ঠাকুরগাঁওয়ের বালিয়াডাঙ্গীতে ইটের ভাটায় মানুষ বলি দেওয়া হয়েছে। তথাকথিত এক গণকের কথায় ইটের রঙ ভালো করার জন্য নরমুণ্ড দেওয়া হয়েছে ভাটার আগুনে। ১২ মার্চ রাতে বালিয়াডাঙ্গীর এএমএলবি ভাটায় লোমহর্ষক এ ঘটনা ঘটেছে। মালিকের নির্দেশে হত্যায় জড়িতরা গ্রেফতারের পর পুলিশের কাছে এসব স্বীকার
করেছে।
পুলিশ জানায়, বালিয়াডাঙ্গী উপজেলার ভানোর এলাকার গোকরাপাড়া গ্রামের শাল মোহাম্মদের ছেলে মোজাম্মেল হক নেংটিহারা গ্রামে অবস্থিত এএমএলবি নামে ইটের ভাটায় কাজ করতেন।
এই ভাটার মালিক খলিল ও তোফায়েল আহমেদ। প্রতিদিনের মতো ১২ মার্চও কাজ করেন ভাটাশ্রমিক মোজাম্মেল। জীবনের শেষদিন ২ হাজার ২০০ ইট তৈরি করেন। বিকেল ৫টায় কাজ শেষ হয়। কাজ শেষে সর্দারের কাছে পারিশ্রমিক চাইতে যান মোজাম্মেল।
কিন্তু প্রতিদিনের মতো শ্রমিক সর্দার ইউনুস তাকে পারিশ্রমিক দিয়ে বিদায় করেননি।
ওইদিন পূর্বপরিকল্পনা অনুযায়ী তাকে নিয়ে যাওয়া হয় ডাঙ্গী চাদনী সিনেমা হলে। তার সঙ্গে ছিল শ্রমিক সর্দার ইউনুস, শ্রমিক কফিল, জলিলসহ ৫ জন। রাত ৯টা থেকে ১২টা। সিনেমা দেখার পর বাড়ি ফেরার পালা।
মোজাম্মেল কেন জানি খুব বেশি ছটফট করছিলেন বাড়ি যাওয়ার জন্য। কিন্তু তার সহকর্মীরা কৌশলে তাকে বন্ধুর বাড়িতে দাওয়াতের কথা জানায়। এই কথা বলে ডাঙ্গী থেকে ভ্যানে করে মোজাম্মেলকে নিয়ে যাওয়া হয় লাহিড়ীর দিকে। পথে ভ্যান আটকে অন্ধকারের মধ্যে মোজাম্মেলের চোখ বেঁধে ফেলে পাঁচ সঙ্গী। চিৎকার করলে মুখে কাপড় পেঁচিয়ে দেওয়া হয়।
নিয়ে যাওয়া হারামডাঙ্গী মাঠে। ভাটা মালিকের নির্দেশে হত্যার জন্য একটি ধারালো ছোরা বের করে কফিল। গলার ওপর ধারালো অস্ত্র চালালে রক্তে ভেসে যায় ভুট্টার ক্ষেত। তা ঢেকে রাখা হয় মাটি দিয়ে। ব্যাগে করে ভাটায় নিয়ে যাওয়া হয় মোজাম্মেলের মাথা।
ভাটার যে মুখে কাঠ বা কয়লা দেওয়া হয় সেখানে দেওয়া হলো মোজাম্মেলের মাথা। মাথার সঙ্গে দেওয়া হয় মাথা কাটার ছোরাটিও।
রিমান্ডে গ্রেফতার হওয়া ওই তিন আসামি আরও জানায়, ইটের ভাটায় আগুন দেওয়ার পর থেকেই ইটের রঙ ভালো হচ্ছিল না। এ ছাড়া ইট বিক্রিও ভালো না হওয়ায় ব্যবসায় লোকসানের আশঙ্কা ছিল ভাটা মালিকের। এ কারণেই ভাটা মালিককে এক গণক পরামর্শ দিয়েছিলেন মানুষের মাথা ভাটায় পোড়াতে।
সেই থেকে ভাটা মালিক মাথা সংগ্রহে উম্মাদ হয়ে ওঠেন। তাই বেছে নেওয়া হয় সহজ-সরল মোজাম্মেলকে। মালিকের পরিকল্পনা হয় মূলত কফিলের সঙ্গে। কফিলকে এ কাজের জন্য ২৪ হাজার টাকা প্রদানের প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়। কফিল তার সহকর্মী শ্রমিক সর্দার ইউনুস ও জলিলসহ ৫ জনকে ঠিক করে।
মিশন সফলের আগেই ২৪ হাজার টাকা নেয় কফিল। মাথা কাটার পর কফিল সঙ্গী ৪ জনকে দেয় ৪ হাজার টাকা। আর সে একাই নেয় ২০ হাজার টাকা। ভাটা মালিক খলিল ১২ মার্চ সকালেই এই টাকা দিয়ে দেন। হত্যাকাণ্ডের পর ১৬ মার্চ রাতে পুলিশ অভিযান চালিয়ে কফিল, শ্রমিক সর্দার ইউনুস ও জলিলকে গ্রেফতার করে।
এরপরই বেরিয়ে আসে হত্যাকাণ্ডের মূল রহস্য। তবে ঘটনার নেপথ্যে থাকা মূলহোতা খলিল গা ঢাকা দিয়েছে। পুলিশের টার্গেট এখন খলিল ও পালিয়ে থাকা আরও দুই আসামি। বালিয়াডাঙ্গী থানার ওসি সারোয়ার হোসেন জানান, গ্রেফতারকৃতদের আরও দু'দিনের রিমান্ড নেওয়া হয়েছে। রোববার ভাটার আগুন নিভিয়ে দেওয়া হবে।
ভাটা ভেঙে তলল্গাশি করা হবে। মাথা না পাওয়া গেলেও খুন করা ছোরাটি পাওয়া যাবে। শনিবার জ্যেষ্ঠ বিচারিক হাকিম মাসুদ পারভেজ এই আদেশ দেন।
এদিকে মোজাম্মেলের স্ত্রী জোৎস্না বেগম, দুই পুত্র ইমা (৮) ও মুসাকে (৬) নিয়ে মানবেতর জীবন-যাপন করছেন। জোৎস্না বেগম জানান, গরিবের বিচার নেই।
আমার স্বামীকে যারা হত্যা করেছে তাদের বিচার আলল্গাহ করবেন। মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা এসআই আতিকুল ইসলাম জানান, হত্যারহস্যের জট খুলছে। মূল হোতাকে গ্রেফতার করলে ঘটনার আরও বিস্তারিত জানা যাবে।
সূত্র: সমকাল
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।