আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

আমরা মাশুল দিয়ে যাচ্ছি শতাব্দীর পর শতাব্দী

ইখতিয়ার উদ্দিন মুহম্মদ বখতিয়ার খলজী ১১৯৩ খ্রীস্টাব্দে নালন্দা বিশ্ববিদ্যালয় ধ্বংস করারা মাধ্যমে বাংলা ও বাঙালীকে ইতিহাসের সেই আস্তাকুড়ে নিক্ষেপ করেন যেখান থেকে আমরা আদৌ উঠে আসতে পারিনি ......... এক কালের পৃথিবীর অন্যতম সুশিক্ষিত জাতি ক্রমবর্ধমান ভাবে আজ পরিণত হয়েছে পৃথিবীর মূর্খতম জাতিতে। এখানে হিন্দু সেন রাজাদের অযোগ্যতা ও দুঃশাসন অনেকাংশে দায়ী ছিলো ......... বৌদ্ধ পাল রাজাদের সুশাসন ও শিক্ষা ক্ষেত্রে পৃষ্ঠ পোষকতার অতুলনীয় উদাহরন আমাদের(ভারতীয় নয় শুধু মাত্র বাঙ্গালী বোঝাতে) একমাত্র স্বর্ণ যুগের সুচনা করেছিলো। আমি খেয়াল করে দেখেছি আমাদের সমাজের শিক্ষিত অশিক্ষত নির্বিশেষে প্রায় সকলেই মনে করেন যে আমাদে নিকট পূর্বপুরুষেরা হিন্দু ছিলো ......... কিন্তু ইতিহাস পর্যালোচনা করলে এটা স্পস্ট হয় যে আমাদের নিকট পূর্বপুরুষেরা অনেকেই বৌদ্ধ থেকে আগত। যদিও বা দূর অতীতে বৌদ্ধরাও হিন্দু হতে উদ্ভব কিন্তু আমাদে নিকট অতীত পূর্বপুরুষ হিন্দু বৌদ্ধ উভয়-ই সম্মিলিত। ইখতিয়ার উদ্দিন মুহম্মদ বখতিয়ার খলজী যতটা না হিন্দু নিধন করেছেন তার থেকে অনেক সহস্রগুন বেশী বৌদ্ধ নিধন করেছিলেন।

এককথায় বলা যায় ইখতিয়ার উদ্দিন মুহম্মদ বখতিয়ার খলজী এই অঞ্চলের বৌদ্ধদের প্রায় নিশ্চিহ্ন করে দিয়েছিলেন। নালন্দা পৃথিবীর প্রথম আবাসিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর মধ্যে একটি এবং এটি ইতিহাসের সবচেয়ে প্রসিদ্ধ বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর মধ্যেও একটি। এর স্বর্ণযুগে ১০,০০০ এর অধিক শিক্ষার্থী এবং ২,০০০ শিক্ষক এখানে জ্ঞান চর্চা করত। একটি প্রধান ফটক এবং সুউচ্চ দেয়ালঘেরা বিশ্ববিদ্যালয়টি স্থাপত্যের একটি মাস্টারপিস হিসেবে সুপরিচিত ছিল। বিশ্ববিদ্যালয়ে আটটি ভিন্ন ভিন্ন চত্বর(compound) এবং দশটি মন্দির ছিল; ছিল ধ্যান করার কক্ষ এবং শ্রেনীকক্ষ।

প্রাঙ্গনে ছিল কতগুলো দীঘি ও উদ্যান। বিশ্ববিদ্যালয়ের পাঠাগারটি ছিল একটি নয়তলা ভবন যেখানে পাণ্ডুলিপি তৈরি করা হত অত্যন্ত সতর্কতার সাথে। তৎকালীন জ্ঞান বিজ্ঞানের সকল শাখাতেই চর্চার সুযোগ থাকায় সুদূর কোরিয়া, জাপান, চীন, তিব্বত, ইন্দোনেশিয়া, পারস্য এবং তুরস্ক থেকে জ্ঞানী ও জ্ঞান পিপাসুরা এখানে ভীড় করতেন। চীনের ট্যাং রাজবংশের রাজত্বকালে চৈনিক পরিব্রাজক জুয়ানঝাং ৭তম শতাব্দিতে নালন্দার বিস্তারিত বর্ণনা লিখে রেখে গেছেন। ১১৯৩ সালে তুর্কি সেনাপতি ইখতিয়ার উদ্দিন মুহম্মদ বখতিয়ার খলজী নালন্দ মহাবিহার ধ্বংস করে ফেলেন; এই ঘটনাটি ভারতে বৌদ্ধ ধর্মের পতনের সূচক হিসেবে গণ্য করা হয়।

পারস্যের ইতিহাসবিদ মিনহাজ তার তাবাকাতে নাসিরি গ্রন্থতে লিখেছেন যে হাজার হাজার বৌদ্ধ পুরোহিতকে জীবন্ত পুড়িয়ে মারা হয় কিংবা মাথা কেটে ফেলা হয়; খিলজি এভাবে এই অঞ্চল থেকে বৌদ্ধধর্ম উৎপাটন করে ইসলাম প্রতিষ্ঠার চেষ্টা করেন, মহাবিহারের গ্রন্থাগারটি মাসের পর মাস ধরে আগুন দিয়ে পোড়ানো হয়। মুলত এই ধ্বংসযজ্ঞ-ই তৎকালীন হিন্দু সেন রাজবংশের শাশক লক্ষন সেন কে ভীত করে তুলে। এই ভিতী-ই অবশেষে ১২০৫ মতান্তরে ১২০৬ খ্রীস্টাব্দে বিনা যুদ্ধে রাজ সিংহাসন ত্যাগ করার কারন হিসেবে প্রতিয়মান হয়। নালন্দা বিশ্ববিদ্যালয়ে এত এত পরিমান বই ছিলো যে তা পুড়তে মাসের পর মাস সময় লেগে যায়। এর মাশুল আমরা দিয়ে যাচ্ছি শতাব্দীর পর শতাব্দী ......।

সোর্স: http://www.somewhereinblog.net     দেখা হয়েছে বার

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.