আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

প্রতারক নারগিস ও জোবায়েরের বিলাসী জীবন

পরে বলবো

মুসাফির টাওয়ারে নারগিস জীবন ও জোবায়ারের ফ্ল্যাটে দ্বিতীয়বারের মতো অভিযান পুলিশের। আর তাতেই চক্ষু চড়কগাছ সংশ্লিষ্টদের। তদবিরও কি একটি স্মার্ট পেশা! অন্তত নারগিস আর জোবায়ের এটিকে রীতিমতো শিল্পে(?) পরিণত করার চেষ্টা করেছে। তাদের ফ্ল্যাটে পা দিলে যে কারোরই চোখ বিস্ময়ে হতবাক হবে। কি নেই সেখানে? দেশের প্রভাবশালীদের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক রয়েছে এটি বোঝাতে দেয়ালের চারদিকেই প্রভাবশালীদের সঙ্গে তাদের ছবি।

ডায়েরি পেয়েছে পুলিশ একটি। তাতেও তদবিরের ফিরিস্তি। একদিকে পদস্থ ব্যক্তিদের নাম-ঠিকানা। অন্যদিকে তদবিরের ওয়েটিংলিস্ট। স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়সহ বিভিন্ন সরকারি অফিসের বেশকিছু গুরুত্বপূর্ণ ফাইল জব্দ করেছে পুলিশ।

একই সঙ্গে জব্দ করা হয়েছে তার ব্যক্তিগত ডায়েরি, বিভিন্ন জনের সঙ্গে তোলা ছবি এবং গুরুত্বপূর্ণ কিছু মোবাইল ও ফোন নম্বর। ডায়েরিতে যতো তদবির নারগিস জীবনের ডায়েরির প্রতিটি পৃষ্ঠায় তদবিরের চিহ্ন। তাতে লেখা ক্লায়েন্টদের নাম-ঠিকানা। কবে কোথায় কার পরীক্ষা। কবে কখন কার তদবির করতে হবে, কোন কর্মকর্তার সঙ্গে কখন তার বৈঠক হবে এর ফিরিস্তিও রয়েছে ডায়েরিতে।

যেমনÑ পল্লী উন্নয়ন বোর্ড। নাম: প্রবীর কীর্ত্তনীয়া। পিতা: রাজেন্দ্র কীর্ত্তনীয়া। জেলা: পিরোজপুর বিষয়: সহকারী পল্লী উন্নয়ন কর্মকর্তা এআরডিও। লিখিত পরীক্ষা ০২-১০-২০০৯।

শুক্রবার সকাল ১০টা। রোল: ৩৭১১২৯৬৩। মো: ওয়ালিউল ইসলাম। পিতা সাহাদাত হোসেন। গ্রাম: শৈলপাড়া।

পোস্ট ও উপজেলা: ঈশ্বরদী পাবনা। লিখিত পরীক্ষা ২১-০৮-০৯। বিষয়: উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা। মৌখিক পরীক্ষা ০৩-১১-২০০৯। প্রার্থীর নাম: মহব্বত আলী খোকন।

পিতা মো. নূরুল ইসলাম। পদ: বেঞ্চ ক্লার্ক। রোল: ৫০০৫২৯। জেলা যাশোর। ভূমি রেকর্ড ও জরিপ অধিদপ্তর তেজগাঁও ঢাকা।

এছাড়াও তার ডায়েরিতে আছে সচিব, উপসচিব থেকে শুরু করে বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের উচ্চপদস্থ কর্মকর্তাদের মোবাইল নম্বর। উপসচিব পরিচয় দেয়া পেশাদার প্রতারক নারগিস জীবন তদবির বাণিজ্য এতোটাই জমজমাট ডায়েরিতে লিখে রেখে ক্লায়েন্ট ম্যানেজ করতে হতো তাকে। প্রতারণার অভিযোগে চাকরিচ্যুতি এলজিইডিতে এমএলএসএস হিসেবে কর্মরত ছিল নারগিস। কিন্তু সেখানেও প্রতারণার অভিযোগ। চাকরিচ্যুত ২০০১ সালে।

স্থানীয় সরকার বিভাগের সচিবের কাছে প্রতারণার অভিযোগ করেছিলেন বরুড়া পৌরবাজারের ডিলার আব্দুল লতিফ। তার অভিযোগ ছিল, নারগিসের সঙ্গে স্থানীয় সরকার বিভাগে পরিচয় হয়। সে নিজেকে প্রশাসনিক কর্মকর্তা পরিচয় দেয় এবং আমাকে তার অফিসে দেখা করতে বলে। পরে গম বরাদ্দের কথা বলে ৫০ হাজার টাকা চায়। কিন্তু গম বরাদ্দ না দিয়ে টালবাহানা শুরু করলে খোঁজ নিয়ে জানতে পারি নারগিস জীবন প্রশাসনিক কর্মকর্তা নয়।

