আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

থানার অস্ত্র লুটসহ ব্যাপক নাশকতাই লক্ষ্য

আল-কায়েদার আদলে গড়ে ওঠা উগ্র জঙ্গি সংগঠন আনসারউল্লাহ বাংলা টিম এখন পর্যন্ত সারা দেশে বিস্তৃতি লাভ করতে পারেনি। তবে রাজধানী ঢাকা, রাজশাহী, চাঁপাইনবাবগঞ্জ, বরিশাল ও চট্টগ্রামের কিছু এলাকায় স্বল্প পরিসরে তারা কার্যক্রম শুরু করেছে। এদের পরিকল্পনা হচ্ছে, জিহাদের মাধ্যমে সরকারকে হটিয়ে এদেশে ইসলামী শাসন কায়েম করা।

তাদের ভাষ্যমতে, শরিয়া কার্যকর করতে চার-পাঁচজনের ছোট ছোট গ্রুপ তৈরি করে রাসূল (সা.) অবমাননাকারীদের ও ধর্ম সম্পর্কে কটূক্তিকারীদের শাস্তি নিশ্চিত করতে তৎপর এরা। বিভিন্ন থানা ও ফাঁড়িতে হামলা করে অস্ত্রশস্ত্র ও গোলাবারুদ লুট করে বিভিন্ন মানুষ ও দেশের গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনায় হামলা করতে চায় তারা। এ ছাড়া দলের সদস্যদের সামরিক ও প্রযুক্তিগত প্রশিক্ষণ দেওয়ার মাধ্যমে আগামী দিনের জন্য তালেবানের আদলে জঙ্গি তৈরি করতে চায় এরা।

ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের যুগ্ম কমিশনার মনিরুল ইসলাম বলেন, আন্তর্জাতিক মৌলবাদী জঙ্গি সংগঠন আল-কায়েদা, তেহরিক-ই ইসলামসহ যেসব জঙ্গি গ্রুপ রয়েছে তাদের আদলেই গড়ে ওঠে আনসারুল্লাহ বাংলা টিম। বাংলাদেশে এদের কার্যক্রম প্রাথমিক অবস্থায় রয়েছে। বর্তমানে তারা বিভিন্ন ধরনের অস্ত্র, বোমা-গ্রেনেড তৈরি ও কীভাবে পরিচালনা করতে হয় তার প্রশিক্ষণ নিচ্ছে। তিনি বলেন, আনসারুউল্লাহ বাংলা টিমের অপারেশনাল প্রধান হচ্ছেন ইজাজ হোসেন। তিনি ২০০৮ সালে সামরিক প্রশিক্ষণ ও জঙ্গি কার্যক্রমে দীক্ষিত হওয়ার জন্য পাকিস্তানে পালিয়ে গেছেন। এর আগে তিনি জঙ্গি সংগঠন জামায়েতুল মুসলিমিনের বাংলাদেশের আমির ছিলেন। তিনি বছরে ২-৩ বার বাংলাদেশে আসেন এবং বাংলাদেশে তার জিহাদি নেটওয়ার্ককে সক্রিয় করেন। জামায়েতুল মুসলিমিন করার সময় তার সহযোগী ছিলেন জুন্নুন শিকদার, রেজওয়ান শরীফ, মইনউদ্দীন শরীফ, নাঈমুল হাসান, তেহেজীব করিম, রাজীব করিম, শেহজাদ ওরফে তুরাজ, রেজাউর রাজ্জাকসহ আরও কয়েকজন।

তিনি জানান, জামায়েতুল মুসলেমিনের আন্তর্জাতিক আমির হচ্ছেন জর্দান বংশোদ্ভূত ব্রিটিশ নাগরিক শেখ আবু ইসা আলী আররিফাই আল হাশেমী আল কোরাইশি ওরফে আবু ঈসা। তিনি ২০০২ সালে বাংলাদেশে আসেন এবং বারিধারা এলাকায় একটি দোতলা বাড়ি ভাড়া করে তার কার্যক্রম শুরু করেন। একপর্যায়ে তিনি ব্রিটেনে ফিরে যান এবং লন্ডনে পুলিশের হাতে ধরা পড়েন। এর ফলে বাংলাদেশে জামায়েতুল মুসলেমিনের কার্যক্রম বন্ধ হয়ে যায়। জামায়েতুল মুসলেমিনের মূল লক্ষ্য ছিল, যদি অহিংস পন্থায় আল্লাহর দ্বীনকে কায়েম করা সম্ভব না হয় তাহলে সহিংস পন্থায় সশস্ত্র জিহাদের মাধ্যমে তা প্রতিষ্ঠা করতে হবে। প্রয়োজনে নিজ ভূখণ্ডে জিহাদের মাধ্যমে দ্বীন প্রতিষ্ঠা সম্ভব না হলে বিদেশে হিজরত করতে হবে। তাদের আদর্শের মূল ভিত্তি হচ্ছে হিজরত। জামায়েতুল মুসলেমিনের আদর্শে অনুপ্রাণিত হয়ে হিজরতের উদ্দেশে ২০০৮ সালে তেহজীব, রেজওয়ান শরীফ, মইনউদ্দিন শরীফ ইয়েমেনে যান এবং আল-কায়েদা নেতা আনোয়ার আল আওলাকির ঘনিষ্ঠ সহযোগী সামির খানের সঙ্গে যোগাযোগের কারণে এবং জঙ্গি প্রশিক্ষণ নেওয়ার সময় ২০০৯ সালে ইয়েমেনে গ্রেফতার হন। রাজীব শরীফ ইংল্যান্ডে ব্রিটিশ এয়ারলাইন্স উড়িয়ে দেওয়ার চেষ্টাকালে গ্রেফতার হয়ে ২০ বছরের সাজা পান। গোয়েন্দা কর্মকর্তারা বলেন, শনিবারের অভিযানে গ্রেফতার হওয়া জুন্নুন শিকদার নর্থসাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র এবং পরে পড়াশোনা বাদ দিয়ে দাওয়াত কার্যক্রম প্রচারের উদ্দেশে দারুল ইহসান বিশ্ববিদ্যালয়ের আরবি বিভাগে ভর্তি হন।

