রিয়াল্টোর ওপরের বেশ কয়েকটা সুভেনির শপ আছে। সেখানে বেশ কিছু জিনিস কেনাকাটা হলো। এবার খাবার কিনে হোটেলে ফিরতে হবে। তখনি আমাদের মাথায় এলো এক সাহসী প্ল্যান। এখান থেকে আমরা হেঁটে হোটেল ফিরবো।
বেশ রাত হয়ে গেছে। শীতের রাত। ৮:৩০ বাজে। কিন্তু মাথায় পোকা নড়লে কি আর করা যায় !
শুরু হলো হাঁটা। একে তাকে জিগ্সেস করতে করতে চলেছি।
রিয়াল্টো থেকে ফেরোভিয়া। এ গলি দিয়ে ঢুকে ও গলি দিয়ে বেরোচ্ছি। লোকজনের (বা আমাদের) ভাষার সমস্যা। কিন্তু সবাই খুব সাহায্য করতে আগ্রহী এটুকু বোঝা যাচ্ছে। আলো আধাঁরি গলিপথ।
ছোটোবেলা থেকে যেরকম ছবিতে দেখেছি সে রকম টুকরো, চৌকো পাথরে বাধাঁনো গলি। ওপর থেকে কোথাও কোথাও ঝুলছে হলদে আলো। লোকজন নেই বললেই চলে। গা ছমছম করছে। সিগারেটের সাথে সাথে মনের জোরও কমে আসছে যেনো।
কোনো গলি পেরোলে হঠাৎ ছোট্ট ব্রীজ। দেয়ালে ওপরে লটকানো বোর্ড বলছে ব্রীজ পেরিয়ে সোজা হাঁটলে ফেরোভিয়া। দে হাঁটা। এমন সময় কানে এল বেশ জোরে বাজতে থাকা গানের আওয়াজ। বোর্ডের তীরকে গুলি মেরে আমরা চললাম গানের উৎস সন্ধানে।
এক গলি থেকে বেরিয়ে দেখি শান বাধাঁনো একটা চৌকো জায়গা। তার মাঝখানে রেলিং করে বরফ জমানো হয়েছে। ডিজে গান বাজাচ্ছে। আর অনেক লোক, বাচ্চা, বুড়ো, যুবক - যুবতি পায়ে স্কেট জুতো পরে বরফের ওপর হুমড়ি খেতে খেতে ফুর্তি করছে। রিন্কের পাশে কয়েকটা ছোটো দোকানও বসে গেছে খাবারের।
বেশ জমজমাট ব্যাপার। কিন্তু এদিকে রাত কালো বাদুড়ের মতন আরো গাঢ় হয়ে নেমে আসছে ভেনিসের আকাশে, গলিতে, জলে। পা গুলোও মাফ চাইছে এবারে। আমাদের ফেরোভিয়া কতদুর কে জানে। আবার শুরু হলো বোর্ড খোঁজা।
পেয়েও গেলাম। আবার হন্টন। বেশ কিছুদুর গিয়ে জানলাম সামনেই আমাদের আরাধ্য স্থান। শান্তি পেলাম। রাতের খাবার প্যাক করে নেওয়ার জন্য ঢুকে পড়লাম এক চাইনিজ হোটেলে।
খাবার নিয়ে কিছু দুর গিয়েই দেখি আমাদের হোটেলের সামনের ব্রীজ দেখা যায়। ঘড়িবাবু বলছেন ১০ টা বেজে গেছে। আর আমাদের তিন জোড়া পায়ের ছাপ রয়ে গেল ভেনিসের অলি গলিতে, নাম না জানা চার্চের চত্তরে, কতগুলো পুচকি ব্রীজের ওপরে।
হোটেলে গিয়ে কোনো মতে খেয়ে আবার জিনিস প্যাকিং। কাল সকালে ব্রেকফাস্ট করেই চেক আউট করব।
এক ঘুমে রাত কাবার। উত্তেজনায় সকাল ৬ টায় বিছানা ছেড়েছি। ফ্রেশ হয়ে ব্যালকনিতে গিয়ে দাঁড়ালাম সিগারেট হাতে। আ্যকুওয়েদারের ভবিষ্যৎবানী অক্ষরে অক্ষরে ফলিয়ে ঝকমকে রোদ উঠতে দেখলাম ভেনিসের নীলচে আকাশের পূব দিক থেকে। ততক্ষনে সবাই রেডি হয়ে গেছে।
ব্রেকফাস্ট করে কাধেঁ ব্যাগ ঝুলিয়ে বেড়িয়ে পড়লাম ফেরীঘাটের দিকে। গন্তব্য "বুরানো আইল্যান্ড"। এখান থেকে "ব্যাটোবাসে" করে "মুরানো"। সেখান থেকে "বুরানো"। বোট ছাড়ার ১০ মিনিটের মধ্যে ভেনিসের খাঁড়ি ছাড়িয়ে সমুদ্রে।
অসম্ভব সুন্দর চারপাশের দৃশ্য। জলের মধ্যে কাঠের খুঁটি পোতা। তার ওপরে আলো লাগানো, কোথাও কোথাও সিগনালের ব্যবস্থা। জলেও স্পীড লিমিট হয় সেটা এখান থেকেই জানলাম। মুরানো পৌছতে প্রায় ২৫ মিনিট সময় লাগলো।
ব্যাপক একটা "লাইট হাউস" মুরানো নামতেই আপনাকে স্বাগত জানাবে। তার চারপাশে নেচে নেচে বেশ কিছু ছবি তুললাম। মুরানো দ্বীপ ও তার অধিবাসীরা কাঁচের কাজের জন্য পৃথিবী বিখ্যাত। লাইট হাউসের পাশেই একটা স্ট্যান্ডের ওপর বসানো অনেক কাঁচের হাস, কিছুদুর এগিয়ে একটা বাগান যেখানে কাঁচের প্রজাপতি পাওয়া যায় কাঁচের সূর্যমুখীর ওপরে, কাঁচের প্যাঁচা পরে থাকে লাল রঙের চশমা। পাথরে মোড়া রাস্তা দিয়ে, রংচটা চার্চটা পেরোলে ক্যানালের এপাশেই চোখে পড়ে কাঁচের অগ্নিশিখা।
অপুর্ব এই সৃষ্টি, অসাধারন শিল্পীদের কল্পনাশক্তি। তারিফ না করে পারা যায় না। ৯:১৯ এ বুরানোর ফেরী আসে। লাফিয়ে উঠি আমরা বোটে। সমুদ্রের জলে পড়া ঝকমকে সূর্যের আলোকে হেলায় চিরে যায় স্পীডবোট।
আমাদের চোখে ভাসে এক আশ্চর্য দ্বীপের ছবি। যার এক একটা বাড়ি একেক রঙের। খালের জলে যাদের ছায়া দেখলেই চোখ ধাঁধিয়ে যায়।
এগিয়ে চলে আমাদের বোট সেই স্বপ্নের দেশে, যার নাম "বুরানো".... ।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।