আমাদের দেশ, আমাদের সেনাবাহিনী আমাদের সার্বভৌমত্ব আমাদের অখন্ডতা নিয়ে এত বড় মন্তব্য এবং ষড়যন্ত্র করার সাহস তারা পাচ্ছে কি ভাবে ? সময় হয়েছে এদেশের প্রতিটি মানুষের সচেতন হবার । আসুন জাতীয়তাবোধে উদ্বুদ্ধ হই । প্রতিহত করি সকল বাধা আর ষড়যন্ত্রকারীদের।
দৈনিক সংগ্রাম - ১০/০৮/২০০৯ এ প্রকাশিত একটি লেখা আপনাদের জন্য দিলাম ।
সেনা প্রত্যাহার শুরু হতে না হতেই সন্ত্রাসের পথে পা বাড়িয়েছে শান্তি বাহিনী
সরকারি প্রশ্রয়ে সন্তু লারমা সেনাবাহিনীকে সন্ত্রাসী বলার দুঃসাহস দেখাচ্ছেন
বহুদিন পর আবারও দৃশ্যপটে এসেছেন সন্তু লারমা।
এসেই শোরগোল তুলেছেন তিনি। বিশেষ ব্যবস্থাপনায় পর পর আয়োজিত খান তিন-চারেক আলোচনা সভায় তিনি বলে বসেছেন, ‘সেনা শাসন' শুধু নয়, পার্বত্য চট্টগ্রামে নাকি ‘সেনা সন্ত্রাস'ও চলছে! সমগ্র পার্বত্য অঞ্চল থেকে সেনাবাহিনী প্রত্যাহারের দাবি জানিয়েছেন তিনি। তারিখও বেঁধে দিয়েছেন সন্তু লারমা। বলেছেন, আগামী ৩১ ডিসেম্বরের মধ্যে সকল সেনা প্রত্যাহার করতে হবে। পার্বত্য চট্টগ্রামে কথিত ‘সেনা শাসন' ও ‘সেনা সন্ত্রাস' কতটা দুর্বিষহ ও ভয়াবহ তা বোঝানোর জন্য সন্তু লারমা কেয়ারটেকার সরকারের দুই বছরকে উদাহরণ বানিয়েছেন।
বলেছেন, পার্বত্য চট্টগ্রামের অধিবাসীরা নাকি বাংলাদেশের ৩৮ বছর ধরেই ‘সেনা শাসনের' অধীনে রয়েছে এবং ‘সেনা সন্ত্রাসের' শিকার হচ্ছে। সেনা প্রত্যাহার প্রসঙ্গে সন্তু লারমা বলেছেন, যেভাবে প্রচার করা হচ্ছে তা নাকি সত্য নয়। পাবর্ত্য জেলাগুলোতে অপারেশন উত্তরণের নামে সেনা কর্তৃত্ব নাকি এখনো বলবৎ রয়েছে।
সন্তু লারমা অবশ্য একাকী দৃশ্যপটে আসেননি। তার সমর্থনে লাফিয়ে নেমেছেন সরকারের অংশ রাশেদ খান মেনন এবং হাসানুল হক ইনু।
রাশেদ খান মেননও সন্তু লারমার কণ্ঠে কণ্ঠ মিলিয়ে বলেছেন, পার্বত্য চট্টগ্রামে নাকি ‘এক ধরনের' সেনা শাসন চলছে এবং সেটা বেসামরিক প্রশাসনের সঙ্গে সাংঘর্ষিক। ইনুও কম শোনাননি। তিনি বলেছেন, পার্বত্য চট্টগ্রামের ‘উপজাতীয়রা' নাকি ‘নিজ দেশে পরবাসী' অবস্থায় রয়েছে! ইনু তাই পার্বত্য চট্টগ্রামে সেনা শাসনের অবসান ঘটানোর দাবি জানিয়েছেন। ওদিকে ইনু-মেননদের অনুসরণ করেছেন সিপিবির নেতা মঞ্জুরুল আহসান খান। তিনি বলেছেন, পার্বত্য চট্টগ্রামে এমন কোনো পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়নি যার জন্য সেখানে সেনা মোতায়েন করতে হবে।