সাংগঠনিক ধাপ : গোয়েন্দা কর্মকর্তারা বলেন, আনসারুউল্লাহ মূলত চারটি ধাপে কাজ করে। এর একটি হলো দাওয়াহ। দাওয়াহ হচ্ছে সশস্ত্র জিহাদের মাধ্যমে শরীয়া ভিত্তিক রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করার জন্য ইসলাম সম্পর্কে জনগণকে ভুল ধারণা সংবলিত দাওয়াতি প্রক্রিয়ার মাধ্যমে ইসলাম সম্পর্কে ধর্ম, বর্ণ নির্বিশেষে সব মানুষকে আকৃষ্ট করা। দ্বিতীয়টি হচ্ছে ইদাদ। এ পর্বে দীর্ঘমেয়াদি জিহাদের কার্যক্রম চালানোর জন্য সমাজের মানুষদের মধ্যে তাদের মতাদর্শের উগ্রবাদী সহযোগী তৈরি করার মাধ্যমে প্রচুর সংখ্যক আনসার (সাহায্যকারী) তৈরি করা। আনসারদের প্রকারভেদ হচ্ছে আলিফ, বা, তা ইত্যাদি। এই সমস্ত আনসাররা জিহাদের সময়ে আর্থিক ও সামরিক সহায়তা প্রদান করবে এবং আশ্রয়দানের মাধ্যমে তাদের নিরাপত্তা প্রদান করবে। ইমারার এই পর্বটি হচ্ছে একটি দীর্ঘকালীন প্রস্তুতির পর্ব। এই পর্যায়ে জিহাদরত সদস্যদের ওপর ব্যাপক নির্যাতন ও অত্যাচার চলবে কিন্তু জিহাদিরা কোনোভাবেই সশস্ত্র ও সহিংস পন্থা অবলম্বন করবে না। এই সময়টি হচ্ছে সীমাহীন ধৈর্যের সময়। শেষটি হচ্ছে রিবাত। রিবাত (গেরিলা যুদ্ধের প্রস্তুতি) ইমারার এই পর্যায়ে সংগঠিত জঙ্গিরা সশস্ত্র হামলা চালাবে। তারা বিভিন্ন স্থাপনা ও কথিত অনৈসলামিক কার্যক্রম পরিচালনাকারী প্রতিষ্ঠান ও ব্যক্তির ওপর আক্রমণ করবে এবং বার্তা প্রদানের মাধ্যমে ওই হামলার দায় স্বীকার করবে।

