আমি মানুষের পায়ের কাছে কুকুর হয়ে বসে থাকি - তার ভেতরের কুকুরটাকে দেখবো বলে।
প্রথম পর্ব
৬. জোয়াসিম ক্রোল (Joachim Kroll)
জার্মান এই সিরিয়াল কিলারের জম্ম ১৯৩৩ সালে। এই সিরিয়াল কিলার রুর নরখাদক ও ডয়েচবার্গ ম্যান ইটার নামে কুখ্যাত। ৮টি হত্যাকান্ডের জন্য তার সাজা হলেও সে ১৩টি হত্যাকান্ডের কথা নিজে স্বীকার করে।
৩ জুলাই'১৯৭৬ ক্রোল মেরিয়ান কেটার নামীয় ৪ বছর বয়সী একটি বালিকাকে কিডন্যাপ ও হত্যার জন্য গ্রেপ্তার হন।
উক্ত বালিকা নিখোঁজ হলে পুলিশ ঘরে ঘরে তল্লাশী অভিযান চালায়। ক্রোলের এক প্রতিবেশী পুলিশকে জানায় তাদের এ্যাপার্টমেন্টস এর ময়লার পাইপটি জ্যাম হয়ে গেলে এ সম্পর্কে ক্রোল কিছু জানে কি না জিজ্ঞেস করা হলে ক্রোল এক কথায় জবাব দেয়- "নাড়িভূড়ি"। পুলিশ ক্রোলের ঘরে হানা দিয়ে মেরিয়ানকে আবিস্কার করে টুকরো টুকরো অবস্থায়। তার শরীরের কিছু অংশ ফ্রিজে, একটি হাত চুলার উপর পাত্রে রান্না করা অবস্থায় এবং নাড়িভূড়িগুলো ময়লা নির্গমনের পাইপে।
ক্রোল স্বীকারোক্তি দেয় সে তার শিকারকে টুকরো টুকরো করে রান্না করে খেতো।
বাজার খরচ (grocery bills) বাচাঁনোর জন্য সে এ কাজ করতো বলে জানায়। বিচারে ক্রোলের নয়টি যাবজ্জীবন সাজা হয়। ১৯৯১ সালে কারাগারে অন্তরীন থাকাবস্থায় হার্ট এ্যাটাকে তার মৃত্যু হয়।
৭. ডেনিস রাডার (Dennis Rader)
আমেরিকান সিরিয়াল কিলার রাডার জম্মগ্রহণ করেন ১৯৪৫ সালে। ১৯৭৪ হতে ১৯৯১ সালের মধ্যে রাডার কমপক্ষে ১০ জনকে হত্যা করে।
তার হত্যাকান্ডগুলো ছিল তার কাছে এক একটা শিল্পকর্ম। রাডার তার ভিকটিমদের নাম দিত প্রজেক্ট। তার "হিট কিট" নামের একটা ব্রিফকেস ছিল যাতে হত্যার সব উপাদান যেমন- ফিতা, পিস্তল, রশি, হ্যান্ডকাপ ইত্যাদি থাকত। তার একটি বিশেষ ধরনের জমা ছিল - "হিট ক্লথ" নামে। অপরাধ সংঘটনের সময় সে এটি পরিধান করত।
রাডার প্রথমে অচেতন না হওয়া পর্যন্ত তার ভিকটিমকে গলা টিপে ধরত। কিছুক্ষণ বিরতি দিয়ে ভিকটিমের জ্ঞান ফিরে এলে পুনরায় গলা টিপে ধরত। এভাবে বার বার সে একাজটি করে ভিকটিমকে মৃত্যুর খুব নিকটে নিয়ে যেত। বাচাঁর জন্য ভিকটিমের ছটফটানি দেখে সে যৌন উত্তেজিত হতো। সবশেষে রাডার তার শিকারকে গলাটিপে হত্যা করতো এবং ভিকটিমের পোষাকে (সাধারণত আন্ডারওয়ারে) বীর্যপাত ঘটাত।
যাবজ্জীবন সাজাপ্রাপ্ত কয়েদী হিসেবে রাডার এখনো কারাগারে সাজা ভোগ করছেন।
৮. জাভেদ ইকবাল (Javed Iqbal)
পাকিস্তানী এই সিরিয়াল কিলারের জম্ম ১৯৫৬ সালে। সে দাবী করেছিল ১৮ মাসের ব্যবধানে সে ১০০ শিশুকে হত্যা করেছে। ১৯৯৮ সালে ২জন বালককে যৌন হয়রানির জন্য তাকে গ্রেপ্তার করা হয়। পরবর্তীতে জামিনে বের হয়ে ইকবাল পুরোদমে শুরু করে তার কুকর্মের।
