আমার এক মোবাইল নিয়ে শেষ পোস্ট লিখেছিলাম, এই পোস্টাও সেই একি মোবাইকে নিয়েই।
গত দু্'শুক্রবার আগের ঘটনা। মেঘের ভাইয়ে বিয়ে, হলুদের ডালা সাজানোর দায়িত্ব আমি নিলাম। প্রায় সপ্তাহখানেকের চেষ্টায় ১৪টার মধ্যে ৪টা সাজানো শেষ করলাম। ঘটনার দিন সকালে মেঘ জানালো আমার বাবা মাকে বিয়ের কার্ড দিতে আসবে।
মেঘের সময় কম, বিয়ে বাড়ির হাজারটা কাজ। তাও ওকে কিছুক্ষন আটকে রেখে গল্প করলাম, যাবার সময় সেই ৪টা ডালা আর টুকটাক কিছু দিয়ে দিলাম। বিকেলে আবার একটা প্রোগ্রাম আছে, তাই রেডি হয়ে বের হবার সময় মোবাইল খুঁজে আর পেলামনা। দেরি হচ্ছে দেখে বাসার কাজের ছেলে কে বলে গেলাম খুঁজে রাখতে।
অনুষ্ঠান শেষ করে যখন বাসায় ফিরলাম তখন রাত ১১টা।
জিগ্গেস করে জানতে পারলাম মোবাইলটা খুজে পাওয়া যায়নি। আমি এই উত্তরের জন্য রেডিই ছিলাম। আজ পর্যন্ত এমন হয়নি যে এদেরকে কিছু খুঁজতে দিয়েছি আর তারা পেয়েছে, আমাকেই খুঁজে বের করতে হয়। তাই ওয়াফি কে ঘুম পাড়িয়ে আমিই শুরু করলাম খোঁজা। তবে এবারের ফলাফল দুপক্ষরি একি হল।
মেজাজ খারপ করে রাত ২টায় ঘুমাতে গেলাম, এর মাঝে মেঘের কাছে জেনে নিলাম ভুলে জিনিসগুলির সাথে মোবাইলটাও চলে গেলকিনা। সকালে উঠে মোটামোটি ঘরের সবার সাথে চিল্লাচিল্লি করলাম ঘরের ভিতর থেকে কি করে একটা জিনিস হারাল এই জন্য। এরপর জানতে পারলাম আমার জন্মের সময় থেকে থাকা এক বুয়ার নাতি এসেছিল, আর সেদিন দুপুরে সে ঘরের ভেতর এসেছিল। সেদিন সেই ছেলে আর বাবার এক বন্ধু ছাড়া আর বাইরের কেউই আসেনি। বুঝতে আর বাকি রইলনা কাজটা কে করেছে।
বুয়াকে কিছু বলতে পারলামনা, হাজার হোক এত পুরানো আর তাছাড়া কিছুদিন আগেই তার হার্ট এ্যাটাক হয়েছিল। এসব কথা বললে যদি আবার কিছু হয়ে যায়। "শ"কে জানানোর পর থেকেই তো ক্ষেপে আছে আর বলছে যেভাবেই হোক সেই ছেলেকে খবর দিয়ে আনাতে, মোবইল কি করেছে তা সে ভয়েই বলে দিবে। আমার এই ঘটনা মেঘ, জল সহ যত পরিচিত আছে সবাইকে বলছি।
গত দুদিন আগে বাবা মা চিটাগং গেল তাদের এক নাতনির বিয়ে খেতে, ওয়াফি অসুস্থ থাকায় আমাদের আর যাওয়া হলনা।
আজকে দুপুরে তারা দুজন ঢাকায় ফিরল। এই কথা সেই কথার পর হঠাৎ আম্মা জানালো. "তোমার মোবাইলের খোজ পাওয়া গেছে"। শুনেই তো আমি অবাক, কোথায়, কিভাবে!!! জানতে পারলাম চিটাগং যখন গেছে তখন সেই ফ্রেন্ডের ওয়াইফ ফোন করে আব্বুর কাছে জানতে চেয়েছেন, নিলের কোন মোবাইল হারানো গেছে কিনা, কারন ওনার হাসবেন্ডের কাছে নিলের নাম লিখা একটা মোবাইল। আব্বু তো যা বুঝার বুঝে গেছে, কিন্তু না বুঝতে দিয়ে জানালো যে, "নিল আমাকে কিছু বলেনি। আমি জেনে জানাব"।
এদিকে আব্বু মাকে বলেছে, এই কথা যেন আমাকে বা আর কাউকে না জানানো হয়। যতই হোক তার বন্ধু বলে কথা।
খুব কষ্ট পেলাম এটা জেনে। কষ্ট পেলাম বুয়ার নাতিকে চোর বলে চিহ্নিত করার জন্য, কষ্ট পাচ্ছি বাবার বন্ধুর সম্মানহানি যাতে নাহয় সেজন্য ঘটনা চেপে রাখার জন্য। আমরা এমন কেন? কেন একটা গরীব কারো দিকে খুব সহজেই আঙ্গুল তুলতে পারি, আর বাবার বন্ধু বলে কিছু বলতে পারিনা।
কেন বলতে পারছিনা যে "আমরা জানি আপনিই চোর, আমার মোবাইল ফেরত দিন"।
আসল ছোটলোক তো এই ভদ্রবেশিরাই, সাথে আমিও।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।