স্বাধীন দেশের রোবটিক নাগরিক এক অভিনভ ও অভিন্ন উপায়ে প্রতিবাদ জানিয়ে এক ইতিহাসের জন্ম দিয়েছে বাংলাদেশ। বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা সাতটায় দেশ ও বিদেশ জুড়ে বাংলাদেশী যে যেখানে ছিলেন সেখানেই জ্বালালেন মোমবাতি, ইহাই তো আলোর পরশমণি।
ভালবাসা দিবসকে সবাই উৎসর্গ করেছেন দেশপ্রেম আর বিদ্রোহের মধ্য দিয়ে।
"তরুণ প্রজন্ম এবারের ভালোবাসার সবটাই ঢেলে দিয়েছেন জাতির জন্য, দেশের জন্য"
দেশের প্রতি প্রগাঢ় ভালোবাসা নিয়ে মুক্তিযুদ্ধের বীর সন্তানদের হত্যাকারী রাজাকার, আলবদরদের ফাঁসির দাবিতে এ বহ্নিশিখার প্রজ্বালন করা হয়। নীরবতার শক্তির পর এবার বিশ্ব দেখেছে নতুন আলোর শক্তি।
এ আলো নিভবে না। প্রজন্ম চত্বরের লাখো নবপ্রাণে জেগেছে আন্দোলনের নতুন স্পন্দন। দাবি একটাই, 'রাজাকারমুক্ত বাংলাদেশ চাই, যুদ্ধাপরাধীদের ফাঁসি চাই। '
রাজাকার-আলবদররা এদেশকে অন্ধকারের দিকে ঠেলে দিয়েছিল। মোমবাতি প্রজ্বলনের মাধ্যমে সেই জাতিকে আবার আলোকিত করলো তরুণ সমাজ।
আগুনের শিখা আর নীরবতা যেন বাবরবার বলছে ‘মুক্তিযুদ্ধের বাংলায়/ রাজাকারদের ঠাঁই নাই। ’ বাংলার চারপাশ জুড়ে জ্বলে ওঠা এই আগুন নেভার নয় । যুদ্ধাপরাধীদের ফাঁসি না হওয়া পর্যন্ত এই আগুন জ্বলবেই ।
আমাদের দেশের সিংহভাগ মানুষ সহজ সরল এবং সাধারন মানুষ, যাদের চাহিদা খুব একটা বড় নয়। এই গনজাগরন সাধারন জনগনের অনুভুতি দিনদিন বিভিন্নভাবে প্রকাশ পাচ্ছে।
রিকশাচালক মিজান এর মন্তব্য: আমি চাই সরকার এদের ফাঁসি দেবে। রাজাকার, যুদ্ধাপরাধীদের তো বাঁচার অধিকার নাই। এতোদিন যে তারা বাঁইচ্যা আছে এটাই তো বড় কথা। এখন আবার যাবজ্জীবন দিছে। এটা কোনো সাজা হইল।
এখন তো কাদের মোল্লা আরামে থাকব আর খাইব। আবার বাইচ্যাও থাকল। মিজানের কথা শুনে অবাক হই। তিনি একের পর এক বলেই যাচ্ছেন। ভাই, যুদ্ধাপরাধীরা তো আমাদের দেশে শুধু মানুষ হত্যাই করেনি।
আরও কত অপকর্ম করেছে। এরা যেভাবে মানুষকে হত্যা করেছে, একইভাবে এদেরকেও গুলি করে মারা উচিত। 'ফাঁসি না দিলে তো তারা আবার মন্ত্রী হবে'
বীরাঙ্গনা রওশন আরা। তিনি যুদ্ধে আহতও হয়েছিলেন। গণজাগরণ মঞ্চে দাঁড়িয়ে অশ্রুসিক্ত কণ্ঠে বললেন, 'একাত্তরে রাজাকাররা আমার স্বামীকে ধরে নিয়ে হত্যা করে।
