পেছনের সমান্তরাল পথটুকুও আজ আর ফিরে দেখি না..।
অনেক্ষণ ধরে বসে আছি চুপচাপ। একটা সময় বিরক্ত হয়ে ল্যাপটপ টা বিছানা থেকে আমার কোলের ওপর উঠিয়ে নিলাম। আর সাথে সাথেই ল্যাপটপ স্ক্রিনের ডানদিকের নিচটায় যেখানে এতক্ষণ চার্জিংয়ের সাইন দেখাচ্ছিল সেটা চলে গেল। কিছুদিন ধরেই এই ব্যাপারটা দেখছি।
যতক্ষণ বিছানায় বা টেবিলে বা যে কোন যায়গায় এই ল্যাপটপ রাখা থাকে এতে ঠিকমতই চার্জ হয় কিন্তু যেই মাত্র আমি এটা পায়ের ওপর রেখে বা কোলার ওপর নিয়ে কিছু একটা করতে চাই এর চার্জিং অপশন আপনাআপনি বন্ধ হয়ে যায়।
আজ পর্যন্ত এর কোন ব্যখ্যা আমি ঠিক বের করতে পারিনি। বা এই বস্তুটির সাথে আমার কোন রকমের ঠান্ডা বোবা লড়াই চলার কোন সম্ভাবনাও আমি এখনো খুজে পেলাম না!
কে জানে আসলে ঘটনা টা কি.....
বাইরে তুষার পড়ছে.... সাদা সাদা পেজা তুলোর মত বাতাসে উড়তে উড়তে ওরা এসে বাড়ি খাচ্ছে আমার জানালার কাঁচে। একমনে দেখতে দেখতে আমি এতটাই পুলকিত হয়ে যাই মাঝে মাঝে যে জানালাটা খুলে হাত বাড়িয়ে দেই সেই পেজা তুলোয় হাত ভেজাতে। তারপর যখন একসময় ঠান্ডায় হাত ব্যাথা শুরু করে বুঝতে পারি এই তুলোর সাথে সন্ধি করাটা ঠিক বৃষ্টির সাথে বন্ধুত্ব করার মত ওতটা সোজা না।
তবুও আমার তুষার ভালো লাগে। ভালো লাগে যখন দেখি যতদূর চোখ যায় ততদূরের সবই যেন স্তব্ধ হয়ে আছে অদ্ভুত এক সাদার মায়ায়।
যে দিকে তাকাই সবকিছুতেই একটা নরম সাদার চাদরের আস্তর,,
এই ব্যাপারটার চেয়ে,, সাদার চাদরে ঢেকে যাওয়ায় আসপাশের চোখে পরা প্রতিটি চঞ্চল দৃশ্যে যে একটা স্তব্ধতা তৈরি হয় এই ব্যাপারটাই বেশি ভালো লাগে আমার।
সব যেন থেমে..... এহ হে,,
একটা ফোন আসছে! ওহ না ওটা মিসকল ছিল!! এর মানে হল মিসকল কারিকে ফোন ব্যাক করতে হবে!!!
আচ্ছা এটা না হয়ে ত ব্যাপারটা এমনও হতে পারত যে যখনই আমরা কাউকে মিসকল দেব এর মানে হচ্ছে আমরা সেই মানুষটাকে মিস করছি। এবং তাকে মিস করাটা জানাতে একটা দুই সেকেন্ড সময়ের ঝংকার....
যখন তুমি সামনে এসে দাড়াবে
আমার আঙ্গিনায় এত দ্যূতি, ফুলের সুবাস,,
শ্রাবণ ঝড়বে,, বর্ষারই ধারায়....
বর্ষা ঝড়বে অঝরে আমার সুখে
যখন এসে দাড়াবে তুমি সামনে।
দুজনে যেই তীথে হব এককাকার....
ভরা চাঁদের রাতগুলোয়
তোমার হাতেই যদি আমার পৃথিবী দিয়ে দেই,
চোখের পাতার তারাগুলো
জলজল করে তোমায় ভেবে যখন,,
তুমি এসে দাড়িও অঝরে ঝরা বর্ষায়
ঘুমের ঘোরে দেখা পৃথিবীটা আমার
হবে আশ্চর্য সুন্দর সেদিন,,
বর্ষা ঝরবে অঝরে আমার সুখে
যখন এসে দাড়াবে তুমি সামনে
দুজনে যেই তীথে হব একাকার.....
