আমি তোমাকেই বলে দেব, কি যে একা দীর্ঘ রাত আমি হেটে গেছি বিরান পথে! আমি তোমাকেই বলে দেব, সেই ভুলে ভরা গল্প; কড়া নেড়ে গেছি ভুল দরজায়!
আমরা বিশ্ববিদ্যালয়ের ৪৫ জন বন্ধু মিলে স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন তারুণ্য প্রতিষ্ঠা করি। গত কয়েকদিন ধরে তারুণ্য'এর শীত বস্ত্র বিতরণ চলছিল, গতকাল ক্লোজ করলাম। এই প্রোগ্রামে বেশ কিছু অভিজ্ঞতা হল, আপনাদের সাথে শেয়ার করার মত।
গত ১৭ তারিখ প্রথম ফিণ্ডে গিয়েছিলাম, স্থান কুষ্টিয়া বাস টার্মিনাল সংলঙ্গ বসতি। সেখানে বেশ কিছু ঝুপড়ি জাতীয় ঘর আছে।
ঘরগুলো পুরো পলিথিন দিয়ে তৈরি। এই শৈত প্রবাহের বাতাস কিভাবে আটকায় সেই সব ঘর বুঝতে পারছিলাম না! ঝুপড়ি এলাকার ছোট বাচ্চাগুলি ঠান্ডায় কাঁপছিল খুব খারাপ অবস্থা। তাদের অধিকাংশ পেশায় টোকাই, বাচ্চাগুলো কখনও স্কুলের কথা ভাবে না! এই বসতিতে শীতবস্ত্র বিতরণ শেষে তাদের এক জায়গায় দাড়াতে বললাম, ফটো সেশন ওমা দেখি যাদের শীত বস্ত্র দিলাম তাদের মাঝে একজন বেশ দামি ক্যামেরা সেট মোবাইল বের করে আমাদের ছবি তুলছে!!! তাদের শীতের পোশাক নেই খাবার নেই অথচ ক্যামেরা মোবাইল ! কিভাবে তার কাছে সেই মোবাইল এসেছে আমি জানি না, কিন্তু যানতে খুব ইচ্ছে হচ্ছিল। হয়ত প্রশ্নও করতাম কিন্তু . . . আমার মোবাইলে হঠাৎ কল। যাই হোক পকেট থেকে নোকিয়া ১২০৯ সেট বের করে কথা বলার পর, লজ্জায় আর ঐ লোককে প্রশ্ন না করেই ওখান থেকে ব্যাক এলাম।
এর পরের স্থান কুষ্টিয়া কোর্টপাড়া রেল স্টেশান সংলঙ্গ বসতি। এখানে এসে পূর্বের মত কোন অভিজ্ঞতা হয়নি। এখানের মানুষগুলো আসলেই খুব গরীব ছিল। খুব খারাপ লাগছিল তাদের শীত বস্ত্রের জন্য হাহাকার দেখে।
সন্ধার বেশ পরে আমরা কুষ্টিয়া কোর্ট পাড়া রেল স্টেশানে প্রবেশ করলাম।
লক্ষ্য ছিন্নমূল জনগোষ্টি, যারা স্টেশানেই ঘুমিয়ে পড়ে। এখানে এসে দেখলাম অনেকেই চটের বস্তা গায়ে জড়িয়ে ঘুমিয়ে আছে। তাদের না জাগিয়ে খুব নীরবে কাজ সেরে চলে আসতাম। কিন্তু এক পঙ্গু লোককে বস্ত্র বিতরনের সময় স্টেশন মাস্টার এগিয়ে এষে বললেন,"বাবা ইনি একজন মুক্তিযোদ্ধা। " আমি অবাক হয়ে স্টেশান মাস্টারের দিকে তাকালাম, উনি আর কিছু না বলে মাথা নিচু করে চলে গেলেন।
আমি ভাল করে খেয়াল করলাম অন্যান্য ছিন্নমূলের সাথে তাঁর কোন পার্থক্য নেই! শুধু পাশে ভাঁজ করা হুইল চেয়ারে লিখা 'বীর মুক্তি . . .' হয়ত বীর মুক্তিযোদ্ধা টাইপের কিছু একটা লিখা থাকবে, ভাঁজ থাকার কারনে পুরোটা দেখা যাচ্ছিল না।
এই বীর যোদ্ধার এখনও যুদ্ধো শেষ হয়নি। আমার সাথে যারা এসেছিল তারা সবাই নীরবে তাঁকে শীতবস্ত্র দিয়ে চলে গেল। আমিও ওদের সাথে চলে যাচ্ছিলাম। হঠাৎ কি মনে হল ঘুরে গিয়ে প্রশ্ন করলাম,''আপনি এই দেশকে নিয়ে কি স্বপ্ন দেখেন?" উনি আমার দিকে অদ্ভুত দৃষ্টিতে তাকালেন।
ভাবলাম উত্তর দিবেন না। কিন্তু শেষ পর্যন্ত উনি বললেন,"যুদ্ধ করে মরতে চাই!" আমি তাকে আর কোন প্রশ্ন করিনি। যাঁদের নিয়ে আমাদের গর্ব করার কথা আজ তাঁরা এভাবেই আমাদের লজ্জা ঢাকতে নিজেদের লুকিয়ে রাখেন। স্বপ্ন দেখেন যুদ্ধ করে মরতে। তিনি মারা যাবেন, অবস্যই যুদ্ধ করতে করতে মারা যাবেন।
কিন্তু বীর যোদ্ধার মত মরবেন না, মরবেন আস্তাকূড়ে এক বসতিতে জীবণযুদ্ধে পরাজীত সৈনিক হয়ে। এই লজ্জার দায়ভার কে নেবে . . .
পোস্ট দেখি সিরিয়াস পর্যায়ে চলে যাচ্ছে। যাই হোক গত কাল আমাদের প্রোগ্রামের সমাপনী ঘোষণা করা। সমাপনী দিনে আমরা ক্যাম্পাস এরিয়ায় শীতবস্ত্র বিতরণ করলাম, সংগেছিলেন প্রক্টর স্যার ও আমাদের উপদেষ্টা মন্ডলী। আমাদের কার্যক্রমকে সাধু বাদ দিলেন।
ভাল লাগল একটি ভাল কাজের অংশ হতে পেরে। গত কালের কিছু ছবি ছাড়া বাকি ছবিগুলো আমার কাছে নেই, তাই গত কালের ছবি আপলোড করলাম। . . .
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।