে আমি, ডাইনে তুমি। চলতে চলতে যত্সামান্য মনেও পড়ছে মিলনদিনের ছবি রক্তমূলক বিচ্ছেদেরও দাগ। চলতে পারি তবু কেবল নিজের মতো, আর জ্ঞানগম্যি ছলকে ছলকে দূরের থেকে বাঁকতে পারি আরো অনেক দূরে। যেতে যেতে কখন দেখি পরস্পরের পাশ -কাটানো পথ গিয়েছে ঘুরে বৃত্ত হয়ে- আমিই কখন হেঁটে যাচ্ছি তোমার পথে এবং তুমি আমার অতর্কিতে পালটে গেছে ডাইনে বাঁয়ে পথ হয়েছে অদলবদল বাঁকা তুমিই এখন আমি, আমিই তুমি রক্তরেখার এপার থেকে অবাক হয়ে আমার মুখে দেখছি তোমার স্পষ্ট প্রতিচ্ছবি।

____________________________________________ ফুলবাজার পদ্ম, তোর মনে পড়ে খালযমুনার এপার ওপার রহস্যনীল গাছের বিষাদ কোথায় নিয়ে গিয়েছিল? স্পষ্ট নৌকো, ছৈ ছিল না, ভাঙা বৈঠা গ্রাম হারানো বন্য মুঠোয় ডাগর সাহস, ফলপুলন্ত নির্জনতা আড়ালবাঁকে কিশোরী চাল, ছিটকে সরে মুখের জ্যোতি আমরা ভেবেছিলাম এরই নাম বুঝি বা জন্মজীবন | কিন্তু এখন তোর মুখে কী মৃণালবিহীন কাগজ-আভা সেদিন যখন হেসেছিলি সত্যি মুখে ঢেউ ছিল না! আমিই আমার নিজের হাতে রঙিন ক’রে দিয়ে ছিলাম ছলছলানো মুখোশমালা, সে কথা তুই ভালই জানিস— তবু কি তোর ইচ্ছে করে আলগা খোলা শ্যামবাজারে সবার হাতে ঘুরতে-ঘরতে বিন্দু বিন্দু জীবনযাপন? _______________________________________ বহিরাগত আমার কথা কি বলতে চাও না? নিশ্চিত তুমি বহিরাগত | উঁচু স্বর তুলে কথা বলে যারা জেনে নাও তারা বহিরাগত | গাঁয়ে কোণে কোণে গাঁয়ের মানুষ খেতে বা খামারে বহিরাগত | মরা মানুষের মুখাচ্ছাদন সরিয়ো না, ও তো বহিরাগত | মাঠে মাঠে ধরে যেটুকু ফসল সেসবও এখন বহিরাগত | চালার উপরে ঝুঁকে পড়ে চাঁদ বহুদূর থেকে বহিরাগত | বর্ষাফলকে বিষ মেখে নিয়ে কালো মুখোশের আড়ালে যত বহিরাগতরা এসে ঠিক ঠিকই বুঝে নেয় কারা বহিরাহত | ___________________________________________ বুক পেতে শুয়ে আছি ঘাসের উপরে চক্রবালে বুক পেতে শুয়ে আছি ঘাসের উপরে চক্রবালে তোমার ধানের মুখে ধরে আছি আর্ত দুই ঠোঁট তুমি চোখ বন্ধ করো, আমিও দুচোখ ঢেকে শুনি যেন কোন্ তল থেকে উঠে আসে পাতালের শ্বাস সমস্ত দিনের মূর্ছা সেচন পেয়েছে এইখানে মুহূর্ত এখানে এসে হঠাত্ পেয়েছে তার মানে নিজের পায়ের চিহ্ন নিজে আর মনেও রাখেনি আমিও রাখিনি কিছু, তবু হাত রাখে পিছুটান মাটিতে বসানো জালা, ঠান্ডা বুক ভরে আছে জলে এখনও বুঝিনি ভালো কাকে ঠিক ভালোবাসা বলে । _____________________________________ বৃষ্টি আমার দু:খের দিন তথাগত আমার সুখের দিন ভাসমান এমন বৃষ্টির