যখন আমি হবো শুধুই স্মৃতি, আমার এই ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র প্রচেষ্টা গুলো সবার সামনে আমাকে আরো স্মৃতিময় করে তুলবে। শঙ্খ হিন্দু সম্প্রদায়ের কাছে পবিত্রতার চিহ্ন। অশুভ শক্তি বিনাশের প্রতীক। কখনো পূজা-পার্বণের ধ্বনিতে কখনো শ্রী কৃষ্ণের রণবাদ্য আবার কখনো নারায়ণের হাতের পরশে কখনো বা সাবিত্রীর সতিত্ব বলয়ে। এ শঙ্খের জন্ম ও প্রাপ্তি সম্পর্কে হিন্দু সম্প্রদায়ের কাছে নানা কাহিনী প্রচলিত আছে।
পুরাণ মতানুসারে শঙ্খের জন্ম হয়েছে অসুরের অস্তি থেকে। শঙ্খচূড়ের ওপর নিক্ষিপ্ত হয়ে দেহ ভস্ম করার পর। শঙ্খ শুধু বিবাহিত ও হিন্দু রমণীর হাতের শোভা হিসেবে ব্যবহৃত হয় না, আরো অনেক কাজে ব্যবহৃত হয় ধর্ম ও বিশ্বাসের আধার হিসেবে। দেবতার পূজায় শঙ্খে কপিলা গাভীর দুধ ভরে নারায়ণকে স্নান করানো হয়। শঙ্খ দর্শনে পাপ ক্ষয় হয়।
শঙ্খধারী ব্যক্তি দর্শনে যমদূত পিশাচ, রাক্ষস কাছে ভেড়ে না। শঙ্খ ধ্বনি হিন্দুদের কাছে পবিত্র। সে জন্য পূজার সময়, সন্ধ্যার সময়, বিয়ের সময় এমনকি কোনো কোনো স্থানে অন্ত্যেষ্টিক্রিয়ার কালেও শঙ্খ বাজানো হয়ে থাকে। শঙ্খ ধ্বনি যতদূর পর্যন্ত যায় ততদূর পর্যন্ত লক্ষ্মী দেবী অবস্থান করে। শঙ্খ কূটরস পুষ্টিবর্ধক, বলকারক।
শূলকফ-শ্বাস-বিষ দোষনাশক হিসেবেও ব্যবহৃত হয়। মুখাবয়বের যে কোনো দাগ মোচন করে শঙ্খ চুন। তাছাড়া সবচেয়ে বড় বিষয় হলো শঙ্খ হিন্দু রমণীর সতীত্বের প্রতীক। বিবাহিত হিন্দু রমণীর ভবিষ্যৎ ও দাম্পত্য জীবনের সুখ স্বপ্নের সঙ্গে জড়িত রয়েছে একজোড়া শাঁখা। কারণ কুমারী অবস্থায় শাঁখা পরা যায় না।
তাই সে গুনতে থাকে প্রহর কখন তার হাতে উঠবে বিবাহের প্রতীক হিসেবে একজোড়া শঙ্খবালা। তাদের ধারণা, এ শঙ্খ বালা যতদিন তার হাতে থাকবে ততদিন তার স্বামী সুস্থ দেহে বেঁচে থাকবে। তাদের নিগূঢ় বিশ্বাস হাত শাঁখাহীন থাকলে স্বামীর অমঙ্গল হয়। হিন্দু রমণীর কাছে শাঁখা এত গুরুত্বপূর্ণ কেন? এ সম্পর্কে হিন্দু সম্প্রদায়ে প্রচলিত কাহিনীতে আছে, ব্রহ্মর কাছ থেকে শঙ্খচূড় অমরত্ব লাভ করলে দেবতারা তার অমরত্ব নষ্ট করার নিমিত্তে বিষ্ণুর কাছে প্রার্থিত হলেন। বিষ্ণু দেবতাদের মান রক্ষার জন্য শঙ্খচূড়ের অমরত্ব নষ্ট করার একটি ফাঁক খুঁজে বের করেন যে, শঙ্খচূড়া স্ত্রী তুলসীর সতীত্ব নষ্ট হয়ে গেলেই শঙ্খচূড়ের অমরত্ব নষ্ট হয়ে যাবে।
এক সময় তুলসীর সতীত্ব হরণের সুযোগ এসে গেল। শঙ্খচূড় তখন যুদ্ধের ময়দানে ব্যস্ত। বিষ্ণু শঙ্খচূড়ের রূপ ধারণ করে তুলসীর ঘরে এসে তার সঙ্গে দৈহিকভাবে মিলিত হন। শঙ্খচূড়া রূপ বিষ্ণুর মধ্যে অস্বাভাবিক আচরণ লক্ষ্য করে তুলসী মিলন শেষে তার পথ আগলে দাঁড়ায় এবং স্বমূর্তি ধারণের অনুরোধ জানান। বিষ্ণু নিজ রূপ ধারণ করতেই তুলসী তাকে অভিশাপ দেন তাদের অপরাধ জানাতে বলেন।
নিরুপায় বিষ্ণু তুলসী ও শঙ্খচূড়কে এই বলে বর দেন যে, তুলসী মর্ত্যরে মধ্যে বেঁচে থাকবে তুলসী গাছ হয়ে, যার পাতা ছাড়া পূজা হবে না আর শঙ্খচূড় বেঁচে থাকবে সমুদ্রের তলায় শঙ্খ হয়ে। শঙ্খ থেকে তৈরি শাঁখা ।
সাধারণত শঙ্খ পাওয়া যায় ভারত মহাসাগর ও বঙ্গোপসাগরে। তবে আরব সাগরেও কিছু প্রাপ্তি ঘটে। শঙ্খের প্রাপ্তির ওপর ভিত্তি করে শঙ্খের নানা নামকরণ করা হয়।
বিভিন্ন জাতের শঙ্খ রয়েছে। এদের মধ্যে উন্নতমানের হচ্ছে কন্যা কুমারী, রামেশ্বরী, কেপি, জাজি, পাটি মতি সালামত, ওমেনি, দোয়ালি, সারভি কি, তিতকুটি, ধলা ইত্যাদি।
মতি সালামত সর্বশ্রেষ্ঠ কারণ এর মাঝে মুক্তা পাওয়া যায়। শঙ্খের মুখ, লেজ ও পিঠ আছে। সাধারণত বাম দিকে শঙ্খের মুখ থাকে।
আর যদি শঙ্খের মুখ ডান দিকে বা দক্ষিণ দিকে থাকে তবে তার মূল্য অনেক। এটা নাকি নারায়ণের হাতের শঙ্খের অনুরূপ। এ দক্ষিণ মুখ শঙ্খকে সৌভাগ্যের লক্ষণ হিসেবে বিবেচনা করা হয়। এ শঙ্খ দ্বারা পূজা করলে সাত জনমের পাপ দূর হয়ে যায়। ঘরে সৌভাগ্য আসে, বিপদ-আপদ দূর হয়।
শঙ্খ একটি প্রাচীন শিল্প।
হরপ্পা ও মহেঞ্জোদারো সভ্যতা আবিষ্কারের সময় শঙ্খ শিল্পের বিভিন্ন কারুকাজের নিদর্শন পাওয়া।
পূর্বে প্রকাশিত ।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।