বাহ্ কথাগুলো ত সুন্দর। কথাগুলো কিন্তু মোটেও আমার না। কথাগুলো ধার করা। আসলে এটা একটা গান। মানে অন্য ভাষার একটা গান যেটাকে বাঙলা করার একটা হাস্যকর চেষ্টা আমি করেছি।
একটা সময়ে এই গানটা আমি অসংখ্য বারের চেয়েও বেসি বার শুনেছিলাম। সময়টা বোধহয় গত বছরের শীতেই ছিলো।
এটা বলতে পারছি কারণ ঐ সময়ের একটা ঘটনা আমার এখনো মনে আছে। হয়েছিল কি,, একদিন প্রচন্ড শীতের এমনই তুষারের স্তব্ধ বিভ্রমের মধ্য দিয়ে আমি হাটছিলাম। দু কানে সবসময়ের মতই গান গুজে হাটছিলাম আমি।
আসপাশের সমস্ত অস্থিরতাকে শব্দে বন্দি করে গায়ক ভদ্রলোক উদার হয়ে আমাকে যেন কান্নার সুজোগ করে দিচ্ছিলেন এই গানটা গেয়ে। আমি গানের মগ্নতায় হাতের উষ্ণতার আবরণটুকু ফেলে দিয়ে কি কি যেন লেখার চেষ্টা করছিলাম কখনো গাড়ির কাঁচে জমে থাকা তুষারের স্তুপে, কখনোবা রাস্তার ধারের বরফের পাহার কেঁটে। এমন আবোল তাবোল লিখতে লিখতেই আমি আমার বাড়ির দরজায় এসে যখন দাড়ালাম,,
মেইন দরজার কী হোলে চাবি ঢুকিয়ে আমি আর চাবিটাকে ঘুরাতে পারলাম না কোনভাবেই। আসলে প্রচন্ড ঠান্ডায় গ্লাভ্স বিহীন আমার দুহাতই জমে গিয়েছিল। রিপিড অপশনের বদৌলতে তখনও গায়ক ভদ্রলোক একই গান গেয়েই যাচ্ছেন আমার কানে.....
আমার কি যে হল হঠাৎ এত,, এত বেশি অসহায় লাগলো নিজের যে আমি কাঁদতে শুরু করলাম।
আমি হাতে চাঁবি নিয়ে আমার বাড়ির মেইন গেটের সামনে দাড়িয়ে ব্যাকুল হয়ে কাঁদতে থাকলাম যেন সত্যিই গানের কথামত কেউ একজনের জন্যে আমি অপেক্ষায় আছি।
যেন সেই কেউ একজন আসলে অঝরে বর্ষা ঝরবে আমার সুখে.... যেন সেই কেউ একজন আসলে আমার আঙ্গিনা হবে দ্যূতিময়, ভাসবে ফুলের সুবাস.....
তারপরের ঘটনাটা অবশ্য এতটা রোমান্টিক না যতটা হওয়া সম্ভব ছিল কোন নাটক বা গল্পে।
যেমন, সেই সময় কোন এক টল, ডার্ক, হ্যান্ডসাম যুবক আমার বাড়ি পার হবার সময় দেখল ঠান্ডায় গোলাপী হয়ে যাওয়া অসম্ভব মায়াময় চেহারার এক তরুনী ব্যাকুল হয়ে কেঁদে যাচ্ছে অজানা কোন কারণে। এবং চারপাশের সমস্ত সাদার স্তব্ধতাকে কাঁটিয়ে যুবক সেই গোলাপী তরুনীর প্রেমে পড়ে গেল!!!
........................যেটা বাস্তবে হল সেটা হচ্ছে আমার বিল্ডিংএর আমার উপর তলায় থাকা এক ইরানী বুড়ো এসে দেখল যে আমি বেকুবের মত কোন কারণ ছাড়াই ভ্যাঁ ভ্যাঁ করে কাঁদছি যাতে করে তার ধারণা হল আমি দরজার চাঁবি হারায় ফেলসি এবং সে বাহদুরের মত দরজা খুলে দিয়ে বলল যে কান্নার কিছু নেই,, ফ্ল্যাটের চাবিও হারায় থাকলে তুমি আমার ফ্ল্যাটে কিছুক্ষণ বসতে পার!! আমি তার কথায় এতটাই বিব্রত হলাম যে কিছুই বলার খুজে না পেয়ে অসহায় চোখে তাকায় থাকলাম। আচ্ছা গানের নামটা কি আমার দেয়া উচিত??
মানে যেই গান নিয়ে এত কান্ড সেই গানটা কোন গান সেটাও জানা গেলে বোঝা যাবে আমি ঠিক কত বড় মাপের বেকুব এই আর কি!!
হুমম..... ঠিকাছে বুঝা গেলে যাবে, কি আর করা
আওগে যাব তুম হো সাজনা,, আঙ্গনা, ফুল খিলেঙ্গে...
একটা গল্প লেখা শুরুর করার কথা ভাবছি!!