সন্তু লারমার পাশাপাশি ইনু-মেননদের বক্তব্য দেশপ্রেমিকদের মধ্যে গভীর উদ্বেগের সৃষ্টি করেছে। এর প্রথম কারণ হলো, দাবি জানানোর জন্য এমন এক সময়কেই সন্তু ও ইনু-মেননরা বেছে নিয়েছেন, যখন খাগড়াছড়ির মানিকছড়িসহ বিভিন্ন স্থান থেকে সেনাক্যাম্প গুটিয়ে নেয়া শুরু হয়েছে। এ থেকেই বোঝা গেছে, সন্তু লারমাদের উদ্দেশ্য আসলে নতুন করে ঝামেলা বাধানো এবং সেনাবাহিনীকে উস্কানি দেয়া। উল্লেখ্য, কোনো দাবি ওঠারও আগে ১৯ জুলাই সরকারের এক ঘোষণায় জানানো হয়েছে, পার্বত্য শান্তি চুক্তির অংশ হিসেবে সেপ্টেম্বরের মধ্যে পার্বত্য চট্টগ্রাম থেকে এক ব্রিগেড সেনা প্রত্যাহার করা হবে। সরকার নিজে থেকে যখন সেনা প্রত্যাহার শুরু করেছে ঠিক তেমন এক সময়ে হঠাৎ সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে সোচ্চার হয়ে ওঠার তৎপরতা অবশ্যই স্বাভাবিক নয় বরং প্রশ্নসাপেক্ষ, রহস্যময় এবং যথেষ্ট তাৎপর্যপূর্ণ।
লক্ষ্যণীয় যে, সন্তু লারমা শুধু ‘সেনা শাসন' পর্যন্ত এসেই থেমে যাননি, ‘সেনা সন্ত্রাসের' গুরুতর অভিযোগও তুলেছেন। এর মধ্যদিয়ে তিনি বাংলাদেশের পুরো সেনাবাহিনীকেই ‘সন্ত্রাসী' হিসেবে চিহ্নিত করেছেন। যে কোনো মূল্যায়নে এ এক চরম মিথ্যাচার এবং শাস্তিযোগ্য অপরাধ। বড়কথা, অভিযোগ যিনি করেছেন সে সন্তু লারমা নিজেই বহু বছর ধরে পার্বত্য চট্টগ্রামের প্রধান সন্ত্রাসী হিসেবে চিহ্নিত হয়ে আসছেন। তার বিরুদ্ধে ৩০ হাজার নিরীহ মানুষকে হত্যা করার অভিযোগ রয়েছে! রয়েছে পার্বত্য চট্টগ্রামকে বাংলাদেশ থেকে বিচ্ছিন্ন করার লক্ষ্য নিয়ে সশস্ত্র কর্মকান্ড চালানোর প্রমাণিত অভিযোগও।
এদিকে ইনু-মেননরা আবার সন্তু লারমাকেও ছাড়িয়ে যাওয়ার চেষ্টা করেছেন। সেনা বা সামরিক শাসন বিরোধী আন্দোলনের মধ্য দিয়ে রাজনীতিতে প্রতিষ্ঠাপ্রাপ্ত মেনন ‘এক ধরনের' সেনা শাসন আবিষ্কার করে রীতিমতো ‘তাক' লাগিয়ে দিয়েছেন। কারণ, সেনা শাসন- সেনা শাসনই। এর মধ্যে কোনো ‘ধরন' থাকার প্রশ্ন কেবল তারাই তুলতে পারেন যাদের মধ্যে অন্য কোনো ‘ধরনের' উদ্দেশ্য থাকে। একই বিশেষ কেন্দ্রের শেখানো ‘বুলী' কপচাতে হয়েছে বলেই মেননের পক্ষে সম্ভবত রাজনীতি ও রাষ্ট্রবিজ্ঞানের স্বীকৃত সূত্র ও ব্যাখ্যার ভেতরে থাকাটা সম্ভব হয়নি।
