নিজেকে নিয়ে কিছু একটা লেখার চেষ্টা, এখোনো করে যাচ্ছি . . .
কাল সকালেও যখন অফিসের জন্য বাসা থেকে বের হলাম, বড় ডান রাস্তাটার কোণ ঘেষে একটা বিদ্যুতের পোলে রং চটা কাগজে সাটা ছিলো “হারানো সংবাদ”, নিষ্পাপ মুখের একটি শিশুর ছবির নিচে কয়েকটা বাক্যে তাকে খুজেঁ পাবার করুন আকুতি। এক মুহুর্তে চোখ ফিরিয়ে আমি আমার আমার পথে পা বাড়ালাম, পাছে অফিস পৌছতে দেরী হয়ে যায়।
এইতো ঠিক তার দু’দিন আগেই, আমরা যে এলাকায় বাস করি। সেদিন সন্ধ্যা থেকেই একটা ভ্যানে বারবার মাইকিং করে যাচ্ছিলো। একই রাস্তা ওরা কয়েকবার ঘুরে গেল, কিন্তু কথার অস্পষ্টতায় ঘরের ভেতর থেকে তা বুঝতে পারছিলাম না।
ব্যালকনিতে এসে দাড়াতেই ওদের কথায় যা বুঝলাম ওটিও একটি “হারানো সংবাদ”। মুখস্থ কতকটা লাইনে হারিয়ে যাওয়া সেই মানুষকে খুজেঁ দেবার অনবরত অনুরোধ বাণী পড়ে যাচ্ছে।
এসব হারিয়ে যাবার ব্যপারগুলিতে যে কষ্ট পেতাম না, তা নয় ! যখন নিজের করে ভাবতাম, নিজের পরিবারেরই কারও কথা, কেউ যদি এভাবে হারিয়ে যেত, আকষ্মিক বুকের মাঝ’টা অসম্ভব খালি হয়ে যেতো তখন । ইদানিং এসব দু:খ সংবাদে কয়েকটা শোকসূচক শব্দ আর বিষ্ময়বোধ প্রকাশেই আটকে থাকি। পেছন থেকে কেউ আবেগী বলে ফেলে, সেই ভয়ে তাই কষ্ট পাওয়া হতেও দূরে থাকার চেষ্টা করি।
আমার বাসাটা তে’তলায়, আজ রাতে যখন বাড়ীতে ফিরেছি তখন নয়টারও কিছু বেশী হবে। বাসায় পৌছতে না পৌছতেই ইলেকট্রিসিটি চলে গেলো। বাতি না আসা পর্যন্ত অন্ধকার এ সময়টুকুই আমার অবসর। ব্যলকনির চেয়ারে শরীরটা হেলে দিয়ে হাজারো কথা ভেবে চলেছি। কিন্তু এই অন্ধকারেও যে রাস্তায় থেমে থেমে পরিচিত সুরের একটা ভ্যান থেকে বিরামহীন মাইকিং করে যাচ্ছিল; খেয়াল হল তখন যখন ঘর থেকে মা’ জানতে চাইলেন “খোকা দেখতো মাইকে কি বলছে” – “প্রাপ্তি সংবাদ” “প্রাপ্তি সংবাদ” – একটি ছেলেকে পাওয়া গেছে, ছেলেটির বয়স .........................যোগাযোগের ঠিকানা ....”
খুব অনেকদিন পর এরকম একটা অনুভূতির সাথে পরিচিত হতে পেরে সুখানুভব করলাম।
বিষন্নবোধের এ সময়টুকুতেও যে এ প্রাপ্তি সংবাদ আমার আনন্দের উপলক্ষ হয়ে আসবে, ভেবেই ভাল লাগছিল।
এদিকে নিজের জীবন নিয়ে ভাববার যে অবসরটুকু হয়, তাতেও ভাগ বসিয়ে দেবার মত জোড়দখল করে নেয় পারিবারিক, সামাজিক অনুষঙ্গগুলো। কিন্তু এরই মাঝে যে কতকিছু হারিয়ে যাচ্ছে সে খোঁজও সবসময় রাখা হয়না। কিছু হারানোর কথা সবটাই আত্মগোপন করি।
মাঝে মাঝে কিছু হারানোর ব্যথা, হারিয়ে ফেলা মানুষের খুব কাছে থেকেও তাকে প্রকাশ বা বোঝানো সম্ভব হয়না।
আর আমি! সে তো অনেক দূরে। কখনো বোঝাতে পারিনি বা বুঝতে পারিনি কিংবা কত কিছু ভেবেই যোগাযোগ হয়নি। এটাও অনেক দিনের কথা।
আজ অফিস থেকে বের হবার আগে ওকে একবার ফোন দিয়েছিলাম, গতকালও দিয়েছিলাম, কোনবারই ধরলোনা। অফিস থেকে তখন বের হয়েছি মাত্র, রাস্তায় দাড়িয়ে গন্তব্যের সিটি বাসের অপেক্ষা।
ঠিক সে সময় ওর সেল থেকে ইনকামিং কল। বাসে উঠে পড়লে ফোনে কথা বলাটা কেমন হবে, এই ভেবে ফোন’টা রিসিভ করেই ওই পথে হেঁটে চললাম।
তখনও ব্যালকনিতে বসা, অনেক দূরের কয়েকটা বাড়িতে নিভু নিভু আলো জ্বলছে, অন্ধকারে আমি সেদিকেই তাকিয়ে। “প্রপ্তি সংবাদ”-এর মাইকিং ভ্যানটার আওয়াজও দূরে মিলিয়ে যেতে থাকে।
সবকিছুর পরেও যখন, আজ তাকে আবার ফিরে পেলাম; তখন আর বুঝতে দেরী হয়নি, হৃদয়ের দরজায় কবেকার লাগানো সেই “হারানো সংবাদ”-এর ফ্যাকাসে পোষ্টারটি খসে সেখানে নতুন রঙিন এক “প্রাপ্তি সংবাদ” এর ফলক উঠে গেছে, তাতে শুধু সেই বার্তাই আছে “এ প্রাপ্তি আনন্দের”।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।