জঙ্গি আনসারুল্লাহর ৯ সদস্য গ্রেফতার, মিলল চাঞ্চল্যকর তথ্য

সশস্ত্র জিহাদের লক্ষ্যে তৎপর উগ্র জঙ্গি সংগঠন আনসারুল্লাহ বাংলা টিমের ৯ সদস্যকে গ্রেফতার করা হয়েছে। গত শনিবার বিভিন্ন স্থানে রাতভর অভিযান চালিয়ে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ তাদের গ্রেফতার করে। গোয়েন্দা কর্মকর্তারা দাবি করেছেন, আন্তর্জাতিক সন্ত্রাসী সংগঠন আল-কায়েদার নীতি-আদর্শ অনুসরণ করে শরিয়াহ ভিত্তিক রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার জন্য কাজ করছিলেন আনসারুল্লাহ বাংলা টিমের গ্রেফতার হওয়া ৯ সদস্য। তারা হলেন সাইফুল ইসলাম (২১), আবু হানিফ (২৩), আমিনুল ইসলাম (২৫), জাহিদুল ইসলাম (২৭), আলী আজাদ (২৮), মো. পিয়াস ওরফে আল আসাদুল্লাহ (১৯), মো. জুন্নুন শিকদার (২৭), কাজী মো. রেজুয়ান (৩০) ও নাইমুল হাসান (২৮)। গ্রেফতারকৃতদের নিয়ে গতকাল দুপুরে মিন্টো রোডে ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) তথ্যকেন্দ্রে সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়। সেখানে গ্রেফতারকৃতদের হাজির করা হলেও সংবাদকর্মীদের তাদের সঙ্গে কথা বলতে দেওয়া হয়নি। পরে অনুষ্ঠিত এক ব্রিফিংয়ে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) যুগ্ম-কমিশনার মনিরুল ইসলাম, উপ-পুলিশ কমিশনার মুনিবুর রহমান, সিনিয়র সহকারী পুলিশ কমিশনার মোহাম্মদ তৌহিদুল ইসলাম উপস্থিত ছিলেন।

জব্দকৃত মালামাল : পুলিশ আটককৃতদের কাছ থেকে তিনটি ল্যাপটপ, দুটি কম্পিউটার, হাতে লেখা ও অাঁকা বিভিন্ন ধরনের অস্ত্র, গ্রেনেড ও রকেট লঞ্চার সংক্রান্ত একটি প্রশিক্ষণ পুস্তিকা (ম্যানুয়াল), বাংলা, আরবি এবং উর্দু ভাষায় লেখা অনলাইন ম্যাগাজিনের ২৫০টি পাতা, ইসলামের অপব্যাখ্যা সংবলিত বিভিন্ন বই, ৯টি মোডেম, একটি আইফোন, একটি ভিডিও ক্যামেরা, ২৫টি সিডি, একটি চাকু, একটি হ্যান্ডকাফ জব্দ করা হয়েছে।

জিজ্ঞাসাবাদে পাওয়া তথ্য : মনিরুল ইসলাম জানান, শনিবার জ্যেষ্ঠ সহকারী কমিশনার তৌহিদুল ইসলাম, বাকী বিল্লাহর নেতৃত্বে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) একটি দল রাজধানীর মোহাম্মদপুর, বাড্ডা, জিগাতলা, এলিফেন্ট রোড ও সাভারে অভিযান চালিয়ে উগ্রপন্থি জঙ্গি সংগঠনটির এই ৯ সদস্যকে গ্রেফতার করা হয়। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে বাংলা টিমের এই ৯ জন স্বীকার করেছেন, সশস্ত্র জিহাদ করে আল-কায়েদার আদর্শে বাংলাদেশকে শরিয়াহ রাষ্ট্র বানানোর জন্য তারা আনসারুল্লাহ বাংলা টিমের 'ইমারা' সদস্যপদ গ্রহণ করেছেন। পাকিস্তানে পলাতক বাংলা টিমের অপারেশনের দায়িত্বে থাকা ইজাজ হোসেনের নির্দেশনায় সব জঙ্গি কার্যক্রম পরিচালিত হয়। গ্রেফতার হওয়া নয়জনের মধ্যে কাজী রেজওয়ান শরিফ জঙ্গি প্রশিক্ষণ নেওয়ার সময় ২০০৯ সালে ইয়েমেনে গ্রেফতার হয়েছিলেন। নাইমুল হাসান বাংলা টিমের অপারেশনের দায়িত্বে থাকা ইজাজ হোসেনের ভাই। গ্রেফতার হওয়া সবাই কম্পিউটার-প্রযুক্তির মাধ্যমে বাংলা টিমের কার্যক্রম ওয়েবসাইটে পাঠানোর কাজ করতেন।

মামলা দায়ের : গ্রেফতারকৃত আসামিদের বিরুদ্ধে মোহাম্মদপুর থানায় সন্ত্রাসবিরোধী ও আইসিটি অ্যাক্ট-এ নিয়মিত মামলা করা হয়েছে। আটককৃতদের ১০ দিনের রিমান্ডের আবেদন জানিয়ে আদালতে পাঠানো হলে আদালত প্রত্যেক আসামিকে পাঁচ দিনের করে রিমান্ড মঞ্জুর করেন।

বগুড়ায় বিইএমের ৩ জঙ্গিকে টিএফআই সেলে নেওয়া হচ্ছে : বগুড়ায় গ্রেফতার হওয়া জঙ্গি সংগঠন বিইএম প্রশিক্ষণ কেন্দ্রের তিনজনকে টিএফআই সেলে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে। এ ব্যাপারে বগুড়া পুলিশ সুপার মোজাম্মেল হক পিপিএমের মাধ্যমে টিএফআই সেলের প্রধান বরাবর আবেদন করা হয়েছে।

সোর্স: http://www.bd-pratidin.com/

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.