সবাই রাজকপাল নিয়ে যেমন জন্মায় না, তেমনি সবার মৃত্যু একই রকম হয় না। আপনি যদি বিখ্যাত কেউ হন, তবে ৩-৪ দফা আপনার জানাজা হবে, বিদেশ থেকে কেউ আসবে, তাই বারডেমের হিমঘরে লাশ থকবে ১-২দিন, হেলিকপ্টারে করে লাশ উড়িয়ে গ্রামের বাড়ীতে জানাজা পড়ানোর জন্য নিয়ে যাওয়া হবে, সংসদভবনের দক্ষিণ প্লাজায় জানাজা, গুলশানে জানাজা, দলীয় অফিসে জানাজা, সম্মিলিত সাংস্কৃতিক পরিষদের উদ্যোগে শ্রদ্ধাজ্ঞাপন, কালো ব্যাজ ধারণ আরো কত কি? সবাই মাড়দেয়া ইস্ত্রিকরা সাদা পাঞ্জাবী পড়ে জানাজা পড়তে আসবে, আপনার জন্য শোকবই খোলা হবে, বিভিন্ন পত্রিকায় ব্যাংক বীমা কোম্পানীগুলো বড় বড় বিজ্ঞাপন দিয়ে শোক প্রকাশ করবে।
আর যদি আপনি সাধারণ কেউ হন, তবে আপনার সাধারণ মৃত্যুতে কারো কোন মাথাব্যাথা নাই, যদি কোন দুর্ঘটনাতে মারা যান, তবে হয়ত পত্রিকায় আপনার নামটা আসবে সাথে বয়স, অনেক সময় নামটাও আসে না। মৃত্যুটা একটা সংখ্যা হয়ে যায় মাত্র। কোন রাজনৈতিক কর্মসূচীতে মারা গেলে ২-১দিন ফলোআপ থাকে হয়ত।
মারা যাওয়ার পর কেউ আপনার নাম মনে রাখে না, কারণ আপনি একজন সাধারণ মানুষ। আগে এসব চিন্তা করতাম না, কিন্তু ইদানিং কেন জানি একটু ভয় লাগে। আজকে সারাদিন বাসাতেই ছিলাম, প্রতিটা ঘন্টার খবর দেখেছি টিভিতে। প্রত্যেক খবরেই দেখানো হচ্ছে মনিরের মৃত্যু সংবাদ।
আমি মোটেও সহ্য করতে পারছিলাম না এই সংবাদটা।
বার বার চ্যানেল পরিবর্তন করি। এই খবরটা আমি এখনো পুরোটা দেখি নাই। বুকের ভেতরটা কেমন জানি করছে। বাকী আট-দশটা মৃত্যুর মতো মনিরের মৃত্যুটা শুধু একটা নাম কিংবা সংখ্যায় পরিণত হবে একসপ্তাহ পরেই। ভয় পাই ঐখানেই, এই মনিরের মতো পরিণতি যে কোন সময় আমারও তো হতে পারে।
মানুষ মনে হয় পাশাবিক হয়ে যাচ্ছে দিন দিন, আর আমার নিজেরই ঘৃণা জন্মেছে মানুষ প্রজাতির উপর। নিজের উপর।
আমি আর কিছু লিখতে পারছি না, শুধু বলতে ইচ্ছে করছে, এদেশের মানুষগুলো দিন দিন অমানুষ হয়ে যাচ্ছে।
মনির, আমাকে ক্ষমা করো, আমার দেশেরই কিছু অমানুষের জন্য তোমার এই পরিণতি, আমি সমগ্রদেশবাসীর পক্ষ থেকে ক্ষমাপ্রার্থী।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।