পথের প্রান্তে আমার তীর্থ নয় ,,,,,পথের পাশেই আছে মোর দেবালয়
(পনেরশ শতকের ভেনিসের বিখ্যাত শিল্পী জিওভান্নি -বেল্লিনির আকা ছবি)
ইতিহাস এর একজন ছাত্রী হিসেবে ইউরোপের ইতিহাস পড়তে গিয়ে বারবার রেঁনেসার কথা উঠে এসেছে।
সেই মধ্য যুগে পুরো ইউরোপই ছিল কুসংস্কারের চাদরে মোড়ানো। তাদের সব কিছু আবর্তিত ছিল পরলৌকিক বিষয় নিয়ে। পাদ্রীরা টাকার বিনিময়ে বেহেশত্ বিক্রী করছিল ইহ জগতের বাসিন্দাদের কাছে !
সে সময় অন্যান্য নগরীর শিল্পী সাহিত্যিকদের সাথে সাথে ভেনিসের শিল্পী সাহিত্যিকদের হাত ধরেই সেই ঘোর অন্ধকারের রাজ্য থেকে পুনর্জন্ম লাভ করেছিল ইউরোপ।
আর সেই পুনর্জাগরনই পরবর্তীতে পৃথিবীর বিভিন্ন প্রান্তে ছড়িয়ে যায়।
আধুনিক করে তোলে মানুষের মন আর মনন কে।
রেঁনেসা শব্দটির অর্থই হচ্ছে পুনর্জাগরন। যা চলেছিল তেরশ শতাব্দী থেকে সতের শ শতাব্দীর প্রথম ভাগ পর্যন্ত। যার সূতিকাগার ছিল ইউরোপের কয়েকটি নগরীর মধ্যে অন্যতম ভেনিস নগরীতেও।
সেই রেঁনেসার ভেনিস! আমার স্বপ্নের ভেনিস!
বিখ্যাত সব শিল্পীর আকা ছবির ভেনিসে যাচ্ছি।
রোম থেকে ইউরোস্টারে রওনা হোলাম। ইতালীর সবচেয়ে দ্রুতগামী এবং আরামদায়ক ট্রেন।
(রোমের বিখ্যাত কলোসিও যেখানে গ্ল্যাডিওটার রা পশুর সাথে
আমরন যুদ্ধে লিপ্ত হতে বাধ্য হতো। )
চার ঘন্টার মধ্যে পৌছাবে গন্তব্যে। আমি আর আমার স্বামী।
ছেলেকে বাংলাদেশে রেখে যেতে হয়েছে, ভিসা দেয়নি মনে করেছে আর ফিরে আসবোনা ।
মনটা খারাপ।
যাই হোক পতি দেবতার অফিসের হেড কোয়ার্টার রোমে।
দশ দিনের ওয়ার্কশপ আরও পনের দিন ছুটি নিয়েছে ঘুরবে বলে।
ও আগেও অনেক বার এসেছে, আমার প্রথম।
এই ভ্রমন আমার জন্মদিনের উপহার।
আসল কথায় আসি। সকাল সাতটায় ট্রেন ছাড়লো রোমের প্রধান রেলওয়ে স্টেশন টারমিনি থেকে ।
কত ঐতিহাসিক শহর,সেক্সপিয়ারের সাহিত্যে উল্লেখিত কত লোকালয়,
কত সূর্যমুখীর আদিগন্ত মাঠ, কত ছোট বড় নদী সব পেরিয়ে দ্রুত গতিতে ছুটে চলছে আমাদের যন্ত্রদানব।
ফ্লোরেন্স, বোলোনা, বিখ্যাত এসব শহর গুলো পার হয়ে যাচ্ছি
ইতালীর মাঝখান বরাবর আপেনাইন পর্বত শ্রেণী যা উত্তর থেকে দক্ষিনে বিস্তৃত।
পাহাড়ের পুর্ব দিকে রোম, পশ্চিমে ভেনিস। আস্তে আস্তে পাহাড় ভেদ করে ওপারে যাবার জন্য একটার পর একটা টানেল অতিক্রম করতে লাগলাম, কোনোটা ছোট, কোনোটা বিশাল লম্বা।
এত দ্রুতগামী ট্রেনও যেন বের হতে পারছেনা পাহাড়ের সেই অতল গহব্বর থেকে।
একটু আলোতে এসেই আবার নিকষ কালো অন্ধকারের গভীরে ঢেকে যাচ্ছে চারিদিক।
কেমন যেন ভয় করছিল ।
মনে হচ্ছিল এখানে একটা দূর্ঘটনা ঘটলে
আমি আর বের হতে পারবোনা এই অন্ধকার ঠেলে!
