এই ব্লগের সব মৌলিক লেখার স্বত্ব লেখকের নিজস্ব। মৌলিক লেখা অনুমতি ব্যতিরেকে অন্য কোথাও ব্যবহার করা যাবে না।
শরৎচন্দ্র চট্টপাধ্যায়-এর চরিত্রহীন পড়ে শেষ করলাম। অনেক চরিত্র, অনেক বিস্তৃত উপন্যাসের কাহিনী। শরৎবাবুর এ উপন্যাসের বিস্তৃতি তার অপর বৃহৎ উপন্যাস গৃহদাহ অপেক্ষাও বিশাল।
গৃহদাহ অনেক আগেই পড়েছিলাম। এবার চরিত্রহীন পড়লাম আনন্দ চলন্তিকা লিমিটেডের ডিজিটাল বইতে। অনেকেই উপন্যাসটি পড়ে থাকবেন। আজ এ উপান্যাস পড়ার পর উপন্যাসের গল্পের সমাপ্তিতে ঔপন্যাসিকের ‘পয়েটিক জাস্টিস’ নিয়ে একটু খটকা লাগছে। মানব-মানবীর মনের অলি-গলির যে চিত্র শরৎ বাবুর উপন্যাসে পাওয়া যায় তা আর অন্য কথা সাহিত্যিকের উপন্যাসে বিরল।
চরিত্রহীনও তার ব্যতিক্রম নয়। উপন্যাসের কেন্দ্রীয় চরিত্র উপেন্দ্র, তাকে ঘিরেই উপন্যাসের কাহিনী আবর্তিত হয়েছে। কিন্তু উপন্যাসের নায়ক সতীশ, নায়িকা সাবিত্রী। প্বার্শ নায়ক দিবাকর, প্বার্শ নায়িকা সরোজিনী কিংবা কিরণময়ী।
উপন্যাসের শেষে দেখা গেলো ঔপন্যাসিক নায়িকাকে রেখে প্বার্শ নায়িকা সরোজিনীকে নায়ক সতীশের সাথে মিলন ঘটিয়েছেন।
আমি উপন্যাসের এমন সমাপ্তিতে কিছুটা বিস্মিত এবং খানিকটা মর্মাহও বটে। সাবিত্রী নামক যে নারীর এক আত্মত্যাগী ও সতীশের প্রতি অসীম ভালোবাসার এক বিমুর্ত চরিত্র ফৃটে ওঠেছে উপন্যাসের আগা-গোড়া, সেই অসাধারণ মায়াবতী নারীটির স্থান হলো না কোথাও, ঔপন্যাসিক উপন্যাসের উপসংহার টেনেছেন অপেক্ষাকৃত এক দুর্বল চিত্তের নারী চরিত্র সরোজিনীর সাথে নায়ক সতীশের মিলন ঘটানোর মধ্যে দিয়ে। সাবিত্রীর ভালোবাসার কোন মূল্যই এই উপন্যাসে দেয়া হয়নি। আমার বিশ্বাস উপন্যাসটি পড়েছেন এমন কোন পাঠক নেই যিনি বলতে পারেন উপন্যাসের নায়িকা সাবিত্রী ভিন্ন অন্য কেউ।
মায়াবতী, নিরহংকার যে নারীর হৃদয়জুরে শুধুই সতীশের স্থান, সমগ্র উপন্যাসে জুরে যে নারী চরিত্রের অবাধ বিচরণ, সতীশের ভালো-মন্দে, সুখে-দুঃখে ছায়া হয়ে যে নারীটি জীবনের বড় একটা সময় পার করে দিয়েছে,ঔপন্যাসিকের এতো সুনিপুন দক্ষতায় নারী চরিত্রের যে মোহনীয় রুপ দেখতে পাই সাবিত্রীর মাঝে, তার যে অন্যায় সমাপ্তি দেখানো হয়েছে উপন্যাসের শেষে তা কোনভাবেই মেনে নিতে পারছেনা আমার বিদ্রোহী পাঠক মন।
শরৎ বাবু কেন এমন সমাপ্তি টেনেছেন এই উপন্যাসের? সাবিত্রী হৃদয়ে ভালোবাসা আছে কিন্তু সে অকাল বিধবা, তাই বলে তার আর কোন সঙ্গী হবেনা ইহ জগতে- এই বিশ্বাসে দৃঢ় ছিলেন শরৎ বাবু? এজন্যই সারা জীবন যে শুধু দিয়ে গেলো, সে কেবলই দিয়েই যাবে? বিনিময়ে কিছুই পাবেনা? এই উপন্যাসের শেষটা পড়ে আমার কেন যেন মনে হয়েছে, তিনি উপন্যাসের সমাপ্তি টেনেছেন কিছুটা তারাহুড়ো করে। এই তাড়াহুড়োই এমন অবিচারযুক্ত সমাপ্তি এনে দিয়েছে সাবিত্রী চরিত্রের জন্য?
উপন্যাসটি পাঠের পর আমার কেবলই মনে হয়েছে, ঠিক পয়েটিক জাস্টিস করা হয়নি এ উপন্যাসে। লেখক তার লেখার মধ্যে দিয়ে জগতে ভালো কাজের জন্য পুরষ্কার এবং মন্দ কাজের জন্য শাস্তি দিয়ে পাঠককে নৈতিক শিক্ষা দিয়ে থাকেন। পৃথিবীর প্রায় সকল সাহিত্যেই এমন ধারা বিদ্যমান। তবে ব্যতিক্রমও আছে।
যেমন জগৎ বিখ্যাত ইংলিশ ন্যাট্যকার, কবি শেক্সপীয়র নিজে অনেক ক্ষেত্রে পয়েটিক জাস্টিস মেনে লিখেননি। তার পক্ষে ব্যাখ্যাও আছে। তিনি তার সমাজের চিত্রকে তুলে ধরেছেন, যেখানে ভালোর কাছে মন্দ পরাজিত হয়েছে প্রতিনিয়ত। তাই পয়েটিক জাস্টিস মেনে লেখা সম্ভব হয়নি তার পক্ষে।
কিন্তু শরৎ বাবু যে সময়ে লিখেছেন, তার সমাজের চিত্র কি এমন ছিলো যে তিনি পয়েটিক জাস্টিস এড়িয়ে সাবিত্রীর পরিবর্তে সরোজিনীর সাথে সতীশের মিলন ঘটালেন? আপনাদের মধ্যে যারা উপন্যাসটি পড়েছেন তাদের কাছে এ বিষয়ে জানতে চাই ঠিক কি কারণে শরৎ বাবু সাবিত্রীর পরিবর্তে সরোজিনীর সাথে সতীশের মিলন ঘটিয়েছেন?
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।