অনেকদিন ব্লগে আসা হয় না, পড়াশুনা, পরীক্ষা, সংসার আর বিশ্বকাপ উম্মাদনা এই নিয়ে এতটা ব্যস্ত হয়ে পড়েছি যে অনলাইনে আসাই হয় না। তবে আমাদের আপডেট যে ব্লগাররা নিয়মিত পাচ্ছেন তা বুঝতে সময় লাগে না, কারন আমার সাহেব ব্লগ ছাড়া একদিন ও থাকতে পারেন না।
বাসায় জিপি লাইন ব্যবহার ব্লগে না আসার আর ও একটি অন্যতম কারন। গতকাল সন্ধ্যায় দূর্ভাষী ট্রাই করে বললো জিপি দিয়ে সামুতে ঢুকা যাচ্ছে, তাই এই মুহুর্তে সুযোগ পেয়ে হাজির হলাম অনলাইনে।
যে কথা বলছিলাম, আমি ছিলাম ব্রাজিলের ঘোর সমর্থক।
কাকা, রোনাল্দো, ফেবিয়ানো, রোনাল্দিনহো আমার ফেবারিট খেলোয়াড় ছিল। আর শ্রদ্ধা করতাম গ্রেট পেলেকে। কিন্তু ব্রাজিলের প্রথম ম্যাচ দেখে আমি যার পর নাই হতাশ। কাকা যতক্ষন মাঠে ছিল ততক্ষন সে বলের পিছনে ছুটেছে নাকি উদ্দেশ্যহীন দৌড়েছে বুঝে উঠতে পারিনি। সত্যি বলতে কি, প্রথম ম্যাচে তার খেলা দেখে পাড়ার যে কোন খেলোয়াড় তার থেকে ভালো খেলে বলে আমার মনে হয়েছে।
যদিও ব্রাজিল দুই এক গোলে জিতেছে তাতে প্রমান হয় না যে ব্রাজিল ভালো খেলেছে।
ফেবিয়ানোর মত একজন স্টাইকার ৪/৫ বার ফাউল করে। রেফারির ভূমিকাকে আমার ভালো মনে হয়নি, আমার ধারনা অন্য কোন দলের খেলোয়াড় এমন ফাউল করলে একাধিক হলুদকার্ড খেয়ে মাঠ ছাড়তে বাধ্য হতো। ফেবিয়ানোর খেলা দেখে বিশ্বাস করতে বাধ্য হলাম ব্রাজিল এখন আর নান্দনিক ফুটবল খেলে না, তারা খেলে জয়ের জন্য, যেখানে নৈতিকতা বলে কিছু নেই। নইলে উত্তর কোরিয়ার মত দলের সাথে এতগুলো ফাউল!
অন্যদিকে আর্জেন্টিনা প্রথম ম্যাচে এক গোলে জিতলেও তাদের খেলায় শৈীল্পক একটা বিষয় ছিল, মেসির বল দখল ও বল টেনে নিয়ে যাওয়া ছিল অসাধারন।
কিন্তু ব্রাজিলের সমর্থক হওয়ায় প্রশংসা না করে সে গোল করতে পারেনি এটাতে তুলে ধরেছি বারবার। আর এটা করে দূর্ভাষীসহ বাসার আর্জেন্টিনা শিবিরকে খেপিয়ে তুলেছি বারবার। অবশ্য দূর্ভাষী খেপে গেলেও ব্রাজিল-আর্জেন্টিনার হুজুগে সমর্থকদের মত খিস্তি দেয় না এটাই যা রক্ষা। সে খেলার গুনাগুন নিয়ে আলোচনা করে।
গতকাল (১৭-০৬-২০১০) আর্জেন্টিনার ২য় ম্যাচে তাদের সামগ্রিক ফুটবল আমাকে মুগ্ধ করেছে।
মেসি এই ম্যাচে ও গোল পায়নি তারপর ও তার খেলা অসাধারন। তার কাছে কাকা, রবিনহো, ফেবিয়ানো দুধের শিশু বলে আমার মনে হয়েছে (যদিও ম্যাচটি আর্জেন্টিনা আর ব্রাজিলের মধ্যে ছিল না)। তেভেজ এই ম্যাচে নিজের নামের প্রতি সুবিচার করেছে বলে আমার বিশ্বাস। হিগুয়েনের কথা আর কি বলব, যদি ও সে হ্যাট্রিক করেছে আমার মনে হয়েছে আসল জয়ের নায়ক সে নয়। প্রতিটি গোলে সে শুধু ফিনিশিং দিয়েছে, যা ঐ পজিশনে থাকলে অন্য যে কেউ ই করতে পারত বলে আমার বিশ্বাস।
এতদিন ধারনা ছিল (রিকুয়েলমে বাদ পড়ার পর) আগুয়েরা দলে ডাক পেয়েছে শুধুমাত্র শ্বশুরের কারনে, কিন্তু আজ শেষের দিকে অল্প সময়ের জন্য মাঠে নেমে সে ও নিজেকে প্রমান করেছে। আসলে হিগুয়েনের হ্যাট্রিকের পিছনে মেসি আর আগুয়েরার অবদান অনস্বীকার্য।
দক্ষিন কোরিয়া অবশ্যই শক্তিশালী দল, ব্লক মার্কার ব্যবহার করেছে তারা মেসিকে ঠেকাতে তারপর ও মেসি দেখিয়ে দিয়েছে সে অপ্রতিরোধ্য, সে গোল করতে নয় করাতে ওস্তাদ।
গত দুই-তিনদিন ব্রাজিলিয়ান গ্রেট পেলের একটি মন্তব্য মিডিয়াতে বেশী আলোচনা হচ্ছে, "ম্যারাডোনা কোচ এর চাকুরী নিয়েছে নিজের আর্থীক সংকট কাটাতে"। একজন গ্রেট আর একজন গ্রেট সম্পর্কে কেমন করে একথা বলেন! ব্রাজিল সমর্থক হয়ে ও আমি এটা মেনে নিতে পারিনি।
আর ম্যারাডোনার সামর্থ্যের পরিচয় ইতিমধ্যে ম্যারাডোনা দিয়েছে বলে আমি মনে করি।
ব্রাজিল সমর্থকরা হয়ত, আমাকে ভূল বুঝবেন, কিন্তু বিশ্বাস করুন আমি ব্রাজিলের ছন্দময় ফুটবলের ভক্ত, শক্তির জোরে ফাউল করে খেলা আমি ভালোবাসিনা। আমি একজন গ্রেটের ভক্ত যে অন্যের যোগ্যতাকে কখনও খাটো করে দেখে না। তাই আজ থেকে আমি আমার প্রোফাইলে ব্রাজিলের পতাকা নামিয়ে সেখানে আর্জেন্টিনার পতাকা লাগালাম এর একটাই কারন আর্জেন্টিনার খেলোয়াড়ি মনোভাব আর নান্দনিক ফুটবল।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।