সন্তু লারমার দাবি ও বক্তব্যকে যুক্তিগ্রাহ্য ও গ্রহণযোগ্য করে তোলার জন্য মেননকে তাই ‘এক ধরনের' সেনা শাসন খুঁজতে হয়েছে। আরেক ‘বিপ্লবী' রাজনীতিক হাসানুল হক ইনুও জবর শুনিয়েছেন। তিনি শুধু কথিত সেনা শাসনের বিরোধতাকেই যথেষ্ট মনে করেননি। বলে বসেছেন, ওই অঞ্চলের ‘উপজাতীয়রা' নাকি ‘নিজ দেশে পরবাসী' হয়ে পড়েছে! উল্লেখ্য, গারো, হাজংসহ দেশের অন্য কোনো উপজাতীয়দের জন্য কিন্তু ইনু-মেননদের দরদ কখনো এভাবে উথলে উঠতে দেখা যায়নি।
সন্তু লারমা বললেও এবং তার সমর্থনে ইনু-মেননরা লাফিয়ে এসে পাড়া মাতাতে চাইলেও সত্য কিন্তু মোটেও তেমন নয় যেমনটি তারা বোঝাতে চাচ্ছেন।
কারণ, পার্বত্য চট্টগ্রামে কোনো ‘ধরনের' সেনা শাসনই চলছে না- অমন প্রশ্ন তোলারই কোনো অবকাশ নেই। দেশের অন্য সকল অঞ্চলের মতো পার্বত্য চট্টগ্রামও সরকারি তথা অসামরিক প্রশাসনের অধীনেই রয়েছে। সেখানে সেনাবাহিনীকে রাখতে হয়েছে আইন-শৃংখলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখার জন্য। সীমা ছাড়ানো খুন-খারাবি, অপহরণ-ছিনতাই-ডাকাতি এবং ভূমি দখলের মতো ভয়ংকর ধরনের বিভিন্ন অপরাধ সংঘটনের মধ্য দিয়ে সেনা মোতায়েনের কারণও সন্তু লারমারাই সৃষ্টি করেছেন। তারা যদি পরিস্থিতিকে স্বাভাবিক করেন তাহলেই শুধু সেনা প্রত্যাহার করার কথা চিন্তা করা যেতে পারে।
তার আগে নয়। উল্লেখ্য, পার্বত্য চট্টগ্রামে বিডিআরের তিনটি ক্যাম্প থাকলেও পিলখানা হত্যাকান্ডের পর থেকে ক্যাম্পগুলোকে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের জন্য যথেষ্ট মনে করা হচ্ছে না। পুলিশের পক্ষেও আইন-শৃংখলা রক্ষা করা সম্ভব নয়। এজন্যই সেনা বাহিনীকে রাখতে হচ্ছে। তাছাড়া শান্তি চুক্তিতেও বলা হয়েছে, পার্বত্য চট্টগ্রামে ছয়টি সেনা ক্যাম্প থাকবে।
বড়কথা, বাংলাদেশের অবিচ্ছেদ্য অংশ বলেই দেশের অন্য অনেক এলাকার মতো পার্বত্য চট্টগ্রামেও সেনা অবস্থান রয়েছে। উদাহরণ দেয়ার জন্য টাঙ্গাইলের কথা উল্লেখ করা যায়। এক সময় টাঙ্গাইলে কোনো সেনানিবাস বা স্থায়ী সেনা অবস্থান ছিল না। বিগত কয়েক বছরে জেলায় সেনানিবাস স্থাপিত হয়েছে, সেনা বাহিনীও অবস্থান নিয়েছে জেলার বিভিন্ন স্থানে। তাই বলে কি টাঙ্গাইল জেলার অধিবাসীরা সেনানিবাস ও সেনা অবস্থান সরিয়ে নেয়ার দাবি তুলেছে? নাকি তেমন দাবি জানালেই সরকারকে তা মেনে নিতে হবে? শুধু দেশের কথাই বা বলা কেন? উত্তর-পূর্ব ভারতের সাতটি রাজ্যেও বহু বছর ধরেই চার লাখের বেশি ভারতীয় সেনা তৎপরতা চালাচ্ছে।