দিন পথে পথে আমার মৃত্যুর দিন মনে পড়ে। আবার সুখের মাঠ জলভরা আবার দু:খের ধান ভরে যায় এমন বৃষ্টির দিন মনে পড়ে আমার জন্মের কোনো শেষ নেই। _______________________________ বৃষ্টি হয়েছিল পথে সেদিন অনন্ত মধ্যরাতে বৃষ্টি হয়েছিল পথে সেদিন অনন্ত মধ্যরাতে বাসা ভেঙে গিয়েছিল, গাছগুলি পেয়েছিল হাওয়া সুপুরিডানার শীর্ষে রূপোলি জলের প্রভা ছিল আর ছিল অন্ধকারে – হদৃয়রহিত অন্ধকারে মাটিতে শোয়ানো নৌকো, বৃষ্টি জমে ছিল তার বুকে ভেজা বাকলের শ্বাস শূন্যের ভিতরে স্তব্ধ ছিল মাটি ও আকাশ শুধু সেতু হয়ে বেঁধেছিল ধারা জীবনমৃত্যুর ঠিক মাঝখানে বায়বীয় জাল কাঁপিয়ে নামিয়েছিল অতীত, অভাব, অবসাদ পাথরপ্রতিমা তাই পাথরে রেখেছে সাদা মুখ আর তার চারধারে ঝরে পড়ে বৃষ্টি অবিরল বৃষ্টি নয়, বিন্দুগুলি শেফালি টগর গন্ধরাজ মুছে নিতে চায় তার জীবনের শেষ অপমান বাসাহীন শরীরের উড়ে যাওয়া ম্লান ইশারাতে বৃষ্টি হয়েছিল বুকে সেদিন অনন্ত মধ্যরাতে ______________________________________ বোকা আমি খুব ভালো বেঁচে আছি ছদ্ম সংসারে কানামাছি। যাকে পাই তাকে ছুঁই,বলি কেনযাস এ গলি ও গলি? বরং একবার অকপট উদাসীন খুব হেসে ওঠ্- শুনে ওরা বলে এটা কে রে তলে তলে চর হয়ে ফেরে? এমন কী সেদিনের খোকা আঙুল নাচিয়ে বলে ‘বোকা’! সেই থেকে বোকা হয়ে আছি শ্যাম বাজারের কাছাকাছি।

_________________________ ভয় ভয়? কেন ভয়? আমি খুব শান্ত হয়ে চলে যেতে পারি। তুমি বলো ভয়। দেখো চেয়ে অতিকায় আমার না-এর চৌকাঠে ছড়িয়ে আছে হাত- যে হাতে সমুদ্র, ঘন বন, জ্যোতির্বলয়ের ঘেরাটোপে শ্বাপদসুন্দর শ্যামলতা রক্তপাত, জীবনযাপন। প্রাগৈতিহাসিক ডাইনোসর স্মৃতি শুধু, ইতিহাস আছে- তুমি আর আমি শান্ত তার প্রবাহদুয়ার রাখি খুলে। তার মাঝখানে যদি পেশি একবারও কেঁপে ওঠে, সে কি ভয়? ভয় নয়।

ভয় শুধু শূন্যতাও যদি মুছে যায়- শুধু এই প্রতিধ্বনিহীন অস্তীতির ঘট ভেঙে গিয়ে কোথাও না থাকে যদি না তার পায়ে উঠে আসে ভয় শূন্যতাবিহীন শূন্যতায়। __________________________ মহা নিমগাছ ঈশানে নৈঋতে দুই হাত ছড়িয়ে দিয়ে মাটির উপর মুখ রেখে সে এখন শুয়ে আছে শেষ রাতের খোলা প্রান্তরে আর কেউ নেই শুধু তার পিঠের দিকে তাকিয়ে আছে লক্ষ লক্ষ তারা হাতের ডানায় লেগে আছে ঘাসের সবুজ, বুকে ভেজা মাটি এইটুকু ছাতা যেন কোনো কোমলতা ছিল না কোথাও কোনোখানে তারপর আকাশ আর পৃথিবীর ঢাকনা খুলে বেরিয়ে আসে ভোর এসে দেখে : যেখানে সে পা দুখানি রেখেছে, সেখানে কাল