নর্থ বেঙ্গল, মোবারকগঞ্জ, কেরু, ফরিদপুর ও কুষ্টিয়া চিনিকলে শত শত কোটি টাকার চিনি অবিক্রীত রেখেই শুরু হচ্ছে নতুন মাড়াই মৌসুম। এসব কলে মজুদ রয়েছে গত দুই তিন মৌসুমের চিনি। গুদামে থেকে এসব চিনি দিন দিন খাবার অযোগ্য হয়ে পড়ছে। গলতে শুরু করেছে কয়েকটি কলের চিনি। একে তো লোকসানের ভয়ে চিনি বিক্রি হচ্ছে না, তার ওপর নতুন মৌসুমের চিনি কি করবেন এ নিয়ে বিপাকে কর্তৃপক্ষ। শঙ্কায় রয়েছেন আখচাষী ও শ্রমিকরা। ঋণের ভারে বহু চাষীর মূল্য পরিশোধ করতে পারেনি মালিকপক্ষ। বকেয়া পড়েছে শ্রমিকদের মজুরির লাখ লাখ টাকা।
নাটোর প্রতিনিধি নাসিম উদ্দীন নাসিম জানান, নর্থ বেঙ্গল সুগার মিলে ১০০ কোটি টাকার চিনি অবিক্রীত রেখে ১৫ নভেম্বর শুরু হচ্ছে ২০১৩-১৪ মৌসুমের আখ মাড়াই। ২০১১-১২ ও ২০১২-১৩ মৌসুমের ১৮ হাজার ৭৫০ মেট্রিক টন চিনি গুদামে পড়ে আছে। এছাড়া গত মৌসুমে উৎপাদিত ২ হাজার ৬৯৮ মেট্রিক টন চিটা গুড় অবিক্রীত রয়েছে। যার মূল্য দুই কোটি ২০ লাখ টাকা। এ মৌসুমে উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ১৭ হাজার ৫০ মেট্রিকটন।
শেখ রুহুল আমিন ঝিনাইদহ, জানান কালীগঞ্জের মোবারকগঞ্জ চিনিকলের প্রায় ৫০ কোটি টাকার ৯ হাজার ৭০০ মেট্রিক টন চিনি অবিক্রীত রেখে ১৫ নভেম্বর শুরু হচ্ছে নতুন মাড়াই কার্যক্রম। গুদামভর্তি চিনি ইতিমধ্যে রং নষ্ট হয়ে গলতে শুরু করেছে। টাকার অভাবে শ্রমিক কর্মচারীদের বেতন-পাওনাদি দিতেও হিমসিম খাচ্ছে কর্তৃপক্ষ। ফলে ২০১৩-১৪ মাড়াই মৌসুম নিয়ে উদ্বিগ্ন সংশ্লিষ্টরা। তাছাড়া গুদামভর্তি চিনি থাকায় আসছে মৌসুমের চিনি রাখার স্থান সংকুলানের ব্যাপারে শঙ্কায় রয়েছেন তারা।
চুয়াডাঙ্গা প্রতিনিধি জামান আখতার জানান, আগের দুই মৌসুমের চিনি মজুদ থাকা অবস্থায়ই কেরু কর্তৃপক্ষ শুরু করতে যাচ্ছে ২০১৩-১৪ আখ মাড়াই মৌসুম। ২৯ নভেম্বর এ মৌসুম শুরুর দিন নির্ধারণ করেছে কর্তৃপক্ষ। প্রতিবছর লোকসানের বোঝা নিয়েই চলছে কেরুর কার্যক্রম। গত দুই মৌসুমের অবিক্রীত চিনির পাশাপাশি আগামী মৌসুমের চিনি নিয়ে চিন্তিত কেরু অ্যান্ড কোম্পানী।
ফরিদপুর প্রতিনিধি কামরুজ্জামান সোহেল জানান, ফরিদপুর চিনিকলে ৩৩ কোটি ২০ লাখ টাকার চিনি অবিক্রীত পড়ে আছে। এর মধ্যে রয়েছে ২০১১-১২ ও ২০১২-১৩ মৌসুমের চিনিও। মিলে প্রায় ৯০ কোটি টাকা ঋণ নিয়ে ১৫ নভেম্বর ২০১৩-১৪ আখ মাড়াই শুরু প্রস্তুতি নেওয়া হচ্ছে। আগের মৌসুমের চিনি অবিক্রীত থাকায় নতুন মৌসুমে উৎপাদিত চিনি রাখার জায়গা নেই গুদামে। তার ওপর আখ চাষীদের পাওনা ঠিকমতো পরিশোধ করতে না পেরে উৎকণ্ঠায় কর্তৃপক্ষ।
কুষ্টিয়া থেকে জহুরুল ইসলাম জানান, কুষ্টিয়া চিনিকলে গত দুই মৌসুমের ২৮ কোটি টাকার চিনি বিক্রি হয়নি। গুদামে মাসের পর মাসে পড়ে থেকে দিন দিন খাবার অযোগ্য হয়ে পড়ছে এসব চিনি। এছাড়া চিনি বিক্রি না হওয়ায় সময়মতো শ্রমিক কর্মচারীদের বেতন পরিশোধে প্রতিবন্ধকতাসহ নানা সমস্যা দেখা দিয়েছে।
এসব সমস্যার উত্তরণ না হতেই শুরু হচ্ছে নতুন আখ মাড়াই মৌসুম। যা নিয়ে উদ্বিগ্ন কর্তৃপক্ষ, চাষী ও শ্রমিকরা।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।