আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

আত্ন কথন



মানুষ বড়ো অদ্ভুত প্রানী। মানুষ কোনো দিন দেখেনি এমন দৃশ্যও কল্পনা করলে স্পষ্ট দেখতে পায়। যেমন আমার কথাই ধরা যাক-হিমি,হিমি কে আমি কোনো দিনও দেখিনি। কিন্তু চোখ বন্ধ করলেই হিমি কে আমি দেখতে পাই। আহ্ কি মায়াময় একটি মুখ।

তার কপোলের বিন্দু বিন্দু ঘাম ও যেন দেখতে পাই। মেয়েটার আবার খুব রাগ কিন্তু হাসিটা দারুন। মন ভরে যায়। আমি ঠিক করেছি এই মেয়েটাকেই বিয়ে করবো। আমি আজ দুপুরে স্বপ্নে দেখলাম-হিমি আর আমি পাহাড়ের কাছে একটা জায়গায় চায়ের কাপ হাতে নিয়ে বসে আছি।

হিমি পড়েছে নীল শাড়ি। ছোট ছোট সাদা ফুলে ভরা। পাহাড়টা কি সবুজ। আর আকাশ গাঁঢ়ো নীল। আমাদের সামনে চানাচুর।

চায়ের সঙ্গে চানাচুর খাচ্ছি। স্বপ্নে এই সব ব্যাপার কত সহজ ভাবেই না ঘটে যায়। এখন অনেক রাত। আমি মনে হয় পাগল হয়ে যাচ্ছি। আমি এই সব আবোল তাবোল কেন লিখছি?যা যা লিখি,আমি নিজেই তা প্রত্যক্ষ করি।

মাঝে মাঝে সব কিছুই আমার অবিশ্বাস্য মনে হয়। মনে হয় আমার মাথায় দোষ আছে। জরের ঘোরে এই সব ঘটছে। কিন্তু আমি ভালো করেই জানি আমার মস্তিস্ক বিকৃ্তি ঘটেনি। তবে মনের মধ্যে বারবার হতাশা বোধ জাগে।

ইচ্ছা করে মরে যাই। ঘুমোতে পারি না,খেতে পারি না,প্রিয় মানুষের সাথে কথা বলতে পারি না। এই জাতীয় অস্থিরতা ও হতাশা থেকে মুক্তি পাবার জন্য আমি লিখতে পছন্দ করি,এই আশায় যে, কেউ একদিন আমার লেখা পড়ে সব কিছুই ব্যাখা করবে। এমন অনেক হয়েছে,আজ যা রহস্য,কাল তা সহজ স্বাভাবিক সত্য। আমার রাতে ঘুম আসে না।

ব্যালকনিতে চেয়ার পেতে,হাতে বই নিয়ে বসে থাকি। আমি খুব বুজতে পারি হিমি'র জন্য বিষন্ন লাগে। মাথা দপদপ করতে থাকে। আমার নিজের উপর'ই খুব রাগ হয়। জানুয়ারী মাসের রাত।

কনকন করে ঠান্ডা বাতাস গায়ে লাগছে। আজ কি সুন্দর জ্যোস্না হয়েছে। এতো পরিস্কার আলো যে মনে হয়-অনায়াসে এই আলোতেই বই পড়া যাবে। হঠাৎ হালকা মিষ্টি একটা গন্ধ নাকে আসে। মনে হচ্ছে হাজার হাজার ঝিঁ ঝিঁ পোকা কানের কাছে মিষ্টি একটা সুর গুন গুন করছে।

আমি কি পাগল হয়ে যাচ্ছি?ইদানিং এই জাতীয় চিন্তা আমাকে আচ্ছন্ন করে ফেলে। হয়তো আর কিছু দিন এরকম থাকলে সত্যিই পাগল হয়ে যাব। ঠিক এরকম অবস্থায় কে যেন মিষ্টি করে বলে-একটু ধৈর্য্য ধরো,সব ঠিক হয়ে যাবে,আর অল্প সময় বাকি। স্পষ্ট গলার স্বর,নিঁখুত উচ্চারন। আমার শুনতে এবং বুঝতে একটুও অসুবিধা হয় না।