ওই সাত রাজ্যের অধিবাসীরা কিন্তু কখনো অভিযোগ তোলেনি যে, ভারত সেখানে ‘সেনা শাসন' চালাচ্ছে। অন্যদিকে সন্তু লারমা শুধু সেনা শাসন চলছে বলেই থেমে যাননি, ‘সেনা সন্ত্রাস' চালানো হচ্ছে বলেও গুরুতর অভিযোগ তুলেছেন। সেনাবাহিনী কতদিন কোথায় থাকবে সেটা সরকার নির্ধারণ করবে। এ ব্যাপারে সন্তু লারমার মতো একজন চিহ্নিত সন্ত্রাসীর কথা বলার কোনো সুযোগ থাকতে পারে না। কিন্তু সন্তু লারমা সেনা প্রত্যাহারের তারিখও নির্ধারণ করে দিয়েছেন! এদিকে দেশপ্রেমিকদের মধ্যে যে অকারণে প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হয়নি সেকথার প্রমাণ পাওয়া যাচ্ছে সেনা প্রত্যাহার কার্যক্রম শুরু হওয়ার প্রথম দিনটি থেকেই।
সন্তু লারমার ‘সুযোগ্য' অনুসারীরা পার্বত্য চট্টগ্রামের বাঙ্গালী অধিবাসীদের ওপর দমন-নির্যাতন চালাতে আরম্ভ করেছে। অনেককে এরই মধ্যে নিজেদের বাসাবাড়ি খেকে উৎখাতও করে ফেলেছে। শুধু তা-ই নয়, মসজিদে আযান দেয়ার ওপর তারা নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে, কোনো কোনো স্থানে ইমাম ও মুসল্লীদের ওপর হামলাও চালিয়েছে তারা। এসব ঘটনার কোনো একটিকেই বিচ্ছিন্ন মনে করার সুযোগ নেই। কারণ, সন্তু লারমারা অতীতেও এ ধরনের এবং এর চাইতেও মারাত্মক অনেক ঘটনা ঘটিয়েছেন।
তারা হাজার হাজার নিরীহ মানুষকে হত্যা ও উৎখাত করেছে। এভাবে সন্তু লারমারাই আসলে সেনা বাহিনীকে পার্বত্য চট্টগ্রামে অবস্থান নিতে বাধ্য করেছিলেন। বর্তমান পর্যায়েও তারা সরকার ও সেনাবাহিনীর সদিচ্ছার প্রতি সম্মান দেখাচ্ছেন না। ক্ষমতাসীনদের গোপন সমর্থন ছাড়া সন্তু লারমার পক্ষে প্রকাশ্যে সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে প্রচারণা চালানো সম্ভব কিনা, সে প্রশ্ন যেমন উঠেছে, তেমনি প্রশ্ন উঠেছে ইনু-মেননদের ভূমিকা নিয়েও। পর্যবেক্ষকরা মনে করেন, সেনাবাহিনীকে বিতর্কিত করার উদ্দেশ্য নিয়েই এ তৎপরতা শুরু হয়েছে।
সরকারের প্রশ্রয় ছাড়া এটা সম্ভব নয়। দেখা যাচ্ছে, সেনা প্রত্যাহার শুরু হতে না হতেই সন্ত্রাসের পথে পা বাড়িয়ে তারা বরং বুঝিয়ে দিচ্ছেন যে, যুক্তিসঙ্গত কারণেই সেনাবাহিনীকে পার্বত্য চট্টগ্রামে অবস্থান নিতে হয়েছিল এবং সেখানে এখনো সেনাবাহিনীর অবস্থান করাটা জরুরি।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।