আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

নিজের একটি মাইক্রোস্কোপ

এই পথে আলো জ্বেলে, এই পথেই পৃথিবীর ক্রমমুক্তি হবে
তৈরি করুন সরল মাইক্রোস্কোপ অনেকেরই নিশ্চয়ই ইচ্ছে হয় – আহা, একটা মাইক্রোস্কোপ পেলে চারপাশের না দেখা ক্ষুদ্র জগতে উঁকি দিয়ে দেখা যেত। কিন্তু মাইক্রোস্কোপ তো সহজলভ্য নয় – ইচ্ছেও তাই পূরণ হয় না। তবে এমন যদি হয়, খুব সহজেই আমরা মাইক্রোস্কোপ তৈরি করতে পারি? অনুসন্ধিৎসু চক্র বিজ্ঞান সংগঠনের মুগদাপাড়া শাখায় আমরা তাই করছি। স্বল্পমূল্যে তৈরি করেছি প্রায় 70 গুণ বিবর্ধনের সরল মাইক্রোস্কোপ। এই মাইক্রোস্কোপের নাম রাখা হয়েছে লিউয়েনহুক মাইক্রোস্কোপ।

আপনিও তৈরি করতে পারেন এই মাইক্রোস্কোপটি খুব সহজেই, পর্যবেক্ষণ করতে পারেন না দেখা জগৎকে, বানিয়ে উপহার দিতে পারেন ছোট ভাই-বোনদের। সরল মাইক্রোস্কোপ কি? মাইক্রোস্কোপ অনেক রকম হয়। যেমন ইলেকট্রন মাইক্রোস্কোপ, আলোক মাইক্রোস্কোপ ইত্যাদি। আমরা সচরাচর যেসব মাইক্রোস্কোপ দেখি এগুলো হলো জটিল আলোক মাইক্রোস্কোপ। এগুলোতে একাধিক আলোক লেন্স ব্যবহার করা হয়।

আর সরল মাইক্রোস্কোপে কেবল একটি লেন্স ব্যবহার করা হয়। এই একক লেন্সের ক্ষমতার উপর মাইক্রোস্কোপের বিবর্ধন নির্ভর করে। অনুসন্ধিৎসু চক্রের তৈরি মাইক্রোস্কোপে এই লেন্সটি তৈরিই মূল বিষয়। কিভাবে লেন্স তৈরি করবো? চক্রের সদস্যরা তিনভাবে এই লেন্স তৈরি করেছে। একটি সহজ বুদ্ধি হলো স্বচ্ছ সাদা মার্বেলকে লেন্স হিসেবে ব্যবহার করা।

এই মার্বেল লেন্স বেশ ভালো বিবর্ধন দেয়। আরেকটি পদ্ধতি হলো সাদা এলইডি বাল্ব হতে লেন্স তৈরি। এলইডি হলো এক ধরণের আলোক নিঃসরণি ডায়োড। এটি যে কোন ইলেকট্রনিক্সের দোকানে পাওয়া যাবে। এলইডি বাল্বের মাথায় একটি লেন্স জোড়া লাগানো থাকে।

এই লেন্সটি বাল্বের মাথায় প্লায়ার্স দিয়ে ভেঙে বের করে নিতে হবে। বাল্বের কোথায় লেন্সটি কেটে নিতে হবে তা নিচের ছবিতে দেখানো হয়েছে। চক্রের সদস্যরা মূলত গ্লাসরড বা কাঁচনল হতে লেন্স তৈরি করেছেন। এই লেন্সের বিবর্ধন ক্ষমতা উল্লিখিত পদ্ধতির চাইতে ভালো। এই কাঁচনল পাওয়া যাবে হাটখোলায় বৈজ্ঞানিক যন্ত্রপাতির দোকানে, দাম দশ টাকা মাত্র।

নিম্নমানের গ্লাসরড কিনতে হবে, কারণ নিম্নমানের গ্লাসরড আগুনে দ্রুত গলে যায়। 1)গ্লাসরড হতে লেন্স তৈরির জন্য গ্লাসরডের মধ্যখানে গ্যাসের আগুনে তাপ দিতে হবে। এ সময় গ্লাসরড ঘুরাতে হবে। 2)যখন তা গলতে শুরু করবে, তখন খুব সাবধানে গ্লাসরড দুইদিকে টানলে চিকন কাঁচ তন্তু তৈরি হবে। তখন গ্লাস রডের মাঝখানে কেটে ফেলতে হবে প্লায়ার্স দিয়ে।

3)এখন কাঁটা গ্লাসরডের একটি অংশ নিয়ে তার চিকন প্রান্ত আগুনের শিখায় খাড়া ভাবে তাপ দিতে হবে। এক সময় উত্তপ্ত প্রান্ত গলে গেলে তা গোল হয়ে যাবে। লক্ষ্য রাখতে হবে যাতে কাঁচ গলে না যায়। গ্লাসরড ঠান্ডা হলে রডের গোল প্রান্ত সাবধানে প্লায়ার্স দিয়ে কেটে ফেলতে হবে। এই কাঁটা অংশই লেন্স।

এই পদ্ধতিতে একেবারে অনেকগুলো লেন্স তৈরি করে ফেলুন। প্রস্তুতী লেন্স তৈরি হয়ে গেলে আসে মাইক্রোস্কোপ প্রস্তুতীর কথা। একটি শক্ত আয়তাকার কাগজ নিতে হবে। সেখানে একটি ক্ষুদ্র ছিদ্র করতে হবে এমনভাবে যাতে ঐ ছিদ্র দিয়ে লেন্সটি ঢুকানো যায়। স্কচটেপের মাঝে ফুটা করে লেন্সের চারপাশে এমনভাবে বসাতে হবে যাতে সে লেন্সটিকে ধরে রাখতে পারে।

ব্যাস, সরল মাইক্রোস্কোপ তৈরি। কোন কিছু দেখতে হলে কাঁচের স্লাইডে তার পাতলা অংশ, যার মধ্য দিয়ে আলো চলাচল করতে পারবে বসিয়ে দিতে হবে। তারপর স্লাইডটি রাবার ব্যান্ড দিয়ে মাইক্রোস্কোপের সাথে লাগিয়ে দিতে হবে এমনভাবে যেন চাইলেই স্লাইড আর লেন্সের মধ্যকার দূরত্ব হাত দিয়ে পরিবর্তন করা যায়। স্লাইডে নমুনা দেখার জন্য চোখ একেবারে লেন্সের কাছে রাখতে হবে। স্লাইডের পেছনে কোন উজ্জ্বল আলোক উৎস থাকলে নমুনা সহজে পর্যবেক্ষণ করা যাবে।

এখানে খুব সাধারণ একটি মডেলের কথা বলা হলো। আগ্রহীরা চাইলে আরো সৃজনশীলভাবে তাদের নিজস্ব মডেলের মাইক্রোস্কোপ তৈরি করতে পারবেন। সতর্কতা: আগুন থেকে সাবধান। আগুন নিয়ে খেলা করা যাবে না। কাঁচনল অসমভাবে উত্তপ্ত করা হলে তা ফেটে যেতে পারে।

কাঁচনল ভেঙে গিয়ে ইনফেকশনের কারণ হতে পারে। ছোটরা অবশ্যই বড়দের সাহায্য নিয়ে কাজটি করবে। আরো বিস্তারিত জানার জন্য চাপুন
 

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.