সমন্বয়হীনতা আর কিছু শিক্ষক-কর্মকর্তা-কর্মচারীর অনিয়ম-দুর্নীতিতে ডুবতে বসেছে দেশের ১৪টি সরকারি শিক্ষক প্রশিক্ষণ কলেজ (টিটিসি)। অভিযোগ উঠেছে, বিএডে অতিরিক্ত ভর্তি ফি আদায় করে অবাধে পকেটস্থ করা হচ্ছে। এমনকি প্রতিষ্ঠানের গাড়ি ও কনফারেন্স হল ভাড়ার টাকাও লুটপাট চলছে। আর এ অবৈধ উপার্জনের অর্থ ভাগাভাগি নিয়ে কর্মকর্তা-কর্মচারীদের মধ্যে সৃষ্টি হয়েছে দ্বন্দ্বের। এ কারণে প্রতিষ্ঠানগুলোয় দিন দিন কমে যাচ্ছে শিক্ষার্থী।
সূত্র জানায়, সরকারি-বেসরকারি নিয়োগ পরীক্ষা বা অনুষ্ঠানের জন্য ভাড়া দেওয়া হয় শিক্ষক প্রশিক্ষণ কলেজের কনফারেন্স কক্ষ। এক দিন ভাড়া বাবদ ৫০ হাজার টাকারও বেশি নেওয়া হয় আয়োজকদের কাছ থেকে। মাসের চার সপ্তাহে প্রতিটি কলেজের হল থেকে দেড় থেকে দুই লাখ টাকা আয় হয়। অন্যদিকে, নিয়োগ পরীক্ষার দায়িত্ব পালনে অতিরিক্ত শিক্ষক দেখিয়ে সেই টাকাও হাতিয়ে নেন প্রতিষ্ঠানের প্রধানরা। কিন্তু জুনিয়র শিক্ষকরা এ নিয়ে মুখ খুলতে পারছেন না। জানা গেছে, জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ সরকারি শিক্ষক প্রশিক্ষণ কলেজে এবার বিএড কোর্সে ভর্তি ফি নির্ধারণ করেছিল ২ হাজার ৭০০ টাকা। ভর্তির শেষ সময় ছিল ২৭ ফেব্রুয়ারি। কিন্তু ৮-১০টি টিটিসি এ নির্দেশনার তোয়াক্কা না করে ইচ্ছামতো ফি আদায় করেছে এবং এখনো ভর্তি কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে। মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদফতরের (মাউশি) প্রশিক্ষণ শাখার তথ্যানুযায়ী, ঢাকা টিটিসি ভর্তি ফি আদায় করেছে ৬ হাজার টাকা করে। এ ছাড়া ময়মনসিংহ টিটিসি (পুরুষ) ৪ হাজার ৪০০, সিলেট টিটিসি ৪ হাজার ৯৫০, ফরিদপুর টিটিসি ৫ হাজার ৩০০ এবং চট্টগ্রাম টিটিসি নিয়েছে ৫ হাজার টাকা। ঢাকা টিটিসিতে ৬৫০ আসনের বিপরীতে ৫৪৮, ময়মনসিংহ টিটিসিতে ৬০০ আসনের বিপরীতে ৫১৪ এবং সিলেট টিটিসিতে ৩৪০ আসনের বিপরীতে ভর্তি হয়েছেন মাত্র ১০০ জন।
জানতে চাইলে ঢাকা টিটিসির অধ্যক্ষ দীপককুমার নাগ বলেন, 'কলেজের গাড়িচালকের খরচ বাবদ শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে বছরে ১২৫ টাকা নেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া বিভিন্ন অনুষ্ঠানের জন্যও অনেক অর্থ খরচ করতে হয়। এ জন্য ভর্তি ফি কিছুটা বেশি নিয়েছি।' সিলেট টিটিসির অধ্যক্ষ নিতাই চন্দ্র চন্দ বলেন, 'কম ছাত্র ভর্তি হওয়ায় ফি কিছুটা বেশি নিতে হয়েছে। তা ছাড়া নতুন প্রতিষ্ঠান হওয়ায় অনেক ব্যয় শিক্ষার্থীদের বেতন থেকে নির্বাহ করতে হয়।' নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক টিটিসির অধ্যক্ষ জানান, শিক্ষা প্রশাসনের কর্তাব্যক্তিরা প্রায় প্রতি সপ্তাহে পরিদর্শনে আসেন। তখন তাদের সম্মানী ভাতা দিতে হয়। তা ছাড়া কয়েকটি টিটিসির গাড়িচালক মাউশি ও শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের প্রভাবশালী কর্মকর্তাদের ব্যক্তিগত গাড়ি চালাচ্ছেন। কিন্তু ওই চালকদের খরচ মেটাতে হয় নিজস্ব তহবিল থেকেই। সূত্রমতে, শিক্ষা প্রশাসনের শীর্ষস্থানীয় কর্মকর্তারা টিটিসি থেকে নানাভাবে সুবিধা পাওয়ায় অনিয়ম ও স্বেচ্ছাচারিতার লাগাম টানতে পারছে না মাউশি।
মাউশির পরিচালক (প্রশিক্ষণ) অধ্যাপক রাখাল চন্দ্র দে বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, 'শিক্ষক প্রশিক্ষণ কলেজগুলোয় সিনিয়র শিক্ষকদের দায়িত্ব দেওয়ায় তারা আমাদের নির্দেশ মানেন না।' তিনি বলেন, 'প্রতিষ্ঠানের গাড়ি ছাত্রদের কাজে ব্যবহার না করে ভাড়া দেওয়া আর হল ভাড়া দিয়ে টাকা আয় করা একজন অধ্যক্ষের জন্য নৈতিকতাবিবর্জিত কাজ।'
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।