আমাকে ধরে নিয়ে পাশবিক নির্যাতন চালায়। আমি তার কোনো বিচার পাইনি। আমি অনেক জায়গায় এর বিচার চেয়েছিলাম। কেউ আমার কথা শোনেনি। তাই আজ এই গণজাগরণের প্রতিবাদী জনতার কাছে বিচার দিলাম।
' তিনি বলেন, 'আমার দুই ছেলে আজ এতিম। আমার বোনের স্বামী ছিল রাজাকার। সে আমাকে নির্বাসনে পাঠিয়েছিল। রাজাকারের বিচার এই বাংলার মাটিতে হতে হবে। যে সব রাজাকার এখনও প্রকাশ্যে চলাফেরা করছে, তাদের গ্রেফতার করতে হবে।
যারা যুদ্ধাপরাধীদের বিচার চায় না, ওরা বাংলার শত্রু। '
বীরশ্রেষ্ঠ মতিউর রহমানের স্ত্রী মিলি রহমান : শাহবাগের মহাসমাবেশ বলে আমাদের তরুণ প্রজন্ম জেগে উঠেছে। আমাদেরকে আর কেউ দাবিয়ে রাখতে পারবে না। আজ মনে হয় সেই একাত্তর, যখন আমরা দেশ স্বাধীন করেছি। আজ থেকে আমরা রাজাকারমুক্ত দেশ গঠন করবো, শিবিরমুক্ত স্বাধীন দেশ গড়বো।
জাতীয় জাদুঘরের সামনে গানের তালে তালে নাচছিলেন পঞ্চাশোর্ধ্ব এ বি এম সিদ্দিকুর রহমান। বললেন, ‘আমি বয়স্ক মানুষ। কিন্তু আশপাশে তরুণদের নৃত্য আর আবেগ দেখে আর নিজেকে ধরে রাখতে পারলাম না।
বাবার ফাঁসির দাবি নিয়ে বৃহস্পতিবার শাহবাগে এসেছিলেন অ্যাডভোকেট নাজমা সুলতানা। শাহবাগের গণজাগরণ মঞ্চে দাঁড়িয়ে নিজের বাবা রাজাকার আনোয়ার মাঝিসহ সব রাজাকারের ফাঁসির দাবি তোলেন তিনি।
যুদ্ধাপরাধীদের ফাঁসি চেয়ে স্লোগানও ধরেন তিনি। নাজমা সুলতানা বলেন, নিজের বাবা হলেও এই রাজাকারকে বাবা মানতে খুব কষ্ট হয়। সব সময় মনে হয় তিনি আমার বাবা নন। কোনো বাবা তার মেয়েকে এত অত্যাচার, নির্যাতন করতে পারেন না।
শাহবাগের মূল জমায়েতের খানিকটা দূরে মা-বাবা আর খালাতো বোনের সঙ্গে বসে ছিল পঞ্চম শ্রেণীর ছাত্র তানজিল ভূঁইয়া।
কখনো মাইকে ভেসে আসা স্লোগানের সঙ্গে তাল মেলাচ্ছিল আবার কখনো বা নিজেই স্লোগান ধরার চেষ্টা করছিল সে।
মা লতিফা আক্তার জানালেন, শাহবাগে আন্দোলন শুরু হওয়ার পর থেকেই তাঁর বাড়িতে মিছিল হয় নিয়মিত। টেলিভিশনে শাহবাগের আন্দোলন দেখে তানজিল স্লোগান শিখে নিয়েছে।
নতুন স্লোগানগুলোর মধ্যে রয়েছে
‘দড়ি ধরে দেব টান/ফাঁসি দিয়ে নেব জান,’
‘এমন রায় দিল কে/ কসাইটাকে ঝুলিয়ে দে’,
‘নিজামী-মুজাহিদ ভাই ভাই/এক রশিতে ফাঁসি চাই,
‘জামায়াত-শিবির রাজাকার/ রক্তচোষা জানোয়ার’,
‘আমরা আছি থাকব/সুখে-দুঃখে লড়ব’,
‘মেহেরুন্নেসা ক্ষমা চাই/ফাঁসির কোনো বিকল্প নাই’,
‘এমন রায়ে কাঁদছে চোখ/আমার না হয় ফাঁসি হোক’,
