তারা বলে সম্ভব না, আমি বলি সম্ভাবনা
প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা এইচটি ইমামের কাছে বিএলআরআই’য়ের ডিজির গোপন চিঠি
মৎস্য ও পশুসম্পদ মন্ত্রীর বিরুদ্ধে ঘুষ ও হত্যার হুমকির অভিযোগ!
মতস্য ও পশু সম্পদ মন্ত্রী আব্দুল লতিফ বিশ্বাসের বিরুদ্ধে হত্যার উদ্দেশ্যে হুমকি দেয়ার অভিযোগ এনে প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা এইচটি ইমামের কাছে গোপন চিঠি দিয়েছেন বাংলাদেশ পশুসম্পদ গবেষণা ইনস্টিটিউট (বিএলআরআই) এর মহাপরিচালক ড· মো· জাহাঙ্গীর আলম খান। গত ৫ নভেম্বর বৃহস্পতিবার উপদেষ্টার কাছে ডিজি-১/২০০৯/১৬২৯ স্বারকে (বাংলাদেশ পশু সম্পদ ইনস্টিটিউটের) পাঠানো চিঠির ৪ ও ৫ নং অংশে তিনি লিখেছেন, ‘বিএনপি জামাত জোটের সমর্থক ৪/৫ জন অসাধু কর্মকর্তা ও কর্মচারিকে দিয়ে অফিসে অস্থির পরিবেশ সৃষ্টি করার চেষ্ঠা করে চলছেন মতস্য ও পশু সম্পদ মন্ত্রী আব্দুল লতিফ বিশ্বাস। কিন্তু পশুসম্পদ গবেষণা ইনস্টিটিউটের ৯৮ শতাংশ কর্মকর্তা দুর্নীতিমুক্ত পরিবেশ বজায় রাখতে চান বলে এখন পর্যন্ত কোনো অস্থিরতা সৃষ্টি হয়নি। অস্থিরতা সৃষ্টি করতে না পেরে মন্ত্রী আমার বিরুদ্ধে বিভিন্নভাবে বেনামী ও মিথ্যা অভিযোগ এনে আমাকে বিব্রত করার পাঁয়তারা করছেন। তিনি আমাকে জীবননাশেরও হুমকি দিচ্ছেন।
’
ড· জাহাঙ্গীর আরো লিখেছেন, ‘মন্ত্রীত্ব গ্রহণের এক মাসের মধ্যেই মন্ত্রীর নিজ জেলার অধিবাসী একজন ঠিকাদার আমার সঙ্গে সাক্ষাত করেন। ইসমাইল হোসেন নামের ওই ঠিকাদারের বাসা ধানমন্ডিতে। তার মোবাইল নম্বর ০১৬৭৪২০১১৪১। তিনি মন্ত্রীর নাম বলে আমার কাছে ২ লাখ টাকা চাঁদা চান। টাকা দিলে আমার পদোন্নতি ও চুক্তিভিক্তিক নিয়োগের ব্যবস্থা করবেন বলেও জানান।
কিন্তু আমি অত্যন্ত ধৈর্য্যের সঙ্গে নিজেকে শান্ত রেখে এ ধরনের পদোন্নতি চাই না বলে পরিষ্ড়্গার জানিয়ে দেই। পরে ইসমাইল হোসেনের সঙ্গে মন্ত্রীর দফতরেও আমার দেখা হয়। টাকা না দেয়া পর্যন্ত মন্ত্রী আমার কোনো কাজ করবেন না বলেও বারবার তিনি (ইসমাইল) আমাকে স্মরণ করিয়ে দেন’।
দুই পৃষ্ঠায় চিঠিতে ড· জাহাঙ্গীর নিজেকে একজন মুক্তিযোদ্ধা এবং তার পিতাকে বঙ্গবন্ধুর ঘনিষ্ঠ কর্মী দাবি করে বলেন, জোট সরকার আমাকে পদোন্নতি না দিয়ে বিভিন্নভাবে নাজেহাল করেছে। স্বাধীনতার পক্ষের শক্তি আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন মহাজোট সরকার ক্ষমতায় আসার পর আমি আশা করেছিলাম শিগগিরই আমাকে পদোন্নতি দিয়ে স্থায়ীভাবে বিএলআরআই-এর মহাপরিচালক হিসেবে নিয়োগ দেয়া হবে।
কিন্তু মন্ত্রীর ইচ্ছাকৃত ও অহেতুক কর্মকান্ডের কারণে তা সম্ভব হচ্ছে না। তাই বাধ্য হয়ে আমাকে চলতি বছরের ৩০ ডিসেম্বর এলপিআরএ যেতে হচ্ছে।
তিনি অভিযোগ করেন, চলতি মাসে ইনস্টিটিউটের রজত জয়ন্তী বর্ষের সমাপ্তি অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রীকে নিয়ে আসার পরিকল্পনা ছিল। এ বিষয়ে মন্ত্রণালয়ে লিখিত প্রস্তাব পাঠানো হয়েছিল। কিন্তু মন্ত্রীর অনীহার কারণে প্রধানমন্ত্রীর দফতরে আনুষ্ঠানিক নিমন্ত্রণ জানিয়ে কোনো প্রস্তাব মতস্য ও পশুসম্পদ মন্ত্রণালয় থেকে পাঠানো হয়নি।
ওই গোপন চিঠিতে তিনি আরো জানান, ইনস্টিটিউটটি পরিচালিত হয় একটি বোর্ড অব ম্যানেজমেন্টের মাধ্যমে। মন্ত্রী হচ্ছেন এর সভাপতি। তার অনীহার কারণে বার বার প্রস্তাব পাঠানোর সত্ত্বেও বর্তমান সরকার ক্ষমতায় আসার পর এই বোর্ডের একটি সভাও করা সম্ভব হয়নি।
