জয়ন্তীতে ফিরছে চলচ্চিত্র। এক সময়ে চলচ্চিত্র মুক্তির সঙ্গে জয়ন্তী শব্দটি ওতপ্রোতভাবে জড়িত ছিল। নির্মাতা, হল মালিক, দর্শক, প্রদর্শক সবারই দেখার বিষয় ছিল মুক্তিপ্রাপ্ত চলচ্চিত্রটি সর্বোচ্চ কোন জয়ন্তী পালন করে। স্বাধীন দেশে ১৯৭২ থেকে ১৯৮১ সাল পর্যন্ত ছিল জয়ন্তীর স্বর্ণযুগ। এরপর থেকে বাংলা চলচ্চিত্রের মৌলিকত্বের সঙ্গে সঙ্গে জয়ন্তীও হারাতে থাকে- এমন দাবি চলচ্চিত্রকার ও প্রদর্শক সমিতির।
বর্তমানে চলচ্চিত্রের সুদিন ফিরেছে। বিশেষ করে গত বছর থেকে মুক্তিপ্রাপ্ত বেশ কিছু চলচ্চিত্র দর্শক নজর কাড়ে। গেল ঈদে মুক্তিপ্রাপ্ত ৩টি চলচ্চিত্রই অভাবনীয় সাড়া জাগিয়েছে। দর্শকগ্রহণযোগ্যতা নিয়ে টানা তিন সপ্তাহ ধরে প্রায় আড়াইশ প্রেক্ষাগৃহে চলছে চলচ্চিত্রগুলো। ৩০ আগস্ট মুক্তি পাচ্ছে ৩টি চলচ্চিত্র। নব্বই দশকের মধ্যবর্তী সময়ের পর উৎসববিহীন দিবসে একসঙ্গে এতগুলো চলচ্চিত্র মুক্তির চিত্র এটিই প্রথম। এ অবস্থায় চলচ্চিত্রকার, প্রদর্শক সমিতি ও প্রেক্ষাগৃহ মালিকরা চাইছেন চলচ্চিত্রে আবার জয়ন্তী চালু হোক। তাহলে চলচ্চিত্রের সফলতার চিত্র সবার সামনে ফুটে উঠবে। তাই শীঘ্রই জয়ন্তীতে ফিরছে চলচ্চিত্র।
চলচ্চিত্রের ব্যবসায়িক সফলতা ও দর্শক গ্রহণযোগ্যতা অনুযায়ী ৪টি জয়ন্তী রয়েছে। এগুলো হলো- সুবর্ণ, রজত, স্বর্ণ ও হীরক জয়ন্তী। প্রদর্শক সমিতির হিসাব মতে- একটি প্রেক্ষাগৃহে কোনো চলচ্চিত্র টানা ২৫ সপ্তাহ চললে সুবর্ণ, ৫০ রজত, ৭৫ স্বর্ণ ও ১০০ সপ্তাহে হীরক জয়ন্তী ধরা হয়। আবার একই শহরে যদি ৫টি প্রেক্ষাগৃহে একসঙ্গে কোনো চলচ্চিত্র ৫ সপ্তাহ প্রদর্শিত হয় তাহলে একে ২৫ সপ্তাহ ধরা হয়। এভাবে ১০ সপ্তাহে ৫০, ১৫ তে ৭৫ ও ২০ সপ্তাহে ১০০ সপ্তাহ হিসাব করা হয়। প্রদর্শক সমিতির সাধারণ সম্পাদক মিয়া আলাউদ্দিন জানান, ১৯৭২ সালের ১২ জানুয়ারি মুক্তি পায় স্বাধীন দেশে প্রথম চলচ্চিত্র 'মানুষের মন'। মোস্তফা মেহমুদ পরিচালিত এ চলচ্চিত্রটি টানা ৫০ সপ্তাহ চলে রজতজয়ন্তী পালন করে। এ বছর মুক্তিপ্রাপ্ত ২৯টি চলচ্চিত্রের মধ্যে 'মানুষের মন' ছাড়া অন্য যেসব চলচ্চিত্র জয়ন্তীর মুখ দেখে তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো এম এ কাশেম পরিচালিত 'বাহরাম বাদশাহ' রজত জয়ন্তী, কাজী জহিরের 