‘এসো ভাই এসো বোন/গড়ে তুলি আন্দোলন’।
রাজাকার ঝাঁটাপেটা করতে ৪০ ফুট ঝাড়ূ :রাজাকারদের ঝাঁটাপেটা করতে ৪০ ফুট লম্বা ঝাড়ূ স্থান পেয়েছে গণজাগরণ চত্বরে।
চারুকলার সামনে বিশাল আকারের এ ঝাড়ুটি শোভা পাচ্ছে। রাস্তার ল্যাম্পপোস্টের সঙ্গে ঝাড়ূটি দাঁড় করিয়ে রাখা হয়েছে। বিশাল আকারের ঝাড়ূটি ল্যাম্পপোস্ট ছাড়িয়ে আকাশের দিকে উঁকি দিচ্ছে। ঝাড়ূর এক অংশে লেখা রয়েছে, 'মঙ্গল আনো দেশের-দশের, রাজাকারের গুষ্টি ধরে জোরে জোরে ঝাঁটা মারো। ' রাজাকার পেটানোর জন্য বিশাল আকারের ঝাড়ূটিতে রয়েছে নানা নান্দনিকতাও।
এরই মধ্যে আন্দোলনকারীদের নজর কাড়তে সক্ষম হয়েছে ঝাড়ূটি। সবাই বলছেন, প্রতিবাদের এ ভিন্নতা গণজাগরণকে আরও প্রাণসঞ্চার করবে।
আজ এই গনজাগরন দেখে একটি ছোট্ট কথা মনে পড়লো: কয়েকমাস পূর্বে অনলাইনে বাংলা ব্লগ সন্বন্ধে গুগলে সার্স করে আড্ডাব্লগ নামে ব্লগের সন্ধান পাই, ব্লগের স্লোগান ছিল প্রযুক্তিই হউক দিন বদলের হাতিয়ার। বাস্তবিকভাবেই বর্তমান গনজাগরনের মূল চালিকা শক্তি ও হাতিয়ার প্রযুক্তি। তাই প্রযুক্তিই বদলে দিল সমগ্রজাতীর চাওয়া পাওয়ার হিসেব নিকেশ।
শুরু হল নতুন প্রজন্মের নতুন যুদ্ব "শাহবাগে সাইবার যুদ্ধ "
আমি স্যালুট জানাই প্রত্যেক সাইবার সৈনিকদের, যাদের অক্লান্ত পরিশ্রমে দিনের পর দিন সফলভাবে এগিয়ে যাচ্ছে এই জন বিপ্লব।
সর্বজন নিন্দিত রাজাকারের রাজা গু আজম এর বক্তব্য - পাকিস্তান আর্মির খেদমত করেছি, এছাড়া কোন অপরাধ করিনি ! ! !
গুতামারেন ভিডিও লিংক: Click This Link
বর্তমানে স্লোগানে মুখরিত শাহবাগ চত্বর:
বীর বাঙালির হাতিয়ার-গর্জে উঠুক আরেকবার,
রাজাকারের আস্তানা-জামায়াতের আস্তানা ভেঙে দাও গুঁড়িয়ে দাও,
জ্বালো-জ্বালো আগুন জ্বালো,
নিজামী কাদের মোল্লা তুই রাজাকার, তুই রাজাকার।
'তোমার আমার ঠিকানা, পদ্মা মেঘনা যমুনা',
'একাত্তরের হাতিয়ার, গর্জে উঠুক আরেকবার',
'সাম্প্রদায়িকতার আস্তানা ভেঙে দাও, গুঁড়িয়ে দাও',
'পাকিস্তানের প্রেতাত্মারা, পাকিস্তানেই ফিরে যা',
'বাংলাদেশের মাটিতে জামায়াত-শিবিরের ঠাঁই নাই',
'আর কোনো দাবি নাই, রাজাকারের ফাঁসি চাই',
'জামায়াতে ইসলাম, মেড ইন পাকিস্তান', 'জয় বাংলা'
জয় হইক আপামর সাধারন জনতার। ।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।