বিকেলের শেষ ঝড়ে পড়ে আছে কুরে খাওয়া সনাতন মহা নিমগাছ | __________________________________________ যমুনাবতী নিভন্ত এই চুল্লিতে মা একটু আগুন দে, আরেকটুকাল বেঁচেই থাকি বাঁচার আনন্দে! নোটন নোটন পায়রাগুলি খাঁচাতে বন্দী- দুয়েক মুঠো ভাত পেলে তা ওড়াতে মন দিই! হায় তোকে ভাত দেবো কী করে যে ভাত দেবো হায় হায় তোকে ভাত দিই কী দিয়ে যে ভাত দিই হায় ‘নিভন্ত এই চুল্লি তবে একটু আগুন দে, হাড়ের শিরায় শিখার মাতন মরার আনন্দে! দু’পারে দুই রুই কাতলার মারণী ফন্দী- বাঁচার আশায় হাত-হাতিয়ার মৃত্যুতে মন দিই! বর্গী না টর্গী না কংকে কে সামলায় ধার চকচকে থাবা দেখছো না হামলায়? যাস নে ও হামলায় যাসনে! কানা কন্যার মায়ের ধমনীতে আকুল ঢেই তোলে- জ্বলে না, মায়ের কান্নায় মেয়ের রক্তের উষ্ঞ হাহাকার মরেনা চললো মেয়ে রণে চললো! বাজে না ডম্বরু অস্ত্র ঝনঝন করে না জানলো না কেউ তা চললো মেয়ে রণে চললো! পেশীর দৃঢ় ব্যথ, মুঠোর দৃঢ় কথা, চোখের দৃঢ় জ্বালা সঙ্গে চললো মেয়ে রণে চললো! নেকড়ে-ওজর মৃত্যু এলো মৃত্যুরই গান গা- মায়ের চোখে বাপের চোখে দু’তিনটে গঙ্গা! দূর্বাতে তার রক্ত লেগে সহস্র সঙ্গী জাগে ধ্বক ধ্বক, যগ্গে ঢালে সহস্র মণ ঘি! যমনাবতী সরস্বতী কাল যমুনার বিয়ে যমুনা তার বাসর রচে বারুদ বুকে দিয়ে বিষের টোপর নিয়ে! যমুনাবতী সরস্বতী গেছে এ-পথ দিয়ে দিয়েছে পথ গিয়ে! নিভন্ত এই চুল্লিতে আগুন ফলেছে! __________________________________ হাতেমতাই হাতের কাছে ছিল হাতেমতাই চূড়োয় বসিয়েছি তাকে দুহাত জোড় করে বলেছি ‘প্রভু দিয়েছি খত দেখো নাকে। এবার যদি চাও গলাও দেব দেখি না বরাতে যা থাকে - আমার বাঁচামরা তোমারই হাতে স্মরণে রেখো বান্দাকে!’ ডুমুরপাতা আজও কোমরে ঝোলে লজ্জা বাকি আছে কিছু এটাই লজ্জার। এখনও মজ্জার ভিতরে এত আগুপিছু! এবার সব খুলে চরণমূলে ঝাঁপাব ডাঁই করা পাঁকে এবং মিলে যাব যেমন সহজেই চৈত্র মেশে বৈশাখে। _____________________________ যেন কোনোদিন যেন এই পৃথিবীতে কেউ কোনোদিন প্রেম বলে কোনো R্ণ রাখেনি কোথাও, যেন কেউ কোনোদিন কিশোর শিশির বুকে নিয়ে পুব সাগরের নীল পাড়ে দেখেনি প্রথম নারী যেন কোনোদিন।

