আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

অসত্য ও বিভ্রান্তিকর তথ্য দিয়েই যাচ্ছেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী



‌‌"একের পর এক বিভ্রান্তিকর ও অসত্য তথ্য দিয়ে চলেছেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডা. দীপু মনি। সম্প্রতি প্রধানমন্ত্রীর চীন সফর শেষে বাংলাদেশকে দেয়া চীনের ঋণ মওকুফের ব্যাপারে পররাষ্ট্রমন্ত্রী যে তথ্য দিয়েছেন, তা সঠিক নয়। পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেছেন, ২০০৮ সাল পর্যন্ত বাংলাদেশকে দেয়া চীনের সব ঋণ মওকুফ করা হয়েছে। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, পররাষ্ট্রমন্ত্রীর এই তথ্য সঠিক নয়। বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং চীনের প্রধানমন্ত্রী ওয়েন জিয়াবাওয়ের মধ্যে গত ১৮ মার্চ বেইজিংয়ে অনুষ্ঠিত দ্বিপাক্ষিক বৈঠক শেষে প্রকাশিত যৌথ ইশতেহারে ঋণ মওকুফের ব্যাপারে কিছুই বলা হয়নি।

পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তারা জানান, চীনের প্রধানমন্ত্রী মৌখিকভাবে ঋণ মওকুফের কথা বলেছেন। তবে চীনা প্রধান মন্ত্রী সব ধরনের ঋণ মওকুফের কথা বলেননি। শুধু সুদমুক্ত যে ঋণ রয়েছে, তা মওকুফের কথা বলেছেন। এদিকে সুদমুক্ত এই ঋণের পরিমাণ নিয়ে দু’দেশের হিসাবের মধ্যে রয়েছে বিস্তর ফারাক। চীনের হিসাব অনুযায়ী এই ঋণের পরিমাণ ৮০০ মিলিয়ন ডলার।

অন্যদিকে বাংলাদেশের হিসাব অনুযায়ী এই ঋণের পরিমাণ ৩০০ মিলিয়ন ডলারের মতো। মন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব নেয়ার পর থেকে এ ধরনের বিভ্রান্তিকর তথ্য দিয়ে বার বার আলোচনায় এসেছেন ডা. দীপু মনি। মন্ত্রী হওয়ার মাত্র এক মাস পর ৯ ফেব্রুয়ারি ২০০৯ প্রথম আলোচনায় আসেন তিনি। ওইদিন ঢাকায় ভারতের তত্কালীন পররাষ্ট্রমন্ত্রী প্রণব মুখার্জির সঙ্গে এক যৌথ সংবাদ সম্মেলনে অংশ নেন ডা. দীপু মনি। ওই সংবাদ সম্মেলনে পররাষ্ট্রমন্ত্রীকে এক ভারতীয় সাংবাদিক প্রশ্ন করতে গিয়ে বাংলাদেশকে বাফার স্টেট হিসেবে উল্লেখ করেন।

পররাষ্ট্রমন্ত্রী তখন ওই সাংবাদিকের মন্তব্যের কোনো প্রতিবাদ না করে নীরব ভূমিকা পালন করেন। বাংলাদেশের একজন সিনিয়র সাংবাদিক এ ব্যাপারে পররাষ্ট্রমন্ত্রীর দৃষ্টি আকর্ষণ করার পরও তিনি চুপ থাকেন। পররাষ্ট্রমন্ত্রীর এই ভূমিকায় তীব্র ক্ষোভ ও প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয়। পরে এ ব্যাপারে বক্তব্য দিতে বাধ্য হয় সরকার। আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও স্থানীয় সরকারমন্ত্রী সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম বলেন, পররাষ্ট্রমন্ত্রী বিষয়টির গুরুত্ব বোঝেননি।

ওই ঘটনার দুই মাস যেতে না যেতেই আবারও বিতর্কের জন্ম দেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী। ২০০৯ সালের এপ্রিলের শেষ সপ্তাহে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সৌদি আরব সফর করেন। সৌদি আরব থেকে ফিরে বিমানবন্দরে পররাষ্ট্রমন্ত্রী সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপে বলেন, গত ৭ বছরের মধ্যে সৌদি বাদশাহর সঙ্গে বাংলাদেশের কোনো সরকারপ্রধানের এটিই প্রথম বৈঠক। পররাষ্ট্রমন্ত্রীর ওই তথ্য ছিল সম্পূর্ণ অসত্য। তত্কালীন পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ পরে এক সংবাদ সম্মেলনে এ ব্যাপারে বক্তব্য দেন।

তিনি জানান, ২০০৫ সালে তত্কালীন প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া সৌদি বাদশাহর সঙ্গে বৈঠক করেন এ বছর জানুয়ারি মাসে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে ভারত সফর শেষে দেশে ফিরে পররাষ্ট্রমন্ত্রী ঘোষণা দেন, মার্চ মাসে জেআরসির বৈঠক অনুষ্ঠিত হবে। ওই বৈঠকের পর তিস্তার পানিবণ্টন নিয়ে বাংলাদেশ ও ভারত অন্তর্বর্তী চুক্তি সই করবে। মার্চ মাসে কোনো প্রকার সমঝোতা ছাড়াই জেআরসির বৈঠক শেষ হওয়ার পর পররাষ্ট্রমন্ত্রী তার সুর পাল্টে ফেলেছেন। তিনি এখন বলছেন, এত অল্প সময়ের মধ্যে চুক্তি সম্ভব নয়। দেশে যখন মানবাধিকার পরিস্থিতির ভয়াবহ অবনতি, ঠিক তখনই জেনেভায় মানবাধিকার কাউন্সিলের বৈঠকে অসত্য ও বিভ্রান্তিকর বক্তব্য দিয়ে এলেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী।

গত ১ মার্চ জেনেভায় অনুষ্ঠিত মানবাধিকার কাউন্সিলের উচ্চপর্যায়ের সভায় পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশের বর্তমান সরকার বিচারবহির্ভূত হত্যাসহ বেআইনি কোনো কিছুতে বিশ্বাস করে না। বর্তমান সরকারের আমলে মানবাধিকার পরিস্থিতির উন্নতি হচ্ছে। পররাষ্ট্রমন্ত্রীর ওই বক্তব্য সম্পূর্ণ অসত্য। মানবাধিকার সংস্থা অধিকার এবং আইন ও সালিশ কেন্দ্রের এবারের বার্ষিক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ২০০৯ সালে মানবাধিকার লঙ্ঘন এবং বিচারবহির্ভূত হত্যা অতীতের ১৪ বছরের রেকর্ড ভঙ্গ করেছে। ২০০৯ সালে ২২৯টি বিচারবহির্ভূত হত্যা হয়েছে।

" -আমার দেশ, ০৬-০৪-১০। মতামত দিন

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.