বিশ্বাস করুন, ঘটনাটা একদম সত্য। সাল টা ছিল ১৯৮৯। আর ঘটেছিল আমারই ছোট ভাই এর বেলাতে। সেসময় আমরা ছিলাম চট্টগ্রামের চন্দনপুরাতে। বাসা নম্বর ২৯১।
চার তলা বিল্ডিং এর তৃতীয় তলায়। ওই বাসাতে আমাদের ছেলেবেলার চমৎকার দিন গুলো কেটেছে। আমি তখন ক্লাস সেভেন এ পড়ি। আর আমার ছোট ভাইটি সবে মাত্র ক্লাস ওয়ানে ভর্তি হয়েছে।
ঘড়ির কাটাতে তখন রাত ৮ টা হবে।
আমি ও যথারীতি পড়তে পড়তে ঘুমিয়ে পড়েছি। পাশে আমার মা ছোট ভাইটিকে পড়াচ্ছে। আমার ছোট ভাইও খুব উৎসাহী হয়ে পড়াশোনা করছে। পড়ার এক ফাকেঁ ও বাথরুমে গেল। কিন্তু বাথরুম না সেরেই এক দৌড়েঁ এসে আম্মুকে জড়িয়ে ধরল।
ভীষন ভয় পেয়েছে। আম্মু জানি কোত্থেকে শুনেছে লবন-পানি খেলে নাকি ভয় কাটে। তাড়াতাড়ি করে লবন-পানি খাইয়ে দিল। কি ব্যাপার জিজ্ঞাস করতেই ও বলল “একটা কুজোঁ বুড়ি বাথরুমের সামনে দিয়ে হেটেঁ গেছে। ” ছোট্ট মানুষ! কি দেখতে না কি দেখেছে! ওকে একটু সাহস দিয়ে আর আদর করে আম্মু ওকে আবার পড়াতে শুরু করল।
রাত ৯ টা। আমি কিন্তু এতক্ষন ঘুমিয়েই ছিলাম। আমার ঘুমকে অনেকটা কুম্ভকর্ণের ঘুমের সাথে তুলনা করা চলে! ১৯৯১ সালের ২৯ শে এপ্রিল যে ভয়াবহ ঘূর্ণিঝড় হয়েছিল - এর মধ্যেও আমি দিব্যি ঘুমাচ্ছিলাম! বিল্ডিং কাপঁছিল…গাছ পড়ে যাচ্ছিল…আমাদের বারান্দায় রাখা মানিপ্ল্যান্ট গাছের পাতা পুড়ে যাচ্ছিল…হাজার হাজার মানুষ জ়ীবন বাচাঁতে সংগ্রাম করছিল…আর আমি কিনা………! এমন ই আমার ঘুম! কিন্তু সেদিন কিভাবে যেন হৈ চৈ এর শব্দে ঘুম ভেংগে গেল!
কি হল কি হল বলে বারান্দায় ছুটে গেলাম। বাসার নিচে দেখলাম পাড়ার প্রায় সবাই (এক আমি ছাড়া) জোড়ো হয়েছে। কি আর করা! আমিও নিচে গেলাম।
ঘটনা আর কিছুইনা; আমাদের দোতালা’র মেয়েটা (আমার ভাইয়ের চাইতে অনেক বড়)এক “কুজোঁ বুড়ি” কে ঘরের মধ্যে হেটেঁ যেতে দেখেছে!
অনেক দিন হয়ে গেল! আমার ছোট্ট ভাইটি এখন অনেক বড়। কিন্তু একটা পরিবর্তন ওর মাঝে এখনো রয়ে গেছে। এ ঘটনা ঘটার পর অনেক দিন পর্যন্ত ও রাতে বেশ ভয় পেত। “কাথাঁ মুড়ি” দিয়ে ঘুমালে নাকি ভয়টা আনেক কম লাগে! এজন্যে প্রচন্ড গরমের মধ্যেও ও কাথাঁ গায়ে ঘুমাতে শুরু করে। এখন তো আর ভয় পায়না! তবে কাথাঁ গায়ে ঘুমানোর অভ্যাস টা এখনো রয়ে গেছে!
বিশেষ দ্রষ্টব্যঃ দোতলার মেয়েটা কিন্তু এক ঘন্টা আগে ঘটে যাওয়া আমার ভাইয়ের ব্যাপারটা জানতো না!
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।