খুব একা একা লাগছে মোহনার। বাংলাদেশ যেতে ইচ্ছা করছে। আব্বু আম্মু কে কতদিন দেখে না। এখানে থাকতে, এভাবে একা একা থাকতে একদম ভাল লাগে না মোহনার। তার পরও দিন কেটে যাচ্ছে।
ব্যাস্তময় একটা জীবন, যে জীবনে বিনোদন নাই। বিনোদন বলতে একটা ই, অনলাইন।
মোহনা ল্যপটপ এ কাজ করছে। Yahoo messenger সব সময়ই open থাকে। অনলাইনে কাউকে দেখলে একাকিত্বটা কিছুটা হলেও দূর হ্য়।
হাসান অনলাইন এ আসল। এসেই মোহনাকে knock করল,
হাসান: কি করো?
মোহনা: এইতো পড়াশোনা করি। তোমার কি খবর?
হাসান: বাসায় গেছিলাম, একটু আগে মেস এ ফিরলাম। আম্মুকে তোমার ছবি দেখালাম, কাল রাতে তোমার গাওয়া যে গান ২টা দিয়েছ, সেগুলো শুনালাম।
মোহনা: হায় হায়।
ওগুলো গান তো পচা হয়েছে। আমি বাসায় বসে বসে রেকরডিং করেছি।
হাসান: চুপ, অনেক সুন্দর হয়েছে। আম্মু তোমার ছবি দেখে বলেছে তুমি নাকি অনেক সুন্দর হয়েছ।
মোহনা: হাহাহাহাহা।
তাই নাকি? তুলির আমার কথা মনে আছে? ও কি অনেক বড় হয়ে গেছে?
হাসান: হুম, তোমার কথা একটুও ভুলেনি। তোমার সাথে কথা বলবো, দাড়াও কল দেই।
------------------------------
মোহনা: কি হল? কল দিলে কেন? অনলাইনে তো কথা বলছিলাম এ।
হাসান: উহুম, চ্যাট করতে ভাল লাগছে না। কথা বলতে ইচ্ছা করছে তোমার সাথে।
মোহনা: তুমি তো yahoo তেই কল দিতে পারতে।
হাসান: হেড ফোন নাই। কাল নিয়ে আসব।
মোহনা: আচ্ছা, বলতো, তোমার Yahoo id এমন কেন? "নীলাকাশেরশূণ্যতা". এটা কেন? এমন দুখী দুখী ভাব কেন?
হাসান: হাহাহাহাহাহা। অনেক শূণ্যতা ছিল, তাই।
বাদ দাও আমার কথা। জান, আমার এখনো মাঝে মাঝে মনে হয়, আমি কি সত্যি এ তোমার সাথে কথা বলছি? তোমাকে এতো খুজেছি। তোমরা চলে যাবার পর, আমি প্রিন্স কে দিনাজপুর পাঠিয়েছিলাম, আংকেলের অফিসে। কিন্তু খুজে পায় নি। আমি তোমাকে অনেক চিঠি লিখেছি।
সেগুলো, খামে ভরে তোমার নাম, আংকেলের নাম আর আংকেলের অফিসের নাম লিখে পোষ্ট করে দিতাম। তুমি তো জান, আমি কবিতা লিখতাম। আমি অনেক কবিতা লিখেছি, সেগুলোর একটাও আমার কাছে নাই। অনেক ছবি আকতাম, সেগুলোর কোনটাই আমার কাছে নাই। সব খাম এ ভরে তোমাকে পোষ্ট করে দিয়েছি।
আকাশের ঠিকানায় চিঠি লেখা যাকে বলে। তারপর, তোমার প্রতি জন্মদিনে তোমাকে খবরের কাগজে উইশ করতাম। ভাবতাম, তোমার চোখে একদিন না একদিন তো পড়বেই। মজার কথা কি জান? এইচ এস সি এর পর যখন ঢাকা ইউনিভার্সিটি তে পরীক্ষা দিতে যাই, তখন ভেবেছিলাম, তুমি তো নিশ্চয়ই যাবে পরীক্ষা দিতে। ভেবেছিলাম, পোষ্টারিং করবো, সব ফ্যাকাল্টির সামনে লাগিয়ে দিব।
" মোহনা তুমি কথায়" এটা লিখে হাহাহাহাহা। তার পর, একদিন টিভি তে দেখি, একটা program হচ্ছে। সেখানে সবাই friends দের জন্মদিনে উইশ করছে। আমি সেখানেও তোমাকে উইশ করেছি, ভেবেছি, তুমি যদি থাকো টিভির সামনে। এফ এম রেডিও তে তোমাকে খুজেছি।
তার পর, যখন ভোটার আইডি এর ডিউটি তে ছিলাম, তখন তোমার নাম দিয়ে অনেক সার্চ করেছি। আমার সব আর্মি বন্ধুদের বলে দিয়েছিলাম, মোহনা নাম এর কাউকে পেলে আমাকে যেন তারা জানায়। অনলাইনের সব সাইট গুলোতে সার্চ করতাম।
মোহনা: এত খুজেছ আমাকে? কেন?
হাসান: কেন? হাহাহাহাহাহাহা। যাক, বাদ দাও, তোমার কথা বলো।
খুব জানতে ইচ্ছা করে, তুমি কেমন ছিলা এই ১৪ বছর। শোনো, তোমার অনেক ছবি দিবা আমাকে।
মোহনা: আমার কথা বলার তেমন কিছু নাই। আমার ছবি দিয়ে তুমি কি করবা?
হাসান: দেখব। আমি কোন কথা শুনব না।
ছবি দিতেই হবে।
মোহনা: আচ্ছা, দিব, এবার ফোন রাখ, ঘুমাও।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।