প্রথম বারের মত স্টেডিয়ামে যাওয়া হয়েছিল ক্লাস ওয়ানে থাকতে। সেদিন ছিল স্বাধীনতা দিবস। স্টেডিয়ামে স্কুলের ছাত্র-ছাত্রীদের প্যারেড আর ডিসপ্লে হবে। প্রতি বছর টিভিতে দেখি, সেবার আব্বা আমাকে আর ছোট বোনকে নিয়ে গেলেন সরাসরি স্টেডিয়ামে বসে দেখানোর জন্য। আমরাও খুব উৎসাহী হয়ে রেডি হলাম সকাল বেলা।
রিকশায় করে যেতে যেতে কত প্রশ্ন আমাদের, ওখানে ঢুকতে কি টিকিট লাগে? সব কিছু টিভির মত দেখা যায়? প্রেসিডেন্টকেও দেখা যাবে? প্রশ্ন অবশ্য ছোট বোনই বেশী করছিল, আমি শুধু শুনে যাচ্ছিলাম আব্বার উত্তরগুলো।
স্টেডিয়াম পৌঁছে দুই হাতে দুইবোনকে ধরে আব্বা ভিতরে নিয়ে গেলেন। একটা জায়গায় একটু ফাঁকা পেয়ে বসলাম। অবশ্য বেশীক্ষণ আর ফাঁকা ছিল না। দেখলাম সবাই মাঠের মাঝখানে সারিবদ্ধ হয়ে দাঁড়িয়ে আছে।
ছোট বোন একটু পর পর, কখন শুরু হবে, বলে বলে আব্বাকে অস্থির করে দিচ্ছিল। একটু পর প্রেসিডেন্ট আসলেন। বেলুন উড়ালেন, পায়রা উড়ালেন। শুরু হল মার্চপাস্ট। ভালোই লাগছিল দেখতে, তবে রোদ উঠে গেছিল অনেক, সেজন্য একটু কষ্ট হচ্ছিল।
তবে এত রোদের মধ্যে ঐ বেচারারা কিভাবে মার্চপাস্ট করছে সেটা ভেবে চুপচাপ রইলাম।
এর মধ্যে আব্বা আমাদের চুইংগাম কিনে দিয়েছেন। আমি খেয়ে টেয়ে ফেলেও দিয়েছি। ছোট বোন শুরু করেছে দুষ্টুমি। মুখ থেকে লম্বা করে টেনে বের করে, আবার ঢুকায়।
আব্বা দেখে বললেন, ছি এভাবে খায় নাকি? ছোট বোন বলে, কেন কী হয় এভাবে খেলে? আব্বা বললেন, তোর হাতের যত ময়লা সব চুইংগামে লাগিয়ে আবার মুখে দিচ্ছিস, ফেলে দে? ছোট বোন আরও কিছুক্ষণ ঐভাবে বের করে ঢুকালো, এরপর ফেলে দিল।
এক শসাওয়ালা এসে শসা বিক্রী করছিল, আব্বা আমাদের জিজ্ঞেস করলেন খাবো কি না। আমরা দুজনেই তীব্র আপত্তি জানালাম। আব্বা নিজের জন্য একটা শসা কিনলেন, কেটে কেটে লবণ মাখিয়ে দিল লোকটা। আব্বা খাওয়া শুরু করার পর আমরাও একটু একটু করে খেতে থাকলাম।
মুহূর্তেই সব শেষ। আব্বা হেসে বললেন, কি রে তোরা নাকি শসা খাবি না। এরপর আব্বা আরও শসা কিনে দিলেন আমাদের। গরমের মধ্যে খেতে খুবই মজা লাগছিল।
প্যারেড দেখতে দেখতে এক সময় বিরক্তি ধরে গেল, কখন যে ডিসপ্লে শুরু হবে।
হঠাৎ একটা ছোট খাট দুর্ঘটনা ঘটে গেল। ছোট বোনের উপর পিছন থেকে একটা লোক ধড়াম করে এসে পড়ল। আব্বা তাড়াতাড়ি ছোট বোনকে সরিয়ে নিয়েছিলেন, তারপরও সে একটু ব্যথা পেয়েছে। আমি তো চমকে লাফ দিয়ে উঠেছি। আশেপাশের সবাই তো খুব রাগারাগি শুরু করল, কি করেন মিয়া, বাচ্চাটার উপর এইরকম কইরা পড়লেন ক্যান? লোকটা বলল, সরি সরি ভাই, ঘুমায়া পড়ছিলাম।
যা হোক, অবশেষে প্যারেড শেষ হল আর ডিসপ্লে শুরু হল, শুরুতেই আজিমপুর গার্লস হাই স্কুলের ডিসপ্লে। খুব সুন্দর লাগল। কিন্তু ছোট বোনের আর সহ্য হচ্ছিল না, একে তো গরম, তার উপর একটা ভয় ধরে গেছে আবার কে না কে তার উপর এসে পড়ে। সে আর থাকতে চাইল না। আব্বা আমাদের নিয়ে বের হয়ে আসলেন।
রিকশায় করে আসতে আসতে আবার ছোট বোনের প্রশ্নের ফুলঝুড়ি শুরু হয়ে গেল। আব্বাও যা মনে আসে তাই জবাব দিয়ে যেতে থাকলেন। এক জায়গায় একটা টাওয়ারের সাথে কয়েকটা বেলুন আটকে থাকতে দেখা গেল। আব্বা দেখালেন, ঐ যে দেখ্ ঐ বেলুনগুলোই না তখন উড়িয়ে দিল, এখানে এস আটকে আছে, এগুলো যে নিয়ে ওদেরকে দিতে পারবে তাকে পুরস্কার দেয়া হবে। আমাদের খুব আফসুস হতে থাকল আমরা অত উঁচুতে উঠতে পারব না বলে।
বাসায় এসে টিভিতে বাকী অনুষ্ঠান দেখলাম আর মনে মনে একটু আফসুসও করলাম, সরাসরি দেখতে পারিনি বলে। ত
(এই ঘটনাগুলো আগেও লিখেছিলাম কি না মনে পড়ছে না, লিখে থাকলে ক্ষমাপ্রার্থী আবার লেখার জন্য। )
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।