'অবুঝ মন' হীরক জয়ন্তী ও কামাল আহমেদ পরিচালিত 'অশ্রু দিয়ে লেখা' রজত জয়ন্তী, ১৯৭৩ সালে জহিরুল হকের 'রং বাজ' স্বর্ণ জয়ন্তী, খান আতার 'আবার তোরা মানুষ হ' রজত জয়ন্তী এবং আজিজুর রহমানের 'অতিথি' রজত জয়ন্তী। ১৯৭৪ সালে রুহুল আমিন নির্মিত 'বেঈমান' স্বর্ণ জয়ন্তী, ফয়েজ চৌধুরীর 'মালকা বানু' হীরক জয়ন্তী, মিতার 'আলোর মিছিল' ও মাসুদ পারভেজের 'মাসুদ রানা' সুবর্ণ জয়ন্তী। ১৯৭৫ সালে খান আতার 'সুজন সখী' হীরক জয়ন্তী এবং মহসিনের 'বাঁদী থেকে বেগম', দিলীপ সোমের 'আলো তুমি আলেয়া', মাসুদ পারভেজের 'এপার ওপার' সুবর্ণ জয়ন্তী। ১৯৭৬ সালে আমজাদ হোসেনের 'নয়নমনি' ও এস এম শফি'র 'দি রেইন' হীরক জয়ন্তী। ১৯৭৭ সালে আবদুল লতিফ বাচ্চুর 'যাদুর বাঁশী' স্বর্ণ জয়ন্তী, আলমগীর কবীরের 'সীমানা পেরিয়ে' ও ইবনে মিজানো 'নিশান' রজত জয়ন্তী। ১৯৭৮ সালে কাজী জহিরের 'বধূবিদায়', এ জে মিন্টুর 'মিন্টু আমার নাম', আমজাদ হোসেনের 'গোলাপী এখন ট্রেনে', আজিজুর রহমানের 'অশিক্ষিত', অশোক ঘোষের 'তুফান', সাইফুল আজম কাশেমের 'সোহাগ', দিলীপ বিশ্বাসের 'আসামি', আব্দুল্লাহ আল মামুনের 'সারেং বউ' স্বর্ণ জয়ন্তী। ১৯৭৯ সালে আজিজুর রহমানের 'মাটির ঘর', সাইফুল আজম কাশেমের 'ঘর সংসার', হাফিজউদ্দিনের 'ওয়াদা', কাজী হায়াৎ-এর 'দি ফাদার' রজত জয়ন্তী। ১৯৮০ সালে আজিজুর রহমানের 'ছুটির ঘণ্টা' হীরক জয়ন্তী, আবদুল্লাহ আল মামুনের 'সখি তুমি কার' রজত জয়ন্তী, সাইফুল আজম কাশেমের 'বৌরাণী' স্বর্ণ জয়ন্তী। ১৯৮১ দিলীপ বিশ্বাসের 'অংশীদার' হীরক জয়ন্তী, আজিজুর রহমানের 'জনতা এঙ্প্রেস' ও আমজাদ হোসেনের 'জন্ম থেকে জ্বলছি' রজত জয়ন্তী পালন করে।
মিয়া আলাউদ্দিন বলেন, ১৯৮১ সালের পর থেকে চলচ্চিত্রের জয়ন্তী পালন ক্রমেই কমতে থাকে এবং একটি সময়ে এসে তা শূন্যের কোঠায় ঠেকে। এ প্রসঙ্গে চলচ্চিত্রকার নায়করাজ রাজ্জাক, সোহেল রানা, আজিজুর রহমান, মতিন রহমান প্রমুখ অভিন্ন সুরে বলেন, নির্মাণ, গল্প, চিত্রনাট্য, গান এবং অভিনয়ে মৌলিকত্বহীনতার সঙ্গে সঙ্গে জয়ন্তীও হারিয়েছিল চলচ্চিত্র। কিন্তু বর্তমানে আবার চলচ্চিত্রের সুদিন ফিরেছে। তাই আমাদের প্রত্যাশা আবারও জয়ন্তীতে ফিরবে চলচ্চিত্র।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।