সে এলজিইডি’র অফিস সহকারী কাম মুদ্রাক্ষরিক। প্রেষণে স্থানীয় সরকার বিভাগে নিয়োজিত। স্থানীয় সরকার বিভাগের সচিব বরাবর ২০০১-এর ৫ আগস্ট আরেকটি অভিযোগ করেন মতিঝিল এজিবি কলোনির বি-১২৬, সি ঠিকানার কে এম আহমেদ করিম। তার অভিযোগ ছিল, নারগিস এলজিইডি’র প্রধান প্রকৌশলীর আত্মীয় এই পরিচয়ে আমার সঙ্গে পরিচিত হয়। আমার ছোট ভাইয়ের জন্য একটা চাকরির ব্যবস্থা করে দিতে বললে, সে জানায় এটা তার জন্য কোন ব্যাপারই না।

পরে একদিন ৫০ হাজার টাকা দিয়ে নিয়োগপত্র নিয়ে যেতে বলে। তার কথামতো টাকা দেয়া হয়। কিন্তু ভাইয়ের চাকরি আর হয়নি। সে টাকাও ফেরত দিচ্ছে না। এভাবে একের পর এক অভিযোগ জমা হতে থাকলে এবং এর সত্যতা পাওয়া গেলে এলজিইডি থেকে চাকরিচ্যুত হয় নারগিস।

থানায় যার যে অভিযোগ প্রতারক প্রেমিক-প্রেমিকা নারগিস জীবন এবং জোবায়ের গ্রেফতার গতকাল বিকালেই দিনের শেষে’তে এ খবর প্রকাশিত হলে তোলপাড় হয়। রাতেই মহানগর গোয়েন্দা কার্যালয়ের সামনে ভিড় করতে থাকেন ভুক্তভোগীরা। তারা তাদের দৃষ্টান্তমূলক বিচার দাবি করেন। পরে পুলিশের সহকারী কমিশনার মতিয়ার রহমান ঢাকা মহানগর পুলিশ কমিশনারের সঙ্গে এ নিয়ে কথা বলেন। কমিশনার ভুক্তভোগীদের সংশ্লিষ্ট থানায় মামলা দায়েরের নির্দেশ দেন।

রাতেই রমনা থানায় মামলা করতে যান জাহিদ হোসেন। তার অভিযোগ, ব্যাংকে চাকরির জন্য ১ লাখ ১০ হাজার টাকা দিয়েছেন। ব্যবসায়ী আকবর হোসেন মঞ্জুর অভিযোগ, নটর ডেম কলেজে ভর্তির জন্য দিয়েছেন ৫০ হাজার। ব্যবসায়ী আনসার আল আজাদ সরকারি চাল কিনতে ৫ লাখ টাকা দিয়েছেন। ব্যবসায়ী হারুনের অভিযোগ, বদলির তদবিরে ১ লাখ টাকা দিয়েছেন তিনি।

ওদিকে পুলিশের সহকারী কমিশনার মতিয়ার রহমান বলেছেন, তার কাছে শতাধিক ভুক্তভোগী ফোন করেছেন। তাদের সবাইকে মামলা দায়ের করতে পরামর্শ দেয়া হয়েছে। শুক্রবার রাত ১টা ১০ মিনিটে অভিযান চালিয়ে ৯০ কাকরাইল মুসাফির টাওয়ার, ফ্ল্যাট নং ৭/ডি থেকে পেশাদার প্রতারক চক্রের হোতা জোবায়ের সাকির ওরফে মুক্ত (৩৩) ও নারগিস জীবন (৩৮)-কে গ্রেফতার করে পুলিশ। কাজের মেয়েদের কাছ থেকে ম্যাডাম ডাক শুনতেই পছন্দ তার এলজিইডিতে এমএলএসএস থাকা অবস্থায় মাঝেমধ্যে প্রতারণা করেছে নারগিস। তবে চাকরিচ্যুতির পর এটাকেই পেশা হিসেবে বেছে নেয় সে।

আর তখনই সঙ্গী হিসেবে তার সঙ্গে যুক্ত হয় জোবায়ের সাকির ওরফে মুক্ত। এরপর নতুন জীবন শুরু করে নারগিস আর জোবায়ের। তদবির আর প্রতারণায় কাঁড়ি কাঁড়ি অর্থ আয়। আর সে অর্থে প্রেমিক-প্রেমিকার বিলাসবহুল জীবন। তদবিরে স্বার্থসিদ্ধি করা গেলে আয় হয়।

কিন্তু প্রতারণার বিপরীত প্রতিক্রিয়াও আছে। প্রতারিতরা যখন নারগিস আর জোবায়েরের কাণ্ডকীর্তি ধরে ফেলতো তখন তারা কি করতো প্রশ্ন আছে এ নিয়েও। জবাব দিয়েছে তারা। একেক জনের কাছ থেকে টাকা-পয়সা হাতিয়ে নেয়ার কাজ হয়ে গেলে তারা কিছুদিন গা-ঢাকা দিতো। এরপর ফাঁক বুঝে আবার শুরু করতো ব্যবসা।

১১ লাখ টাকায় কেনা নতুন মডেলের গাড়িতেই তারা চলাফেরা করতো। তবে বাসার কাজের মেয়েদের কাছ থেকে একটি ডাক শুনতে তার খুব পছন্দ ছিল। আর সেটি হলো ম্যাডাম। সুত্র : দিনের শেষে

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।