সে তার সুন্দর আচার ব্যবহার দিয়ে বালকদের মুগ্ধ করতো এবং প্রথমে ধর্ষন পরে ছুরিকাহত করে তাদের হত্যা করতো। হত্যার পর সে মৃতদেহ গুলোকে টুকরো টুকরো করে হাইড্রোলিক এসিড ভর্তি ড্রামে ডুবিয়ে রাখতো। পুরো দেহ গুলে গেলে এগুলোকে সুয়ারেজ লাইন কিংবা নদীতে ফেলে দিতো। ইকবাল ভিকটিমকে হত্যার পর স্মারক চিহ্ন হিসেবে ভিকটিমের জামা ও জুতা জমা রাখতো। তার শিকার সংখ্যা ১৫টি হওয়ার পর সে ভিকটিমের ছবি তোলা শুরু করে।
পুলিশের নিকট ধৃত হওয়ার পর জাভেদ ইকবাল বলে- "আমি চাইলে ৫০০ বালককে হত্যা করতে পারতাম.......আমি জাভেদ ইকবাল, ১০০ শিশুর হত্যাকারী... আমি এই পৃথিবীকে ঘৃণা করি এবং আমি আমার কাজের জন্য লজ্জিত নই। আমি মৃত্যুর জন্য প্রস্তুত, আমার কোন অনুশোচনা নেই যে আমি ১০০ শিশুকে হত্যা করেছি। " জাভেদ হত্যার পূর্বে শিশুদের যৌন নিগৃহ করেছে বলে তার লিখিত ডায়েরিতে উল্লেখ করে।
বিচারে ফাঁসিতে ঝুলিয়ে তার মৃত্যুদন্ড কার্যকর করার রায় হয়। বিচারক তার রায়ে বলেন - যদিও তাকে ফাঁসির রায় দেয়া হয়েছে কিন্তু আমি চাই তাকে ১০০বার ছুরিকাহত করে হত্যা করতে এবং ১০০ টুকরো করে এসিডে ডুবিয়ে রাখতে।
তার ফাঁসি কার্যকর করার পূর্বে ২০০১ সালের ৭ অক্টোবর প্রিজন সেলে তাকে ছুরিকাহত হয়ে মৃত অবস্থায় পাওয়া যায়। পাকিস্তানী কতৃপক্ষ জানায় জাভেদ প্রিজন সেলে আত্মহত্যা করেছে।
৯. জন ওয়েন গ্যাসি (John Wayne Gacey)
ক্লাউন সিরিয়াল কিলার নামে পরিচিত গ্যাসির জম্ম ১৯৪২ সালে যুক্তরাষ্ট্রে। ধারনা করা হয় ১৯৭৬ হতে ১৯৭৮-র মধ্যে গ্যাসি ৩২ জন বালককে যৌন নির্যাতন ও হত্যা করে। পেশায় ক্লাউন (ভাঁড়) এই সিরিয়াল কিলার শিশুদের নির্মল বিনোদন দানের পাশাপাশি পুরো দুনিয়াকে উপহার দেয় রক্তহিম করা ভয়ংকর সব কাহিনী।
১৯৯৪ সালের ১০ মে এই নরপিশাচকে ফাঁসিতে ঝুলিয়ে মৃত্যুদন্ড কার্যকর করা হয়।
১০. টেড বান্ডি (Ted Bundy)
নায়কোচিত চেহারার এই সিরিয়াল কিলারের জম্ম ১৯৪৬ সালে যুক্তরাষ্ট্রে। টেড বান্ডির সাথে আমাদের হালের আলোচিত চরিত্র রসু খাঁ-র একটা বিষয়ে মিল আছে। বান্ডিও রাসু খাঁ-র মতো প্রেমে ব্যর্থ হয়ে খুনের নেশায় মেতে উঠে। ১৯৭৪ হতে ১৯৭৮ সালের মধ্যে বান্ডি ৩০টি ধর্ষন ও হত্যার কথা স্বীকার করে যদিও এর প্রকৃত সংখ্যা অজানা।
সাধারনত বান্ডি প্রথমে ভিকটিমকে ধর্ষন করতো তারপর হত্যা। বান্ডি তার শিকারকে হত্যা করতো প্রথমে মুগুর (ডান্ডা) দিয়ে পিঠিয়ে কিংবা শ্বাসরোধ করে। হত্যার পর বান্ডি মৃতদেহের সাথে সহবাস করতো এবং মৃতদেহ পচন না ধরা পর্যন্ত জড়িয়ে ধরে শুয়ে থাকতো।
১৯৮৯ সালের ২৪ জানুয়ারি টেড বান্ডিকে ইলেকট্রিক চেয়ারের মাধ্যমে মৃত্যুদন্ড কার্যকর করা হয়।
