কিছু বলার নেই........
১৯৮৫ সালের কোনো এক ডিসেম্বারের কথা...বার্ষিক ক্রিড়া প্রতিযগিতার হিট এ সে স্কুলের মাঠে আর আমি মাঠের বাইরে ব্যাপক কান্না কাটি... কারন তাকে ছাড়া বাসায় যাই কিভাবে ....তার ব্যাগ এ আমার টিফিন , আমার হাতে দুটি ছাতা এবং আমার ব্যাগ এ তার তোলা কিছু নাম না জানা হলুদ ফুল , বাসায় গিয়া সেগুলি যে ভাগ করার কথা!
হায় ! জীবন আজ নিজেই ভাগ হয়ে গ্যাছে ..... সেই ভাগ আর করা হয়নি।
আমি , মা , বাবা & আরো অনেকে অপেক্ষা করে ছিলাম কখন সে ভর্তি পরিক্ষা দিয়া করোনেশন স্কুলের থেকে বের হবে .... পরিক্ষা শেষ হলো , "ইলিশ মাছ কোথায় পওয়া যায় ?" ..... সে লিখে এসেছে .... "বাজারে" ..... আমরা বুঝে ফেললাম এরকম চটপটে student কে ই তো করোনেশন স্কুলের দরকার ..... ফলাফল ঠিক তাই ।
"I have a pet cat" ... মানে "আমার একটা পেট কাটা বিড়াল আছে"..... expert আমি ই তো তাকে এটা মানে করে দিয়াছিলাম.....হায় ! আজকে কত মানুষ কত প্রশ্ন করে ...তার মত translation আর কেউ জানতে চায় না !
তার একটা অস্পষ্ট ধারনা ছিলো , কিডনি infection হলে মানুষ বাঁচে না , আর আমাদের স্পষ্ট বিশ্বাস ছিল , সৃষ্টিকর্তা Angel দের কে ধরণীতে পাঠান তার বিশেষ বার্তা বাহক হিসাবে ..... আমরা আজো তাই ই বিশ্বাস করি।
তার বান্ধবিরা জানতো , তাদেরকে দেখার জন্য করোনেশন স্কুলের সামনে আমি রিক্সায় বসে থাকতাম , হায় ! এক সাথে বাসায় যাওয়ার পথে যদি টিফিন খাবার হিসাবটা না মেলে , সবই তো তাহলে মাটি .....
জীবনের কত না মেলা হিসাব না মিলিয়েই সে অদৃশ্য হয়ে গেলো কাচ এ ঘেরা immigration এর প্রবেশ দ্বার দিয়ে,সাথে শুধু একটা ট্রলি , পঁচিশ কেজির ওজনে কি সব সম্পর্ক , সব মায়ার বন্ধন , সব পাওয়া না পাওয়া , সব না ঝরা অশ্রু , সব উপহার বয়ে নিয়ে জাওয়া সম্ভব ? হয়তো যে গ্যাছে , সেই জানে ।
একটা প্যাকেটে করে নিজের শিকড় সহ আমি যখন eaagle এর বাস এ করে প্রথম বারের মত খুলনা ছাড়ি , বাস ভর্তি মানুষ এর মত আমিও বিহ্বল হয়ে পড়েছিলাম তার চোখের পানির ধারায়,সেটা দশ বছর আগের কথা , কি জানি , হয়ত প্রতিটা বিদায়ই শেষ হয় চোখের জলের অব্যাক্ত ভাষায়।
হাজারো উপহারের ভিড়ে আমি আজো তার দেওয়া পাঞ্জাবি পরে ঘুরে বেড়াই ঈদের দিনে , আমার মা বারে বারেই আন্য ঘরে চলে জান তার ফোন আসলে ....ঘুরে ফিরেই তার প্রিয় ফিরনি আর সেমাই চলে আসে আলোচনায়...."কেমন আছিস ?" এর পর বাবা আর কোনো কথা খুজে পান না ..... আমি শুধু হা হু করি তার পাহার ঘেরা নতুন বাড়ি , USB ফোন আর সী বীচ এর গল্প শুনে , আর হা হা করে হাসি , পাছে ধরা না পড়ে যাই।
শতকিয়া শেখার সময় একটা বর্ণ ছিল শুন্য। জীবনের প্রতি পদে পদে এই "শুন্যতা"র দিকে ফিরে যেতে হবে , জানলে হয়তো স্কুল ছেড়ে পালাতাম। আজ আর পালানোর উপায় নাই , তাইতো হাজারো শুন্যতার মাঝে তিলে তিলে তিলোত্তমা গড়ার চেষ্টায় বাদুরের মত ঝুলে ঝুলে বয়ে বেড়াই জীবন। আশার অতীত উচ্চতা নিয়ে সে ফিরে আসুক , আমাদের সবার মাঝে , আমাদের চেনা সুরভি হয়ে।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।