মুসিবতের আভিধানিক অর্থ হচ্ছে বিয়োগান্তক ঘটনা; বিপর্যয়; দুর্যোগ; দুঃখ-কষ্ট ইত্যাদি। কিন্তু ইসলামী পরিভাষায় মুসিবতকে বিভিন্ন সময় বিভিন্ন অর্থে ব্যবহার করা হয়েছে। হাদীসের দৃষ্টিতে তার কিছুটা আমরা আলোচনা করব। আ'লামুদ্দিন গ্রন্থের ২৯৭ নং পৃষ্ঠায় ইমাম হাসান (আলাইহিস্ সালাম) হতে মুসিবত সম্পর্কে বর্ণনা করা হয়েছে যে, "মুসিবতসমূহ হচ্ছে প্রতিদান ও প্রতিফলের চাবিকাঠি। "
তার অর্থ হচ্ছে এই যে, যদি আমরা মুসিবতে ধৈর্য ধারণ করতে পারি তাহলে রোজ হাশরে অবশ্যই তার প্রতিদান ও প্রতিফল আমরা দেখতে পাব।
ইমাম আলীকে (আলাইহিস্ সালাম) অধিকতর কঠিন মুসিবত সম্পর্কে জিজ্ঞেস করা হলে উত্তরে তিনি বলেনঃ "দ্বীনের প্রতি (ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে এমন) মুসিবত সবচেয়ে কঠিনতম মুসিবত। " (আমালি সাদুক, ৪'র্থ খন্ড, পৃষ্ঠা: ৩২৩)
তিনি আরো বলেনঃ "বৃহত্তর মুসিবত ও দুর্দশা হচ্ছে, এ পার্থিব জগতের প্রতি প্রেম। "(গুরারুল হিকাম, হাদীস নং: ৩০৮১)। অবশ্য তার মতে "অজ্ঞতা ও মূর্খতাও বৃহত্তম মুসিবতের একটি। " (গুরারুল হিকাম, হাদীস নং: ২৮৪৪)
তাই আমাদেরকে নিজের দ্বীন ও ইসলামের প্রতি সচেতন থাকতে হবে।
যাতে করে সবকিছুকে রক্ষা করতে গিয়ে আমাদের দ্বীন ক্ষতিগ্রস্ত না হয় বরং সবকিছুকে বিসর্জন দিয়ে হলেও আমাদের দ্বীনকে রক্ষা করতে হবে। আর তার জন্য আমাদেরকে জ্ঞানার্জন করতে হবে বুঝতে হবে। অজ্ঞতার অন্ধকার হতে বেরিয়ে আসতে হবে। কেননা শিক্ষাই জাতির মেরুদন্ড। তা না হলে সত্যিকার অর্থে আমরা নিজেকে মুসলমান বলে পরিচয় দিতে দিধাবোধ করব।
এক ব্যক্তি, যে তার সন্তানের মৃত্যুতে অনেক অস্থির ও অশান্ত হচ্ছিল, ইমাম সাদিক (আলাইহিস্ সালাম) তার উদ্দেশ্যে বলেনঃ "হে লোক! তুমি একটি ছোট্ট মুসিবতে অস্থির হচ্ছ আর বৃহত্তর মুসিবত হতে উদাসীন ও বেখবর! যদি তোমার সন্তান যেখানে গিয়েছে, সে স্থানের জন্য প্রস্তুত থাকতে তাহলে কখনই তার জন্য অস্থির হতেনা। সেই দিনের জন্য প্রস্তুত না থাকার মুসিবত তোমার সন্তানের মুসিবতের চেয়ে অনেকটা বৃহত্তর। " (উয়ুনু আখবারুর রিদা, ২'য় খন্ড, পৃষ্ঠা: ০৫)
আমরা এই পার্থিব জীবনে দুনিয়াদারি করে ব্যস্ততর জীবন যাপন করছি, পরকালের কোন চিন্তা আমরা করিনা বা করার সময় আমরা পাইনা। তাই মৃত্যুকে ভয় করি। কিন্তু আল্লাহ রাব্বুল আলামিন কোরানে বলছেনঃ "ফাতামন্নাউল মাউতা ইন্ কুনতুম সদিকিন" অর্থাৎ যদি তোমরা সত্যবাদী হয়ে থাক তাহলে মৃত্যুর কামনা কর।
" (সুরা আল্ বাকারা, আয়াত: ৯৪; সুরা আল্ জুমু'আ, আয়াত: ০৬)
আল্লাহ্ রাব্বুল আলামিন তার পবিত্র কোরানে এরশাদ করছেনঃ "আর আমরা নিশ্চয়ই তোমাদের পরীক্ষা করবো কিছু ভয়, আর ক্ষুদা দিয়ে, আর মাল-আসবাবের, আর লোকজনের আর ফল-ফসলের লোকসান করে। আর সুসংবাদ দাও ধৈর্যশীলদের। যারা তাদের উপরে কোনো আপদ-বিপদ ঘটলে বলে-নিঃসন্দেহে আমরা আল্লাহর জন্যে, আর অবশ্যই আমরা তাঁরই কাছে প্রত্যাবর্তনকারী। (ইন্না লিল্লাহ্ ওয়া ইন্না আলাইহি রাজিউন)" (সুরা আল্ বাকারা, আয়াত: ১৫৫-১৫৬)
হাদীসে বর্ণীত আছে যে, মুসিবতের সময় যে ব্যক্তি " ইন্না লিল্লাহ্ ওয়া ইন্না আলাইহি রাজিউন" পড়ে, বেহেশত তার জন্য ওয়াজিব হয়ে যায়। (সাওয়াবুল আমাল, ২'য় খন্ড, পৃষ্ঠা: ২৩৫)
শুধু তাই নয়, আমরা যদি আমাদের যে কোন মুসিবতের সময় " ইন্না লিল্লাহ্ ওয়া ইন্না আলাইহি রাজিউন" পড়তে পারি তাহলে কোরানের আয়াত বলে তেলাওয়াত ও যিকর করার সওয়াবতো পাচ্ছিই বরং মুসিবত তেকে পরিত্রান ও পেয়ে যাব।
আল্লাহ্ আমাদের সেই তৌফিক দান করুন। আমিন।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।