যাক পাহাড় পেরিয়ে স্হায়ী ভাবে আবার আলোয় আসলাম।
অনেক সকালে উঠেছি, মাথা ব্যাথা করছে, ঘুম ঘুম পাচ্ছে।
এসময় ওরা খুব ছোট্ট কাপে করে সবাইকে কফি সার্ভ করলো ।
ঘন কালো,দুধ চিনি ছাড়া বিষের মত তেতো।
কালো কফিটা খাবার সাথে সাথেই ফ্রেশ হয়ে গেলাম, ঘুম টুম সব কোথায় যেন পালিয়ে গেল।
এর আগে কি সব খাবার দিয়েছিল , ওটা খাচ্ছি,
আর জানালায় চোখ রেখে অপূর্ব প্রকৃতির মাঝে হারিয়ে যাচ্ছি।
মনে মনে একটু টেনশন,কোনো হোটেল বুকিং দেয়া নাই।
রোম থেকে চেষ্টা করেছিলাম, পাইনি সব বুকড্ জানিয়ে ছিলো ।
হতেই পারে জুন মাস ট্যুরিস্ট সিজন।
ট্রেন ছুটে চলছে গন্তব্যের দিকে, ভেনিসে
(ভেনিসের মানচিত্র মাঝখানে বুক চিরে বয়ে যাওয়া গ্র্যান্ড ক্যানেল।
)
মেইনল্যান্ডে মেস্ট্রে নামের শহরের স্টেশন টাই শেষ। এরপরই সেই ব্রীজ যা সংযুক্ত করেছে ভেনিসকে চার কিলোমিটার দুরত্বের প্রধান ভুখন্ডের সাথে। পিলারের উপর ব্রীজ, চারিদিকে খোলা কোনো রেলিং নেই। আর এই দ্বীপের দুই কিলোমিটার দুরত্বে খোলা সমুদ্র অড্রিয়াটিক সাগর।
কাচের জানালার ভেতর দিয়ে দেখা যাচ্ছে নীল পানি তাতে কত রকম নৌ যান।
ছোট বড় জাহাজ, আবার তীব্র গতির স্পীড বোট তার সাথে কেউ কেউ স্কি করছে।
বাতাস বয়ে যাচ্ছে পানির উপর দিয়ে ঢেউ তুলে।
মনে হচ্ছিল জানালাটা খুলে দেই, সমুদ্রের ঠান্ডা বাতাস এসে ছুয়ে যাক আমাকে।
যদিও এসিতে বসে আছি, তারপরও সবসময় বাইরের প্রকৃতির উপর দিয়ে ভেসে আসা ঠান্ডা বাতাসের স্পর্শের আবেদন আমার কাছে অনেক বেশী।
আমি চেয়ে আছি সেই ফেনীল জলরাশিতে ভেসে থাকা অপরূপ সৌন্দর্যের লীলাভুমির দিকে, যে হাতছানিতে আমাকে টেনে নিচ্ছে নিশিতে পাওয়া লোকের মত।
দেখতে দেখতে ট্রেন থামলো আমার স্বপ্ন পুরী যার স্টেশনের নাম ভেনিজিয়া সান্টা লুসিয়া।
স্টেশন থেকে বের হয়েই দেখা মিললো বিখ্যাত সেই গ্র্যান্ড ক্যানেলের।
(এই সেই বিখ্যাত গ্র্যান্ড ক্যানেল। )
চলবে----
Click This Link
২য় পর্ব।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।