কি নিয়ে লিখব সেটা এখনো যদিও ঠিক হয়নি তবে বাকি সব মোটামুটি ঠিক।
যেমন, গল্পের নায়ক কে হবে বা সে কি করবে, তার চিন্তা করাটা কেমন ধারায় চলবে এগুলো সব ঠিক।
কি নিয়ে গল্পটা হবে এটা ঠিক না করতে পারলেও কিভাবে যেন গল্পের শুরু করে ফেলেছি আমি। যেমন, এই মুহূর্তে গল্পের নায়ক ধরা যাক তার নাম সাথি, সে একটা কম্বলের ভেতর থেকে মাথাকে অর্ধেক বের করে খুবি হতাশ চোখে রহিমা বুয়ার দিকে তাকিয়ে আছে।
রহিমা বুয়া হল এই গল্পে কাজের বুয়া যে সাথীদের বাড়িতে কাজ করে অনেক বছর হল,, ধরলাম ১০ বছর ধরে। ত সাথী রহিমা বুয়ার দিকে হতাশ চোখে তাকায় থাকার কারণ হল রহিমা বুয়া যার কিনা একটা চোখ বাল্যকালে পাখি ঠোকর দিয়ে উঠায় নেয়ার কারণে উনি একচোখে অন্ধ তিনি আজকাল কানে কম শুনা শুরু করেছেন।
সাথী এক কাপ চায়ের কথা গত আধা ঘন্টা ধরে চিৎকার করে বারবার বললেও রহিমা বুয়ার দিক থেকে এর ফলাফল পাওয়ার কোনরকম আশা দেখা যায় নি।
ডাকতে ডাকতে যখন চা খাওয়ার ইচ্ছেটা প্রায় মরে যাচ্ছিলো তখন রহিমা বুয়া দরজায় দাড়ায় বলল সাতী বাই বলে আমারে ডাকসুইন??
তোমারে এতবার ডেকে বললাম এক কাপ চায়ের কথা এখন এসে বলতেস ডাকসি কিনা, এর মানে কি!!
রহিমা খুব অবাক হয়ে চিৎকার করে উঠল ও মায়া মায়া গো!! সাতি বাই আমনে হক্কাল বেলা খোয়াব দেখসুইন!! আমনে ডাকলে আমি শুনমু না কেন.... এর পরেই সাথিকে আর কিছু বলার সুজোগ না দিয়ে রহিমা বুয়া রান্নাঘরের দিকে রওনা দিল নিজের মনে কি কি বলতে বলতে।
সাথি বিছানায় গড়াগড়ি করতে করতেই কি মনে করে মোবাইলটা হাতে নিয়ে কিছু একটা খুজতে থাকল। ও খুজছে একটা মেসেজ যেটা কালকে গভির রাতে মাতাল অবস্থায় কাউকে পাঠাতে গিয়েও পাঠানো হয়ে ওঠেনি। যেখানে লেখা ছিল...
আবার একটা নির্ঘুম রাত,
তারপর ভিতো হয়ে আব্বাকে নিয়ে যাব হসপিটাল
তারপর আতঙ্ক নিয়ে যাব কোর্ট
তারপর সন্ধ্যায় অসময় ঘুম
তারপর আবার একটা নির্ঘুম রাত
তারপর আবার আমি টাকার জন্যে দৌড়
তারপর সরকারি কোন অফিস
আর টাকা শেষ হয়ে যাওয়ার দুশ্চিন্তায় আবার একটা নির্ঘুম রাত
শরিরে লুকিয়ে থাকা কোন অসুখ, স্বপ্ন ভাঙ্গার কষ্ট
গভির রাতে নেশা, তারপর হয়ত খুব প্রিয় কাউকে এস.এম.এস
হয়ত না।
কেউ কেউ বলে আমি নাকি অপদার্থ, অমানুষ
আমি বলি আমি ত সাথি ছিলাম!!
এই গল্পটা চলতে থাকতে পারত। গল্পটার আরও অনেকগুলো চরিত্রও থাকতে পারত। এটা হয়ত হতে পারত কোন ব্যর্থ যুবকের কাহিনী কিংবা প্রচন্ড বাস্তবতায় আশা ধরে রাখার সাহসিকতার গল্প....
কিন্তু আমি ধরেই নিচ্ছি অতটা পড়ার ধৈর্য আমাদের কারোই হবে না। তাই গল্পের দৃশ্যগুলোকে আমি আমার খুব পছন্দের কোন বইয়ের পাতার ফাঁকে একটু সুগন্ধী ভিজিয়ে একটা ময়ূরের পালকের সাথে রেখে দিলাম।
ছোটবেলায় শুনেছি ময়ূরের পালক নাকি বইয়ের পাতায় রাখলে নিজে নিজেই বেড়ে ওঠে।
ভাবছি আমার গল্পটাও হয়ত আমায় না জানিয়েই পালকটার সাথে সাথে বেড়ে উঠবে ধীরে....
তারপর আমি গল্পটার কথা বেমালুম ভুলে যাব জীবনের অনুসঙ্গে।
আবার একদিন হয়ত না জেনেই বই এর ভাজ খুলে গল্পটাকে দেখে চমকে উঠব। হয়ত বা কোনদিনই আর মনে পরবে না।
ওটা থেকে যাবে আমার প্রিয় বইয়ের ভাজে অজানা হয়েই.....। ।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।