আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

ছাত্র নেতার ছাত্রজীবন

এসো, গল্প শোনাই।

ভার্সিটি জীবনে ছাত্র রাজনীতির সাথে জড়িত থাকা নেতা এবং পাতি নেতাগণের নানান সার্কাস আর বান্দর খেলা দেখার সৌভাগ্য কমবেশি সবারই হয়। কিন্তু অধ্যয়ন নিয়ে তাদের ব্যাতি ব্যস্ত হতে দেখা আর ডুমুরের ফুল দেখা একই কথা। আমার কিছু দেখার এবং কিছু শোনার সৌভাগ্য হয়ে ছিল। আমাদের কম্পিউটার প্রোকৌশলের এমনই এক ছাত্রনেতার গল্প বলছি।

ধরে নেই তার নাম করিম। আচারে ব্যবহারে করিম ভাই একেবারে মাটির মানুষ, মুখে বিগলিত হাসি লেগে থাকে সবসময়। ফিল্ড একশনে আর্মস বা রড হাতে তাকে না দেখলে কেউ বিশ্বাসই করবেনা ভদ্রলোক কত্তোবড় ক্যাডার। গল্প-১ আমাদের ২য় বর্ষ ১ম সেমিস্টার পরীক্ষা। করিম ভাইকে সহাস্য মুখে পরিক্ষার হলে ঢুকতে দেখা গেলো।

ড্রপকোর্সের পরিক্ষা দিবেন করিম ভাই। এসে বসলেন আমার ঠিক পেছনে এবং আমাদের এক কাবিল ব্যাচমেটের ঠিক সামনে। এসেই জানান দিলেন, দুই পার্ট খাতার এক পার্ট খাতা যেনো ২০ মিনিটের মধ্যে তাকে সাপ্লাই দেয়া হয়। আমি তো পড়লাম শালার বিশাল বিপদে। আমি আমতা আমতা করতে করতে বললাম,"বস।

বিশ্বাস করেন, আমি কিছুই পারিনা" করিম ভাই: "ঐ বেটা, তইলে আমি পাশ করমু ক্যামনে?" আমি ফিসফিস করে কইলাম,"বস। আপনার পেছনে যেইটা বইছে, ঐটা বিশাল কাবিল। সব পারে। ওরে সেট করেন, শিওর এ প্লাস পাইবেন। " করিম ভাই আমারে মুক্তি দিয়া পেছনেরটারে ধরলেন ।

প্লান করলেন ১ম পার্ট খাতা উনি পকেটের নকল দিয়া উতরাবেন। তারপর ২য় পার্ট খাতা উক্ত কাবিলের সাথে অদল বদল করে লিখবেন। আমার কাবিল বন্ধুটি দ্বিমত করার সাহস পাইলো না। পরিক্ষা শুরু হওয়ার পরপরই উনি প্যান্টের পকেট থেকে নকল বের করে ইনডেক্সিং বা ম্যাপিং শুরু করলেন, কোন প্রশ্নের নকল কোনটা। কিন্তু কোনো ভাবেই উনি মিলাতে পারতেছেন্ না।

খালি আমারে কিছুক্ষণ পরপর কয়, "ঐ রেদু। খুইজা পাইনা তো কিছু। " আমি উপায় না দেখে রিস্ক নিয়া তার হাত থাইকা নকল নিয়া দেখি শালায় আগামী পরিক্ষার নকল আনছে। তারে সুখবর জানাইলাম ,"মিঞা, কি করছেন এইডা। আনছেন তো অন্য সাবজেক্টের নকল।

" করিম ভাই বিকারহীন ভাবে কয়, "টেনশন করিস না, দাড়া বাইক দিয়া টান মাইরা আসলটা আনতাছি। " টয়লেটে যাবার নাম করে হল থেকে বের হলেন এবং মিনিট বিশেক পরে সহাস্য বদনে হাজির হলেন। পরিক্ষার গার্ড জিজ্ঞাসা করলেন, "কি ব্যাপার। এতোক্ষণ কই ছিলা? " করিম ভাই বিগলিত হাসি দিয়া কয়, "স্যার। আমার আবার একটু হজমের সমস্যা আছে তো......।

" যাই হোক করিম ভাই তুমুল আনন্দে শুরু করলেন নকল করা। আমারে খানিক পরপর কয়, "ওই রেদু, কোশ্চেন তো সহজ রে.....বেটা পারস না ক্যান?? টুকলি লাগলে কইস। " আমি তো টেনশনে অস্হির। শালায় না আবার কি গ্যান্জাম বাধায়। আমারে সুদ্ধা না আবার এক্সফেল হয়।

তিন ঘন্টা পরিক্ষার ২য় ঘন্টা শেষ। করিম ভাই এইবার খাতা বদলানোর ধান্ধা শুরু করলেন। আমার কাবিল ব্যাচমেট এর তুমুল আপত্তি সত্ত্বেও বলতে গেলে জোর কইরা খাতা বদলাইলেন। করিম ভাইয়ের কাছে দুইটা বি পার্টের খাতা। কাবিলের কাছে দুইটা এ পার্টের খাতা।

করিম ভাই শুধু খাতা নিয়াই ক্ষান্ত দিলেন না। এ পাশে ও পাশে সবার সাথে কনসাল্ট করা শুরু করলেন। তার এই মুভমেন্ট হলের গার্ডের চক্ষে পড়ল। স্যার করিম ভাইকে খাতা নিয়া জমা দিতে বললেন। আমি দেখতেছি আর কোনো উপায় নাই।

করিম ভাই কনফার্ম এক্সফেল হইতেছে। সাথে আমার ব্যাচমেট টাও কনফার্ম এক্সফেল; কারণ দুই পার্ট খাতার একপার্ট তার নিজের, আরেক পার্ট করিমের। করিমের খাতার দুই পার্টের এক পার্ট শুধু তার নিজের, আরেকটা আমার ব্যাচমেটের। সূতরাং দুইজনেই ধরা খাইতেছে। করিম ভাই নির্ভয়ে দাড়াইলেন।

স্যারের দিকে তাকায়ে একটা হাসি দিলেন। স্যার কিছু বোঝার আগেই পিছনে ঘুরে আমার ব্যাচমেটের খাতা দুইটা ছো মাইরা নিয়া নিজের দুইটার সাথে এক করে ফেললেন। এবং স্যারকে শোনায়ে শোনায়ে আমার ব্যাচমেটকে বলতে লাগলেন, "ঐ মেলা লিখছোস। চল একলগে বাইর হইয়া ক্যন্টিনে চা খাই। " স্যার পুরা ব্যাপারটা বুঝে ওঠার আগেই করিম ভাই খাতা জমা দিয়া আমার বন্ধুটিকে নিয়া ততক্ষণে হলের বাইরে।

(চলবে। )

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.