সামুর কাছে চির কৃতজ্ঞ ...আমি অবাক নির্বাক হতবাক শতভাগ ...
ঝুলন্ত শরীরটা যখন দড়ি কেটে নামানো হলো শ্যামলী ততক্ষনে অসাড় , নিস্তেজ হয়ে পড়েছে। জিহ্বাটা ঠোটের কোল ঠেলে ঝুলে বেরিয়ে এসেছে। ঘাড়টা ডান দিকে নেতানো যেন পরিবার,পরিজন এমনকি এই মায়াময় জগৎটার প্রতি নিরব অবগ্গা। অভিমানে ঘাড় ঘুরিয়ে যেন দুনিয়া কে জানান দেওয়া যে, তোমার কাছে আমার চাওয়া-পাওয়া শেষ। আমাকে তুমি কিছু না দিলেও আমি তোমাকে সব দিলাম।
পাঁচ বোন আর দুই ভায়ের সংসারে শ্যামলী সবার ছোট। বিধবা মায়ের হাতের লাঠি। নম্র,ভদ্র আর অমায়িক শান্ত স্বভাবের মেয়ে শ্যামলী। হরিনী চোখ আর লম্বা কালো চুলের অধিকারী শ্যামলী শারীরিক দিক দিয়ে একটু প্রতিবন্ধি । ডান হাতটা তাকে একজন স্বাভাবিক মানুষ একটু আলাদা করেছে।
ডান হাতের আঙুল গুলো কোন কাজ করেনা, শক্তি পায়না। তবু শ্যামলী থেমে থাকেনি। বাম হাত দিয়েই সে তার জীবনটাকে সামনের দিকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছে। পড়াশুনা থেকে শুরু করে সাংসারিক সব রকম কাজ সে করে।
বাবা নেই সংসারে ।
অনেক চড়াই-উৎড়ায়ের মাঝে সে তার পড়াশুনা চালিয়ে যাচ্ছে। সে এখন বি,এ পড়ে। প্রতিবন্ধি সত্ত্বেও চোখে মুখে তার নানা স্বপ্ন। স্বপ্ন থেকেই ভালভাবে বাঁচার প্রেরনা। চাকরির জন্য বিভিন্ন জায়গায় দরখাস্ত দেয়।
এইবার প্রাইমারি শিক্ষক নিয়োগের দরখাস্ত করে কার্ড হাতে পেয়েছে। হেল্থে দরখাস্ত করে সেখানেও কার্ড পেয়েছে।
এতো কিছুর পরেও কেন তার এমন নিস্ঠুর ভাবে চলে যাওয়ার আপ্রান চেষ্টা? কেন সে জীবনকে অকালে শেষ করে দিতে চায় ? কেন এতো বিতৃষ্ঞা?
নিম্ন মধ্যবিত্ত সংসারে প্রাচুর্য্য না থাকলেও সুখ-শান্তির কমতি ছিলনা। বিধবা মা কষ্ট করে হলেও ছেলে দুটিকে বি এ পাশ করিয়েছেন। হঠাৎ করেই বড় ছেলে বিয়ে করে বউ আনে।
অশান্তির শুরুটা ঠিক তখন থেকেই। তথাকথিত মফস্বল শহরের (অ)শিক্ষিত মেয়ে গ্রামের অশিক্ষিত শ্বাশুড়ী,পরিবার মেনে নিতে পারেনি। শ্বাশুড়ীর কোন কিছু পছন্দ হয়না। তার হাতের কিছু খেতে ঘৃন্না লাগে, সেটা সে শ্বাশুড়ী সহ সবাইকে বলেছে। গেঁও ননদ-দেবরদের সাথে কথা বলতে রুচি হয়না।
সব সময় তুচ্ছ-তাচ্ছিল্য ভাব।
শ্যামলী যেন তার চক্ষ্যু শূল। পাহাড়সম বোঝা যেন তাদের ঘাড়ে । সবসময় কটাক্ষ্য আর অপমানের ঝড় শ্যামলীর উপর দিয়ে বয়ে চলে। কথার বেত্রাঘাতে জর্জরিত তার মন।
দু:খ কষ্টে ভরা অভিমানিত মন আনমনে ভাবে,, শারীরিকভাবে ভালো থাকলে এতোদিনে তার নিজের একটা সুন্দর সংসার থাকতে পারতো যেমন তার অন্য বোন গুলির হয়েছে। এতো ঝড়। ঝাপটার পরেও সে দমে থাকেনি। পড়াশুনা করে নিজের পায়ে দাঁড়াতে চেয়েছে।
কিন্ত ইদানিং ভাবীর কথায় তার মনটাও পংগু হয়ে যাচ্ছে।
এতো গন্জনা, অবহেলা, অপমান যেন আর সহ্য হয়না। অশান্তি আর দু:শ্চিন্তার কীট তাকে
কুঁড়ে কুঁড়ে খাচ্ছে।
গত পাঁচ দিন থেকে মা বাড়িতে নাই। এতো অশান্তি থেকে একটু নিষ্কৃতি পেতে মেয়ের বাড়িতে গেছে। ছোট ছোট অশান্তি গুলো এখন পর্বতের সম।
দুই দিন থেকে শ্যামলী কিছু খায়নি। ভাই রাগারাগি করছে। ভাবী সাথে কথা বোলেনা। মা বাড়িতে নেই যে রাগ অভিমান ভাংগিয়ে আদর করে কষ্ট ভুলিয়ে কিছু খাওয়াবে। নিজের কষ্ট নিজের ভিতরে গুমরে মরে।
দুই দিনের অভুক্ত মন,অভিমান আর বিবেকের সাথে যুদ্ধ করে ক্লান্ত দেহটাকে অবলীলায় ঝুলিয়ে দিয়েছে দড়ির সাথে । সবকিছু কে মুক্তি দিয়ে নিজে পরিত্রান পাওয়ার সর্বাত্বক চেষ্টা।
সত্য ঘটনা অবলম্বনে ।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।