আমি মাঝে মাঝেই বিভ্রান্ত বোধ করি, বিশেষত যেকোনো আলটপকা মন্তব্য পড়লে, কিংবা প্রায় প্রায়োগিকতাবিহীন কোনো তত্ত্বকথা শুনলে।
কৃষ্ণগহ্বর অন্তত শক্তির উৎস, ভবিষ্যতের মানুষদের শক্তির অন্যতম উৎস হয়ে উঠবে কৃষ্ণগহ্বর কিংবা ব্ল্যাকহোল। বাক্যের উপসংহার পড়ে চিন্তিত হলাম। পৃথিবীতে এখনকার অধিকাংশ লড়াইয়ের প্রধানতম নেপথ্য কারণ শক্তিনিশ্চয়তা কিংবা জ্বালানী নিশ্চয়তা, সুতরাং ব্ল্যাকহোল যদি তেমন অনন্ত শক্তির উৎস হয়ে উঠে তবে মহাবিশ্বে ব্ল্যাকহোল দখলের জন্য পৃথিবীতে লড়াই শুরু হবে? শুরু হবে কুটনৈতিক তৎপরতা? অর্থ, প্রলোভন এবং শক্তি প্রদর্শন করে এসব দখলের লড়াই শুরু হবে?
বিষয়টার অসারতা চিন্তা করে নিজের কাছেই হাস্যকর লাগে সবকিছু। কৃষ্ণগহ্বর মহাবিশ্বের সবচেয়ে অদ্ভুতুরে একটা ঘটনা, ভারী নক্ষত্রের আভ্যন্তরীণ চাপ যখন মহাকর্ষের কাছে পরাজিত হয় নক্ষত্র কেন্দ্রে বিলীন হয়ে যায় , কিংবা তার হয়তো একটা নির্দিষ্ট সীমা থাকে, যা আমরা বাইরে থেকে নির্ধারণ করতে পারি না।
আমাদের কাছে মহাবিশ্বের সেই স্থানের কোনো তথ্য থাকে না, মূলত তথ্যহীনতাই কৃষ্ণগহ্বরকে এতটা আকর্ষণীয় করে তুলেছে।
মহাকর্ষ আদতে স্থান কালের বক্রতার একটি পরিমাপ, বস্তুর উপস্থিতি কিভাবে তার চারপাশকে প্রভাবিত করে, সেটাই মহাকর্ষের মূল পাঠ্য। সেখানে বস্তু অন্য সকল স্থানের মতোই বাইরের কোনো প্রভাব না থাকলে সরল পথে চলতে থাকে, তবে যেহেতু বস্তুর উপস্থিতি স্থানকে প্রভাবিত করে সুতরাং বস্তুর সরল পথ সে সমতলের উপরে সরল পথ হলেও সেটা অন্য স্থানের প্রেক্ষিতে বক্রআকার ধারণ করে। এবং কৃষ্ণগহ্বরের এই বক্রতার পরিমাণ এতটাই বেশী যে আলো একবার সেখানে পতিত হলে আর বাইরে বের হয়ে আসতে পারে না।
হকিং হিসেব কষে দেখিয়েছেন কৃষ্ণগহ্বর ততটা অন্ধকার নয় মোটেও, বরং কৃষ্ণগহ্বরও কিছু পরিমাণ শক্তি নিঃসরণ করে, সুতরাং কৃষ্ণগহ্বর অন্য কোনো বস্তুর অনুপস্থিতিতে নিজেই শক্তিবিকীরণ করে প্রকাশ্য হয়ে উঠতে পারে।
এইসব কৃষ্ণগহ্বরের প্রভাব এবং চরিত্র নিয়ে বিশ্লেষণ করবার প্রয়োজন নেই আদতে, মূলত সংশয় হলো এই কৃষ্ণগহ্বর মানুষের পরবর্তী শক্তির উৎস হয়ে উঠবে এই জ্ঞানী উপসংহার নিয়ে। মহাকর্ষের অদ্ভুত বৈশিষ্ঠ্য হলো এটা সকল ভরের বস্তুকে আকর্ষণ করে, কৃষ্ণগহ্বরের মহাকর্ষ শক্তি প্রচণ্ডমাত্রায় বেশী , সুতরাং আমরা মন চাইলো আর গবেষণাগারের পাশে একটি কৃষ্ণগহ্বর বেধে রেখে কিংবা তৈরি করে শক্তি উৎপাদন করতে শুরু করলাম, এমনটা ঘটবে না। পারমাণবিক প্রক্রিয়ায় শক্তি উৎপাদন প্রক্রিয়াও নিয়ন্ত্রনের বাইরে চলে গেলে পারমাণবিক বিস্ফোরণে প্রচণ্ড ক্ষতির কারণ হয়ে দাঁড়ায়।