আমার মনের সমস্ত শক্তি দিয়ে চেঁচিয়ে জিজ্ঞেস করি-তুমি কে?গলা দিয়ে আমার কোনো শব্দ বের হয় না। তবুও আমি বুঝতে পারি,কেউ একজন আমাকে স্বান্তনা দেয়,সেই নরম মিষ্টি গলায়। আমার প্রচন্ড ক্ষিদে পেয়েছে। সমস্ত চিন্তা বাদ দিয়ে এখন আমাকে আচ্ছন্ন করে রেখেছে ক্ষুধা। ইদানিং মনে হচ্ছে আমার মস্তিস্কে কোনও অংশ ঠিক মতো কাজ করছেনা।

অকেজো হয়ে গেছে। অবাস্তব সব কাহিনী ঘটছে। হঠাৎ তাকিয়ে দেখি হিমি,আমার প্রেমিকা। হাতে চায়ের কাপ নিয়ে হাসিমুখে দাঁড়িয়ে আছে। বাইরে কখন থেকে বৃষ্টি পড়ছে।

আমি শুয়ে আছি আমার পরিচিত বিছানায়। আমার ঘর অগোছালো পড়ে আছে। ছোট বেলা থেকেই আমার ঘর অগোছালো। ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা বই পএের জন্যই আরো বেশীই গোছালো লাগে। আগে মা মাঝে মাঝে গুছিয়ে দিতেন।

হিমি চায়ের কাপ হাতে অদ্ভুত ভাবে তাকিয়ে থাকে,আমার দিকে। এই মেয়েটির মুখের দিকে তাকিয়ে হাজার বছর পার করে দেয়া যাবে। সেই চোখের দিকে তাকিয়ে হঠাৎ করেই মনে হলো- এই মেয়েটি অন্য কেউ,এ হিমি নয়। যদিও সেই চোখ,সেই ঢেউ খেলানো বাদামী চুল,সেই তাকানো। আমি ভয়ে কাতর গলায় বললাম-তুমি কে? এই তুমি কে?দেখতে হিমি'র মতো হলেও তুমি হিমি নও।

ভয় পেয়ে আমি মেয়েটির হাত ধরলাম। আর কি আশ্চর্য-মেয়েটি কে আমার খুব আপনজন বলে মনে হলো। হিমি'র মতো দেখতে মেয়েটি বললো- আমাকে তুমি হিমি বলেই ডাকবে। আমার ইচ্ছা করে আমি যা বুঝি না হিমি'র কাছ থেকে বুঝে নিই। আমি চায়ে চুমুক দেই আর আঁড়চোখে তাকিয়ে দেখি হিমি অল্প অল্প হাসছে।

আমার এই মুহূর্তে মেয়েটিকে সত্যি সত্যি হিমি বলেই ভাবতে ইচ্ছা করছে। আমার সবসময়ের সঙ্গী এই মেয়েটি,যার নাম হিমি। দীর্ঘ দিনের পরিচয়ে আমাদের খুব ঘনিষ্ঠতা তৈরী হয়েছে। মাঝে মাঝে আমার মনে হয়-হিমি আমার কল্পনা নয়;সত্যি সত্যি বাস্তব। এক দিন খুব সাহস করে চুমু দিলাম হিমি'র গালে।

সে খুবই অবাক হয়ে গেলো। আমি খুব বুজতে পারি হিমি কতটা আন্তরিক!হিমি আমার পাশে নেই একথা আমি ভাবতেই পারি না। আমার সব ভালোবাসা নিয়ে হাত বাড়িয়ে দিয়েছি হিমি'র দিকে। হিমি'র উপর আমার খুব ভরসা করতে ইচ্ছা করে। আমি কি সব হাবি-জাবি লিখছি,নিজেই বিন্দু মাএ বুজতে পারছি না।

এই রকম মুহুর্তেই হিমিকে আমার বেশী প্রয়োজন হয়ে পড়ে। সে সব কিছু আমাকে বুজিয়ে বলবে। আমার মাথায় তার মায়াময় হাত রাখবে। এখনো প্রতিদিন উদভ্রান্তের মতো রাস্তায় রাস্তায় হাঁটতে হাঁটতে একসময় পথ হারিয়ে ফেলি। আমার কিছু ভালো লাগে না।

সব কিছুই রহস্যময় মনে হয়। আমি হিমিকে চাই। এখন নিজেকে ছেড়ে দিয়েছি ভাগ্যের হাতে। খুব ক্লান্তি লাগে। শেষ বিকেলের লালচে আলো গাছের পাতায় চিকচিক করে।

আমি ভেজা চোখে তাকিয়ে থাকি। সন্ধ্যায় আমার বুকের ভিতর হাহাকার করে উঠে। অচেনা অজানা এক গ্রহের সব শূন্যতা আমার বুকে ভর করে।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।