১১. জ্যাক দ্যা রিপার (Jack The Ripper)
জ্যাক দ্যা রিপারের ব্যবহৃত ছুরি
ইতিহাসের সবচেয়ে ভয়ংকর সিরিয়াল কিলার জ্যাক দ্যা রিপারের জম্ম যুক্তরাজ্যে।
কত গল্প, উপন্যাস বা সিনেমা যে রচিত হয়েছে এ ভয়ংকর সিরিয়াল কিলারকে তার ইয়াত্তা নেই। উনিশ শতকের শেষ দিকে জ্যাক দ্যা রিপার ছিল এক মূর্তিমান আতন্ক। তার শিকারের বেশীর ভাগই ছিল পেশায় পতিতা। জ্যাক দ্যা রিপার যৌন কার্যের সময় ভিকটিমকে শ্বাসরোধ করে হত্যা করতো। জ্যাক দ্যা রিপার এর আসল নাম জানা যায়নি।
রিপার উইচপেল খুনী এবং লেদার এ্যাপ্রন নামে পরিচিত। জ্যাক দ্যা রিপার সত্যিকার অর্থে কত জনকে খুন করেছে তা নিশ্চিত হওয়া যায় না। ধারনা করা হয় তার হত্যাকান্ডের সংখ্যা পাঁচ থেকে আটটি।
এমন না যে জ্যাক দ্যা রিপার এর আগে বা পরে সিরিয়াল কিলার ছিল না। জ্যাক দ্যা রিপারের চেয়ে অনেক ভয়ানক সিরিয়াল কিলার তার আগে পরেও ছিল।
কিন্তু জ্যাক দ্যা রিপারকে সিরিয়ার কিলারদের বস বলা হয় একারনে যে তৎকালীন সময়ে এ নামটিই ছিল এক মহা আতন্ক। কে যে জ্যাক দ্যা রিপার তা নিম্চিত ছিল না কেউ।
১৮৯৪ সালে স্যার ম্যালভিল ম্যাকনাগটেন (তৎকালীন চিফ কনস্টেবল) জ্যাক দ্যা রিপার সর্ম্পকে একটি গোপন প্রতিবেদন দাখিল করেন। মাজার ব্যাপার হচ্ছে বিংশ শতাব্দীর মাঝামাঝি সময়ের আগে এই রিপোর্টটি প্রকাশ করা হয়নি। স্যার ম্যালভিল তিন জন ব্যাক্তিকে জ্যাক দ্যা রিপার হিসেবে সন্দেহ করেন।
এর মধ্যে প্রধান হলেন- এম.জে ড্রুয়িট নামে একজন ব্যারিস্টার যিনি পরবর্তীতে শিক্ষকতায় নিয়োজিত হন। ড্রুয়িট ১৮৮৮ সালে ডিসেম্বরে আত্মহত্যা করেন। মেলভিন এর দ্বিতীয় সন্দেহভাজন হলেন Aaron Kosminiski নামের একজন পোলিশ ইহুদি। তার ৩য় সন্দেহভাজন Michael Ostrog নামের একজন উম্মাদ লোক।
ডিটেকটিভ Frederick Abberline ১৯০৩সালে জ্যাক দ্যা রিপার মামলা নিয়ে তদন্ত করেন।
তিনি জ্যাক দ্যা রিপার হিসেবে সন্দেহ করেন Severin Klosowski, alias George Chapman তবে আধুনিক অপরাধ বিজ্ঞান তার এই মতকে সমর্থন করে না।
এছাড়া আরো কয়েকজন ব্যাক্তিকে জ্যাক দ্যা রিপার হিসেবে সন্দেহ করা হলেও এখনো পর্যন্ত নিশ্চিত হওয়া যায়নি কে এই জ্যাক দ্যা রিপার? এখনো তাকে নিয়ে চলছে নানা গবেষনা। হয়তো একদিন জানা যাবে কে এই সিরিয়াল কিলারদের বস, হয়তোবা কোনদিনই জানা যাবে না।
বি:দ্র: এই তালিকায় অনায়াসে যোগ হতে পারে চাদঁপুরের রসু খাঁ, যেহেতু তার বিষয়টি এখনো তদন্তাধীন সেহেতু তদন্ত শেষ হওয়া পর্যন্ত তার সম্পর্কে পুরোপুরি বলা যাবে না। তার কথা হয়তো পরবর্তী কোন একদিন।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।