আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

নীলাকাশের শূণ্যতা (৫)



মোহনাদের যাবার দিন ঘনিয়ে আসছে। সব কিছু গুছগাছ চলছে। মোহনার মন খুব খারাপ। একা একা ঘুরে বেড়ায়, মাঝে মাঝে বাসার পাশের বিশাল ধানখেতের দিকে তাকিয়ে কথায় যেন হারিয়ে যায় সে। সব বন্ধু-বান্ধবীদের জন্য খুব খারাপ লাগে।

হাসানের জন্যও মোহনার মনটা আনচান করে উঠে। আর কোন দিন হয়তো দেখা হবে না ওর সাথে। নিজের অজান্তেই কখন যেন মোহনার চোখ ভিজে যায়। হাসানের সাথে ইদানিং একদমই দেখা হয় না মোহানার। হাসানতো স্কুলেও যায় না।

মোহনা একটা নোটবুকে ওর খুব পছন্দের কিছু গান লিখে রাখে। নোটবুকের প্রথম গান টা ছিল শেষ চিঠি, "এ আমার শেষ চিঠি হয়ত তুমি পড়বে না, কথা দিলাম কোন দিনো আর কিছু লিখবনা। স্মৃতি যদি কাঁদায় আমাকে কখনো নিজেকে আড়াল করে রাখব শুধু জেন ঝরা ফুলের মত কোনো গন্ধ ছড়াব না। ভুলে যাব তোমায় বলতে পারি না কোনদিন মনের ভুলে খুজব কিনা জানিনা" অবশেষে মোহানার অপেক্ষার বাঁধ ভাংলো। হাসান বলেছে মোহানাদের বাসায় আসবে।

সারা রাত মোহানর ঘুম হলোনা, কখন সকাল হবে। প্রতিটি মুহূর্ত যেন গুনে গুনে পার করছে সে। সকাল হল। সারাদিনের প্রহর গুনার পালা। আজ সব কিছু ভাল লাগছে মোহনার।

কিন্তু অপেক্ষার সময় যেন কাটতে চায় না। দুপুর গড়িয়ে বিকাল হল। মোহনার হৃদয়ে যেন দুম দুম শব্দ হতে থাকে। হাসান যেকোন সময় আসবে। পথ চেয়ে তাকিয়ে থাকে সে।

হায়! আশার আলো ধিরে ধিরে নিভে যেতে থাকে। সন্ধ্যা গড়িয়ে রাত নেমে এল কিন্তু হাসান এলো না। মোহানার দুই চোখ বেয়ে সারাদিনের আনন্দ টুকরো টুকরো হয়ে ঝরতে থাকল। এক টুকরো কাগজ আর একটা কলম হাতে নিয়ে মোহনা হাসানকে চিঠি লিখতে বসলো: "তুই কিভাবে বুঝবি আপেক্ষা করা কতটা কষ্ট, তুই তো কখনো কারো জন্য অপেক্ষা করিশ নি। সারা সকাল, সারা দুপুর, সারা বিকাল আমি তোর পথ চেয়ে থাকলাম কিন্তু তুই আসলি না।

আমি তোর কথা কোন দিনো ভুলবনা। যখন হাতে মেহদি দিব তখন তোর কথা মনে পড়বে। আকাশে যখন চাঁদ উঠবে, আমি এক পাশে তাকিয়ে থাকবো, আর অন্য পাশে তুই, আর চাঁদ দেখবে আমাদের দুজন কে। আমি জানি না তোর সাথে আবার কখনো দেখা হবে কি না। আমাদের বন্ধুত্ব যদি সত্যি হ্য়, তাহলে তোর সাথে আবার দেখা হবে।

" চিঠি টা লিখে নোটবুকের মধ্যে রেখে দিল মোহনা। এর পর আরো কিছুদিন কেটে গেল। মোহনা মনে মনে ভাবল, হাসান আর আসবে না। এদিকে ওদের যাওয়ার সময় হয়ে যাচ্ছে। একদিন বিকাল বেলা মোহনা মিঠুকে নিয়ে বাসার সামনের মাঠে হাটছিল।

হঠাৎ দেখে হাসান আসছে। মোহনার আনন্দ যেন আর ধরে না। হাসানের সাথে ওর এক জন মামাত ভাই , প্রীন্স আর খালাত ভাই শিবলী এসেছে। বাসায় যেয়ে বসল ওরা। হাসান মোহনারা যেখানে যাচ্ছে তার ঠিকানা চাইল কিন্তু মোহনা তো জানে না সেই ঠিকানা।

কিছুখন পর ওরা চলে যেতে চাইল। মোহনা হাসানকে তার সেই গানের নোটবুক আর চিঠিটা দিল। হাসান মোহনার জন্য একটা বই নিয়ে এসেছে। যাবার সময় শিবলী মোহনা কে বলল, "চলি ভাবি" তার পর এক দউরে মাঠ পার। ।

মোহানা এমন একটা কথার জন্য মোটেও প্রস্তুত ছিলনা। হাসানের কাছে জানতে চাইল, কি বলল শিবলী? হাসান মাথা নিচু করে শুধু বলল, "আমি জানি না শিবলী কেন এটা বলল"। মোহনা হাসানের মুখে একটা অপরাধবোধের ছায়া দেখতে পেল, আর কিছুই নয়। মোহনা কি যেন একটা খুজছিল হাসানের মাঝে কিন্তু কিছুই পেল না, অনুতাপবোধ ছাড়া।


অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।