৪ঠা জানুয়ারী, মোহনাদের যাবার দিন ঠিক হয়েছে। পরিচিত সবাই দেখা করতে আসছে বাসায়। এই জায়গা টা ছেড়ে যেতে মোহনার খুব কষ্ট হচ্ছে। আজ ২ তারিখ, আর ২ দিন পর আর এখানে থাকবে না ওরা। মোহনার খুব ইচ্ছা করছে হাসানের সাথে দেখা করতে।
সেই দিনের পর আর দেখা হয় নি। হাসান বলেছিল আবার আসবে কিন্তু এলনা। ও জানেও না, আর ২ দিন পর মোহনারা চলে যাচ্ছে। হাসানের সাথে শেষবার দেখা করার ইচ্ছাটা মোহনা দমন করতে পারল না। একবার শেষ চেষ্টা করতে চায়।
আম্মুকে বলল, সে তার কিছু বন্ধু-বান্ধবীর সাথে দেখা করতে চায়। মোহনাকে সায়লা একা কোথাও যেতে দেন না, সারা সময় মেয়ের সাথে ছায়ার মত থাকেন। কিন্তু এখন তো তিনি যেতে পারবেন না বাইরে, বাসায় অনেক কাজ। তিনি যেন মোহনার অনুভুতিটা অনুভব করলেন, মেয়ের ইচ্ছাটা পূরন করতে চাইলেন। বললেন, " তোমার ছোট চাচ্চুকে বলো, তোমাকে নিয়ে যাবে"।
মোহানা এক দৌড়ে চলে গেল।
চাচ্চুর সাথে মোটরসাইকেলে করে বেড়িয়ে পড়ল। প্রথমে গেল অনুদের বাসায়। অনুর সাথে দেখা করে ওরা গেল হাসানদের বাসায়। কিন্তু হায়! হাসান বাসায় নাই।
শুধু নানী আছেন বাসায়। হাসান ওর আম্মুর সাথে ময়মনসিং গেছে কোচিং এ। মোহনার যেন কান্না পেয়ে গেল। নানী কে বলে আসল, ৪ তারিখে ওরা চলে যাচ্ছে। মনে মনে ভাবল, হাসান অবশ্যই যাবে মোহনার সাথে একবার দেখা করতে।
-------------------------------------------------
মোহনা পেছনের বারান্দায় দাড়িয়ে দূরের সবুজ ধানক্ষেতের দিকে তাকিয়ে আছে। সায়লা বললেন, " তুমি এখানে দাড়িয়ে আছ? সবাই তোমার জন্য অপেক্ষা করছে। গাড়ির সময় হয়ে যাচ্ছে, তাড়াতাড়ি এসো"।
মোহনা রিক্সায় উঠলো। তার চোখ সারা রাস্তা চারিদিকে কাকে যেন খুজছে।
হ্যা, হাসান। যদি একবার দেখা হয়ে যায় ওর সাথে, শেষবারের মতো। হাসান আর আসেনি মোহনার সাথে দেখা করতে। সেদিনের শেষ দেখাটা বার বার মনে হচ্ছে মোহনার, হাসানের সেই অনুতাপে ভরা মুখ। মোহনার নিজেকে অনেক ছোট মনে হচ্ছে।
হাসান মোহনাকে অপমান করল, তার সাথে না দেখা করতে এসে। হাসান প্রমান করে দিল, তাদের বন্ধুত্বের কনো মূল্য নাই। মোহনাও তার কাছে মূল্যহীন। আর কিছু নাই হোক, মোহনা এটা ভেবেছিল, তার চিঠির একটা উত্তর দিবে হাসান। কিন্তু, সব ভুল।
মোহনা আজ তার প্রশ্নের উত্তর পেয়ে গেল। হাসান মোহনার কথা ভাবে না, যেমন ভাবে মোহনা হাসানের কথা। মিঠুর খাঁচা হাতে নিয়ে মোহনা বাসে উঠল। চরম অপমানের একবুক ভরা কষ্ট নিয়ে সে মুক্তাগাছাকে পেছনে ফেলে সামনের নতুন জীবনের দিকে এগিয়ে যেতে থাকল। মোহনার ছোট অভিমানী মন সিদ্ধান্ত নিল, হাসানের কথা সে ভুলে যাবে, কখনো ওর সাথে যোগাযোগ করবে না।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।