নারী যে চোখের কোণ হদৃতটমূলে ভাসায় দু-ধার, যেন কেউ কোনোদিন তার মুখ রেখে দিয়ে আসেনি কখনো গাঢ়তল ভুবনের গহন শিলায়! যেন শুধু জলস্তম্ভে ছুটে যায় ফুল ঘট ভেঙে ভেসে যায় সিঁদুরের নাম আবর্ত বাজায় বুকে বুকে খর তালি - যেন কেউ কোনোদিন এমন নীরব পল্লবের মত নত প্রেমিক ছিল না! _____________________________ শবসাধনা বুঝি তোমার চাউনি বুঝি থাকবে না আর গলিঘুঁজি থাকবে না আর ছাউনি আমার কোথাও ও প্রমোটার ও প্রমোটার তোমার হাতে সব ক্ষমতার দিচ্ছি চাবি, ওঠাও আমায় ওঠাও | তুমিই চিরনমস্য, তাই তোমার পায়ে রত্ন জোটাই তোমার পায়েই বিলিয়ে দিই শরীর— যাঁর যা খুশি বলুন তিনি করবে তুমি কল্লোলিনী ভরসা কেবল কলসি এবং দড়ির | আমার বলে রইলো শুধু বুকের ভেতর মস্ত ধু ধু দিয়েছি সব যেটুকু ছিল দেবার ঘর ছেড়ে আজ বাইরে আসি আমরা কজন অন্তেবাসী শবসাধনার রাত কাটাব এবার | _______________________________ সবিনয় নিবেদন আমি তো আমার শপথ রেখেছি অক্ষরে অক্ষরে যারা প্রতিবাদী তাদের জীবন দিয়েছি নরক করে | দাপিয়ে বেড়াবে আমাদের দল অন্যে কবে না কথা বজ্র কঠিন রাজ্যশাসনে সেটাই স্বাভাবিকতা | গুলির জন্য সমস্ত রাত সমস্ত দিন খোলা বজ্র কঠিন রাজ্যে এটাই শান্তি শৃঙ্খলা | যে মরে মরুক, অথবা জীবন কেটে যাক শোক করে— আমি আজ জয়ী, সবার জীবন দিয়েছি নরক করে | ____________________________________ শরীর দিয়েছ শুধু, বর্মখানি ভুলে গেছ দিতে ও যখন প্রতিরাত্রে মুখে নিয়ে এক লক্ষ ক্ষত আমার ঘরের দরজা খোলা পেয়ে ফিরে আসে ঘরে দাঁড়ায় দুয়ারপ্রান্তে সমস্ত বিশ্বের স্তব্ধতায় শরীর বাঁকিয়ে ধরে দিগন্তের থেকে শীর্ষাকাশ আর মুখে জ্বলে থাকে লক্ষ লক্ষ তারার দাহন অবলম্বহীন ঐ গরিমার থেকে ঝুঁকে পড়ে মনে হয় এই বুঝি ধর্মাধর্মজ্ঞানহেন দেহ মুহূর্তে মূর্ছিত হল আমার পায়ের তীর্থতলে- শূন্য থেকে শূন্যতায় নিরাকার অস্ফূট নিশ্বাস মধ্যযামিনীর স্পন্দে শব্দহীন হল, তখনও সে দূর দেশে দূর কালে দূর পৃথিবীকে ডেকে বলে : এত যদি ব্যূহ চক্র তীর তীরন্দাজ, তবে কেন শরীর দিয়েছ শুধু, বর্মখানি ভুলে গেছ দিতে ! ______________________________________ শূন্যের ভিতরে ঢেঊ বলিনি কখনো? আমি তো ভেবেছি বলা হয়ে গেছে কবে। এভাবে নিথর এসে দাঁড়ানো তোমার সামনে সেই এক বলা কেননা নীরব এই শরীরের চেয়ে আরো বড়ো কোনো ভাষা নেই কেননা শরীর তার দেহহীন উত্থানে জেগে যতদূর মুছে নিতে জানে দীর্ঘ চরাচর তার চেয়ে আর কোনো দীর্ঘতর যবনিকা নেই। কেননা পড়ন্ত ফুল, চিতার রুপালি ছাই, ধাবমান শেষ ট্রাম সকলেই চেয়েছে আশ্রয় সেকথা বলিনি? তবে কী ভাবে তাকাল এতদিন জলের কিনারে নিচু জবা? শুন্যতাই জানো শুধু? শুন্যের ভিতরে এত ঢেউ আছে সেকথা জানো না? ____________________________________

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।