এদিকে সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা ও মুক্তিযোদ্ধা সংসদ সূত্র নিশ্চিত করেছে, ড· জাহাঙ্গীর আলম খান ও তার বাবা আদৌও কোনো মুক্তিযোদ্ধা ছিলেন না। কিছুদিন আগে তার বাবা মারা গেলেও তাকে রাষ্ট্রীয় সম্মানে দাফন করা হয়নি।
বরং ড· জাহাঙ্গীর বিভিন্ন সুবিধা আদায়ের লক্ষ্যে বিএনপির সময় হাওয়া ভবন, ওয়ান ইলেভেনের সময় সেনা সমর্থিত সরকারের নেপথ্যে থাকা দুই প্রভাবশালী ব্যাক্তি বিগ্রেডিয়ার আমিন ও বারীকে ম্যানেজ করেন। এবং বর্তমানেও মহাজোট সরকারের কৃষি মন্ত্রী মতিয়া চৌধুরী ও প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা এইচটি ইমামের ঘনিষ্ট লোক হিসেবে পরিচয় দিয়ে ফায়দা লুটার চেষ্ঠা করছেন। তিনি নিজেকে আওয়ামীলীগ পন্থী দাবি করলেও তার কার্যক্রমে আওয়ামী লীগের প্রতি নূøনতম শ্রদ্ধাভক্তির প্রমাণ মিলে না। যার প্রমাণ চলতি বছরের ১৫ আগস্টের দিন। ওই দিন জাতির জনক বঙ্গবন্ধুর মৃত্যুবার্ষিকীতে শোক পালনের জন্য তার নির্দেশের কারণে বিএলআরআই-এর পক্ষে কোনো উদ্যোগ নেয়া সম্ভব হয়নি।
আওয়ামী পন্থী কিছু কর্মকর্তা-কর্মচারি উদ্যোগ নিলেও তাদের বিরুদ্ধে নিন্দা জ্ঞাপন ও শাস্তির ব্যবস্থাস্বরুপ ৩ জনকে সাময়িক বরখাস্ত পর্যন্ত করা হয়েছে।
বিএলআরআই\’য়ের প্রবিধানের উদ্ধৃতি দিয়ে সংশ্লিষ্টরা জানান, মন্ত্রীর বিরুদ্ধে লেখা গোপন এ চিঠি সরাসরি প্রবিধানের ৩৬ এর ৩, ৪ ও ৫ ধারা সরাসরি লংঙ্ঘিত হয়েছে। বোর্ড ধারা পরিচালিত কোনো সংস্থার মহাপরিচালক নিজের নামে তার পদস্থ ও সংশ্লিষ্ট মন্ত্রীর বিরুদ্ধে এ ধরণের অনাস্থার প্রস্তাব তুলতে পারেন না। এ অসদাচরণের কারণে মহাপরিচালক গুরুদন্ডে দন্ডিত হতে পারেন।
এদিকে চিঠি সম্পর্কে জানতে বাংলাদেশ পশু সম্পদ গবেষণা ইনস্টিটিউটের (বিএলআরআই) ডিজি ড· মো· জাহাঙ্গীর আলম খানের কাছে মোবাইল করা হলে তিনি বলেন, হ্যাঁ এরকম একটি চিঠি পাঠানো হয়েছে।
পরে মন্ত্রীর সঙ্গে সর্ম্পকের অবনতি প্রসঙ্গে জানতে চাইলে তিনি তাতক্ষনিক উল্টো দাবি করেন, চিঠি এখনো যায়নি। তবে যাবে। আর চিঠিটা কিভাবে সংবাদিকদের কাছে পৌঁছালো তা নিয়ে তিনি প্রশ্ন তুলে বিস্ময় প্রকাশ করেছেন।
পাদটীকা:
প্রিয় পাঠক! সংবাদটি আমার লেখা নয়। লেখাটি আমার বন্ধু এস আই জুয়েল এর।
তিনি এ সময়ের অত্যন্ত সম্ভাবনাময় একজন সংবাদকর্মী। আমার জানা মতে, জুয়েল অনেক পরিশ্রম করে এই সংবাদটির তথ্য-উপাত্ত সংগ্রহ করেছিল। এ ধরণের একটি সংবাদের সন্ধান পাওয়া একজন রিপোর্টারের ভাগ্যে কালে-ভদ্রে ঘটে থাকে। তবে প্রতিদিন সারা দেশে সংঘটিত অনেক গুপ্ত হত্যার মত সংবাদপত্র ও টেলিভিশন চ্যানেলগুলোতেও ঘটে সংবাদ হত্যার ঘটনা। জুয়েলের পরিশ্রমী এই রিপোর্টটিও সম্ভবত সেই ভাগ্য বরণ করতে যাচ্ছিল।
বিকল্প মিডিয়া গুলোর সঙ্গে জুয়েলের এখনও পরিচয় ঘটেনি, যেমনটি ঘটেনি বাংলাদেশের অনেক গণমাধ্যম কর্মীরও। সামহোয়ারের এই সার্বজনীন মঞ্চে তাই তারও পদচারণা ঘটেনি।
জুয়েলের সেই কস্টার্জিত প্রতিবেদনটি পোষ্ট করলাম। দেখা যাক প্রচলিত মিডিয়ার তুলনায় ব্লগে এর ফিডব্যাক কেমন আসে। প্রিয় পাঠক, আপনাদের জিজ্ঞাসা ও মন্তব্য সাদরে আমন্ত্রিত।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।