যেভাবে যাবেন শাঁখারিবাজার
গুলিস্তান থেকে বাস অথবা রিকশায় নবাবপুর ও রায়সাহেববাজার পেরিয়ে জনসন রোডের শেষ প্রান্তে নেমে হাতের ডানে হাঁটলেই যে গলিটি দেখা যাবে সেটিই শাঁখারিবাজার।
প্রায় ৪০০ বছরের পুরনো ঢাকার ঐতিহ্য এ শাঁখারিবাজার। জেমস ওয়াইজের ঢাকা নিয়ে লেখা বই থেকে জানা যায়— বল্লাল সেনের সঙ্গে দক্ষিণ ভারত থেকে বাংলাদেশে শাঁখারিরা এসেছিলেন। প্রথমদিকে এরা বসতি গড়ে তোলে বিক্রমপুরে। পরে ১৭০০ শতকে মুঘলরা ঢাকায় এলে এদের লাখেরাজ (খাজনাহীন জমি) সম্পত্তির লোভ দেখিয়ে ঢাকায় নিয়ে আসা হয়।
এই পরিবারের সবাই শাঁখা তৈরি করে বাংলার সনাতন ধর্মীয়দের শাখা সরবরাহ করত। যেখানে তারা বসবাস শুরু করে সেই জায়গাই হল আজকের শাঁখারিবাজার।
এই সময়ের শাঁখারি
শুরুতে যে অল্প পরিসর জায়গা শাঁখারিদের দেওয়া হয়েছিল, সেখানেই গড়ে ওঠে তাদের বসতি। এর বাইরে ছড়িয়ে পড়েনি তাদের আবাস। তাই শাঁখারিবাজারের ঘিঞ্জি পরিবেশের মধ্যে অনেক লোকের বাস।
ব্যবসায়ি পাপ্পু কর বলেন, “এক সময় পরিবারের সবাই শাঁখা ব্যবসায় যুক্ত ছিল। যুগের পরিবর্তনে অনেকেই এই পেশা ছেড়ে ভিন্ন ভিন্ন পেশা বেছে নিয়েছেন। ”
এখন প্রতি বাড়িতে ১ জনের বেশি শাঁখারি মিলবে না বলেই পাপ্পুর ধারণা।
শাঁখারিদের খাদ্যাভাস সম্পর্কে জানতে চাইলে এই শাঁখা ব্যবসায়ী বলেন, “পুর্বপুরুষরা সবাই নিরামিষভোজী ছিলেন। এখন খাবারেও এসেছে পরিবর্তন।
”
ঘুরে দেখলে মনে হবে ঐতিহাসিক নিজস্বতা নিয়ে টিকে আছে শাঁখারিবাজার। সরু রাস্তা, দেখলে মনে হয় গলি। এর দুপাশে শাঁখার দোকান। আরও আছে সনাতন ধর্মীয় বিভিন্ন আচার অনুষ্ঠানের উপকরণের বিপনী বিতান। বেশ কিছু বাদ্যযন্ত্রের দোকানও আছে।
এখানেই শত শত শাঁখারি বাস করছেন তাদের ঐতিহ্য নিয়ে।
রাস্তার দুপাশে অল্প জায়গার মধ্যেই গড়ে উঠেছে পাঁচ-ছয়তলা বাড়ি। কিছু বাড়ি দেখে অনেক পুরনো মনে হয়।
স্থানীয় বাসিন্দা গুরুদাস নাগ বলেন, “এগুলো সুরকি মাটি দিয়ে তৈরি। ”
রাস্তা ঘেঁষা বাড়ির নিচতলায় দোকান।
উপরের তলাগুলোতে শাঁখারিদের বাস। রাস্তার পাশে ফটক। সেখান থেকে ২০ থেকে ৩০ ফুটের মতো লম্বা করিডোর চলে গেছে ভেতরের দিকে। তারপর বাড়ির উপরের তলায় ওঠার সিঁড়ি। এতটাই খাড়া যে চোখের আন্দাজে ১০০ থেকে ১২০ ডিগ্রির মতো মনে হয়।
পেছনের ঘরগুলো নিশ্ছিদ্র জানালাহীন। এক ঘরেই এক পরিবারের বাস।
শাঁখারিদের জীবিকা
যুগের সঙ্গে তাল মেলাতে গিয়ে শাঁখারিরা ভিন্ন ভিন্ন পেশা বেছে নিয়েছেন। শাঁখারি বীরেন্দ্র কুমার নাগ বলেন, “এখন প্রতি পরিবারে ১ জনের বেশি শাঁখারি হয়তো মিলবে না। ”
বাংলাদেশে শাঁখা সরবরাহ হয় শুধুমাত্র ঢাকার শাঁখারিবাজার থেকে।
ব্যবসায়ী পাপ্পুর কথায়, “সাধারণত শ্রীলঙ্কা থেকে শঙ্খ আসে। পরে এখানে বিশেষ করাত দিয়ে কেটে বিভিন্ন আকৃতি দেওয়া হয়। বর্তমানে ভারত থেকে রেডিমেড শাঁখাও আসে। পুজোর সময় শাখা বিক্রি অনেক বেড়ে যায়। ”
শাঁখার দাম
ময়ূরমুখ শাঁখা ১২শ’ থেকে ২ হাজার টাকা।
মগরমুখ ৫শ’ থেকে ১ হাজার টাকা। প্লেইন শাঁখা ২শ’ থেকে ৫শ’ টাকা। পাথর বসানো শাঁখা ১৫শ’ থেকে ২ হাজার টাকা।
এছাড়াও স্বর্ণ দিয়ে বাঁধাই করা শাঁখা পাওয়া যায়। এগুলোর দাম স্বর্ণের পরিমাণের উপর নির্ভর করে।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।