আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

কালের যাত্রার ধ্বনি শুনতে কি পাই?

আল বিদা

আমার এক বস প্রায়ই আমাদের প্রশ্ন করত, আর ৫ বছর পর তোমরা নিজেদের কোথায় দেখতে চাও। অর্থাৎ তিনি জানতে চাইতেন আমাদের ক্যারিয়ার প্ল্যানিং কি? আমরা প্রশ্নটা বুঝেও করুন মুখ করে উত্তরে বলতাম ঢাকাতেই দেখতে চাই, গ্রামে যাওয়ার শখ নাই। কিন্তু কখনও কখনও আসলেই ভাবি আমার ফিউচার প্ল্যান কি? কি করতে চাই আমি? সাথের লোকজনকে দেখি জীবনটা একেবারে ছকে আকা। তারা বলে অমুক বছরে আমি এই করব। আর কি আশ্চর্য, তারা তা করতেও পারে।

আমি আগামী কয়েক মাসের বেশী ভাবতেই পারি না। বিদেশে থাকা বন্ধুরা ডাকে আয় আয়। আমি সাহসই করতে পারি না এই বয়সে আর বিদেশে যাওয়ার হাঙ্গামা করার। এক কোম্পানীতে অনেকগুলো দিন পার হয়ে গিয়েছে। প্রায়ই ভাবি এবার যাবার সময় হয়েছে।

কিন্তু কেন যেন যাওয়ার জন্য খুব বেশী কিছু করা হয় না। প্রতিদিন ভাবি দেরী হয়ে যাচ্ছে। যা করার এখনই সময়। তবুও কিছুই হয়ে উঠে না। নচিকেতার একটা গান ছিল, এই বেশ ভাল আছি।

কখনও মনে হয় এভাবেই দিন পার করে দেই। আবার মনে হয় এভাবেই যদি চলতে থাকে তো আর চলে লাভ কি। আমার এক কলিগ স্প্রাইটের এডের মত করে বলে ভাল থাকার জন্য দৌড়ঝাপ করে লাভ কি। দৌড়ঝাপ করলেও ভাল থাকব, এখনও তো ভালই আছি। আমি তার মত করে ভাবতে চেয়েও ভাবতে পারি না।

আমার অনেক বন্ধু শেয়ার মার্কেটে কিছু টাকা বিনিয়োগ করে দিব্বি ভাল আছে। ১০টায় মার্কেটে যায়, ২টায় ফিরে ঘুমায় আবার সপ্তাহে ২দিন তো বন্ধই। তারা এই ব্যবসা করে আমার চেয়ে বেশীই টাকা কামাচ্ছে। আবার অফিসের টেনশন নেই। এমডি কি বলবে, সেলের জন্য প্রেশার দিবে কিনা, রিকভারী টার্গেট কি, প্রজেক্ট হ্যান্ড্ভার কবে, নতুন কি প্রজেক্ট নেয়া হবে - এমন কোন টেনশনই নিতে হচ্ছে না তাদের।

কতই না সুখে আছে। আর আমি একটু ঘুরতে যাওয়ার জন্য ২/৪ দিনের ছুটিই এরেঞ্জ করতে পারি না। তার মানে এই না যে আমি খুবই ব্যস্ত একজন মানুষ। এই ব্লগে সারাদিন বসে থাকা ছাড়া আমার আর তেমন কোন কাজ নেই। আমাদের এই পরিচিত ব্লগের অতি পরিচিত কিছু ব্লগারদের দেখলে মনে হয় যেন স্বর্গসুখে আছেন।

তাদের একজনের নাম বললাম না। শুধু বললাম তিনি এক হাসপাতালে কাজ করে!!!কিছুদিন পর পরই টো টো। তাও আবার অফিসের পয়সায়। আরেকজন আছেন পত্রিকার উপরওয়ালা। পত্রিকায় লিখেন, টিভিতে আসেন আর মুভি দেখেন।

ব্লগার জুল ভার্নকে দেখি এই অসুস্থ শরীর নিয়েও নতুন নতুন আইডিয়া নিয়ে কাজ করে। কিছু সামাজিক কিছু নেহায়াৎ ব্যবসায়িক। তার পায়ে যেন রোলার স্কেটার লেগে আছে। প্রায়ই ভাবি তিনি কেন এত কষ্ট করে। এত চ্যালেজ্ঞ নেয়।

এবার কিছু রেস্ট করুক। আমি বুঝতে পারি না। কতই না সুখ। আনুমানিক ৩৫ বছর বয়সের আরেকজনের সাথে যখনই দেখা হয় এমন হাসি দেয় মনে হয় দুনিয়াতে আর কোন ঝামেলাই নেই। আড্ডাতে যখন যাই আমি মিলিয়ে দেখি আমার কল্পনার লোকজনের সাথে বাস্তবের লোকজন।

হাসি খুশিতে ঝিকমিক করে তাদের মুখ। তাদের দিকে তাকালেই তাদের ভবিষ্যৎ চোখের সামনে আলো ছড়ায়। আমার মন তখন আমার অন্ধকার ভবিতব্যের জন্য হাহাকার করে উঠে। একদিন এই অফিসে আমি যাদের সাথে কাজ করতাম তারা এখন আর কেউ নেই। তারা একেকজন কত ভাল ভাল কোম্পানীতে কাজ করে।

তাদের কাজের কতই না ডাইমেনশন। নতুন নতুন কত কাজের দায়িত্ব নিচ্ছে তারা। আর আমার যাওয়ার কোন জায়গাই নেই। আমি সেই শুরুর দিন যে কাজ করতাম এখনও সেই কাজই করি। মাঝে মাঝে মনে হয় আমার হয়ত অন্য কোন কোম্পানীতে কাজ করারই যোগ্যতা নেই।

সামনের দিকে তাকিয়ে আছি ভবিষ্যৎ আমাকে কোথায় নিয়ে যায় তা দেখার জন্য। জগতের সকল প্রানী সুখী হোক।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।