আন্তর্জাতিক মুদ্রা মার্কিন ডলারের বিপরীতে টাকার শক্তি কমানোর দাবি জানিয়েছেন দেশের রপ্তানিকারকরা। গতকাল অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত এবং বাংলাদেশ ব্যাংক গভর্নর ড. আতিউর রহমানের কাছে পৃথক চিঠি পাঠিয়ে টাকার মান কমানোর দাবি জানানো হয়।
সম্প্রতি আমদানি ব্যয় কমে যাওয়ায় বৈদেশিক মুদ্রার মজুদ বাড়ছে। এর ফলে ডলারের বিপরীতে টাকার মানও শক্তিশালী হচ্ছে দিন দিন। টাকার মান বাড়লেও পাশর্্ববর্তী ভারতের মুদ্রা রুপির মান কমছে। একদিকে ভারতীয় রুপির ব্যাপক দরপতন অন্যদিকে টাকা শক্তিশালী হওয়ায় দেশের রপ্তানি খাত হুমকির মুখে পড়তে পারে বলে আশঙ্কা করছেন রপ্তানিকারকরা।
রপ্তানি বাণিজ্যে ক্ষতির আশঙ্কা থেকেই টাকার মান কমানোর জন্য গতকাল অর্থমন্ত্রী ও কেন্দ্রীয় ব্যাংক গভর্নরের কাছে চিঠি পাঠায় বাংলাদেশ এঙ্পোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশন। অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি সালাম মুর্শেদী স্বাক্ষরিত চিঠিতে বলা হয়েছে, ভারত বিশ্ব বাণিজ্যে একটি অন্যতম শক্তিধর দেশ। পাশর্্ববর্তী এ দেশটি তৈরি পোশাকসহ যে ধরনের পণ্য রপ্তানি করে, বাংলাদেশও সে ধরনের পণ্য রপ্তানি করে। এর ফলে আন্তর্জাতিক বাণিজ্যে ভারত-বাংলাদেশের অধিকাংশ রপ্তানি পণ্যের একটি প্রতিযোগী দেশ। সম্প্রতি ভারতীয় রুপির দরপতনের কারণে আগে যে ডলারের বিপরীতে বেশি রুপি পাওয়া যাচ্ছে, রুপির দরপতনের কারণে ক্রেতারা ডলার খরচ করে ভারত থেকে আগে যে পরিমাণ পণ্য কিনতে পারত এখন তার চেয়ে বেশি পরিমাণ পণ্য পাচ্ছে। ঠিক উল্টো ঘটনা ঘটছে বাংলাদেশে। ডলারের বিপরীতে টাকা শক্তিশালী হওয়ায় দেশ থেকে আগে যে পরিমাণ পণ্য কিনতে পারত ক্রেতারা এখন তার চেয়ে কম পাচ্ছে। ডলারের বিপরীতে মুদ্রার মানের এ ধরনের হেরফের ঘটায় ভারতের রপ্তানি মূল্যের চেয়ে একই পণ্যে বাংলাদেশের রপ্তানি মূল্য বেশি পড়ছে। এর ফলে রপ্তানি খাত প্রতিযোগিতায় পিছিয়ে পড়ছে। এ পরিস্থিতিতে চিঠিতে মার্কিন ডলারের বিপরীতে টাকার বিদ্যমান বিনিময় হার পুনর্নির্ধারণ করার অনুরোধ জানিয়েছেন রপ্তানিকারকরা।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের হিসাব মতে, বৈদেশিক মুদ্রার মজুদ ১৬ বিলিয়ন মার্কিন ডলার অতিক্রম করেছে। মজুদ শক্তিশালী হওয়ায় টাকাও শক্তি পাচ্ছে। ২০১২ সালের প্রথম প্রান্তিকে ১ ডলারের বিপরীতে ৮৩ টাকা ৯৫ পয়সা পাওয়া যেত। কিন্তু টাকা শক্তিশালী হওয়ায় সর্বশেষ গত সপ্তাহে ডলারের বিনিময় হার ছিল গড়ে ৭৭ টাকা ৭৫ পয়সা। এদিকে উল্টো ঘটনা ঘটছে ভারতে। ডলারের বিপরীতে ভারতীয় রুপির মান দ্রুত পড়ে যাচ্ছে। গত সপ্তাহে প্রতি ডলার বিক্রি হয়েছে ৬৫ রুপিরও বেশি দরে। ডলারের বিপরীতে দরপতনের কারণে টাকার বিপরীতেও দর কমেছে রুপির। বৃহস্পতিবার ঢাকার মুদ্রাবাজারে রুপি-টাকা বিনিময় হার দাঁড়ায় ১ টাকা ১৮ পয়সা থেকে ১ টাকা ২০ পয়সা। অথচ গত বছরের আগস্ট মাসে প্রতি ভারতীয় রুপির বিপরীতে টাকার মূল্য ছিল গড়ে ১ টাকা ৬৫ পয়সা। এ ব্যাপারে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ম. মুস্তাফিজুর রহমান বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, আমরা এমনিতেই রপ্তানি খাতের কথা বিবেচনা করে প্রতিদিন বাজার থেকে ডলার কিনে নিচ্ছি। অন্যথায় টাকার মান আরও বেড়ে যেত। তবে রপ্তানিকারকদের দাবির মুখে টাকার মান আর কমানোর কোনো সুযোগ নেই বলে জানান কেন্দ্রীয় ব্যাংকের এই মুখপাত্র। তিনি বলেন, মুদ্রার মান বাজারের ওপর নির্ভরশীল। কোনো বিশেষ খাতের জন্য এখানে হস্তক্ষেপের কোনো সুযোগ নেই। রপ্তানি খাতের উচিত প্রতিযোগিতায় তাদের সক্ষমতা অন্যভাবে বাড়ানো, যাতে বাজার হাতছাড়া না হয়।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।