আমাদের বিজ্ঞানীরা আদতে কি প্রক্রিয়ায় কৃষ্ণগহ্বর থেকে শক্তিআহরণের কথা ভাবছে এটা ভাবতে ইচ্ছা করে। তারা এমন কোনো বস্তু এখনও আবিস্কার করতে পারে নি যা মহাকর্ষ শক্তিকে বিকর্ষণ করে কিংবা এন্টিগ্রাভিটি ম্যাটার আদতে গবেষণাগ্রন্থের পাতার বাইরে অন্য কোথাও উপস্থিত নেই, এবং সেটা এক ধরণের সারাংশ, আমাদের বিজ্ঞান হলো আমাদের চেনা জগতকে ব্যখ্যা করবার একটা প্রক্রিয়া, সেটা নির্দিষ্ট কিছু নিয়ম মেনে কিছু যুক্তি মেনে একটা নিয়মতান্ত্রিকতা স্থাপন করে, সে নিয়মতান্ত্রিকতার ভিত্তিতে আমরা অধিকাংশ পরিচিত ঘটনাকে ব্যখ্যা করতে পারি।
তা সকল বিষয়কে ব্যখ্যা করতে পারে না, এবং যখনই ব্যখ্যা করতে ব্যর্থ হয় বিজ্ঞান তখন নতুন নতুন অনুমাণ উপস্থিত হয়, মহাকর্ষীয় বিকর্ষণের ধারণাও তেমনই একটি ধারণা। চেনা পৃথিবীতে এটার অস্তিত্ব পাওয়া যায় নি, পারমাণবিক পরিবেশে এবং সৈরজগতের মতো বিশাল আকৃতিতেও এমন কোনো বস্তুর উপস্থিতি নিশ্চিত করা যায় নি যা মহাকর্ষীয় বিকর্ষণ অনুভব করে, সুতরাং আমাদের বিশালতার মাত্রা বাড়িয়ে একটা গ্যালাক্সি করলে সেটা বিকর্ষক চরিত্রধারণ করবে এমন অনুমাণটা একটু বাড়াবাড়ি হয়ে যায়।
এরপরেও একটা কৃষ্ণগহ্বরকে নিয়ন্ত্রনের জন্য এমন কোনো নিরাপত্তাকবচ আমাদের প্রয়োজন, কিংবা যদি আমরা কৃষ্ণগহ্বরীয় বিকিরণকে কাজে লাগাতে চাই তবে আমাদের পৃথিবীকে টেনে নিয়ে যেতে হবে এমন কোনো একটা বড় কৃষ্ণগহ্বরের কাছাকাছি, এমন একটা নিরাপদ দুরত্বে তাকে স্থাপন করতে হবে, যেনো কৃষ্ণগহ্বরের অনন্তক্ষুধার বলি না হয় আমাদের পৃথিবী এবং তার থেকে নির্গত বিকিরণ আমরা পৃথিবীতে আটক করে বিদ্যুৎ উৎপাদন করতে পারি। এমন অদ্ভুত অঙ্ক হয়তো কোনো দিন মেলানো সম্ভব হবে,
এইসব দুর্বোধ্য অঙ্কের হিসেব কষে কষে যদি কিছু বিজ্ঞানী গবেষণার প্রয়োজনীয় অর্থ সংস্থান করতে পারেন এবং তার তত্ত্বাবধানে থেকে গবেষণা করা ছাত্রদের জীবিকার ব্যবস্থা করেন তবে এই অলীক উদ্ভট দাবিকে সমর্থন দিতে আমার কোনো আপত্তি নেই।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।