আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

নীলাকাশের শূণ্যতা (২)



আজ মোহনার প্রথম দিন নতুন স্কুলে। আম্মুর সাথে স্কুলে এসেছে সে। স্কুলের দপ্তরী তাকে ক্লাশ ফোর এর ক্লাশ রুম এ নিয়ে গিয়ে বসিয়ে দিল। ক্লাশ এ অনেক ছাত্র-ছাত্রী, চারিদিক এ অচেনা মুখ। সবাই তার দিকে কৌতুহলি দৃষ্টি তে তাকিয়ে আছে।

একের পর এক ক্লাশ চলতে থাকলো। প্রতিটি ক্লাশের স্যার-ম্যাডাম দের সামনে মোহনা কে তার পরিচয় দিতে হল। তার একদম ভালো লাগছে না। ক্লাশের কয়েকজন মেয়ের সাথে তার কথা হলো। কিন্তু খুব একটা ভাব হল না।

ক্লাশের সব থেকে ভাল ছাত্র হল হাসান। সব পড়া ওর খুব ভাল ভাবে করা, তাই সব টিচার রা হাসান কে অনেক আদর করে। কিছুদিনের মাঝেই মোহনার স্কুলে মন বসে গেল। মোহনা খুব হাসি-খুসি, চঞ্চল একটা মেয়ে। সারা দিন স্কুলে ছুটোছুটি করে।

সব টিচার রা মোহনা কে অনেক ভাল বাসে, মোহনা অনেক ভাল গান গায় তাই। কয়েক দিনের মাঝেই মোহনার অনেক বান্ধবী-বন্ধু হয়ে গেল। ওদের সাথে অনেক ভাব এখন তার। আর সব থেকে ভাল বন্ধু হল হাসান। ওরা একসাথে খেলে, মজা করে।

২ জনই খুব গল্পের বই পড়ে। ২ জন এর মনের অনেক মিল। একদিন কেউ স্কুলে না গেলে, অন্যের মন খারাপ হয়ে যায়। হাসান অনেক ভাল ছবি আঁকে, কবিতা লিখে, আবৃত্তি করে। মোহনা আর হাসান একসাথে বিভিন্ন প্রতিযোগীতায় যায়।

গান, নাচ আর আবৃত্তির প্রথম পুরস্কার গুলো সব সময়ই মোহনার হাতে আসে। আর রচনা প্রতিযোগীতা, চিত্রাংকন, হাতের লেখা, কুইজ এগুলোর প্রথম পুরস্কার ছিনিয়ে আনে হাসান। আবৃত্তি তে হয় ২য়, কারন ১ম এর ভাগটা তো মোহনার। হাসান মাঝে মাঝে গান গাওয়ারও চেষ্টা করে। একবার ঘটল এক মজার ঘটনা।

স্কুলের বার্ষিক মিলাদ এ ইসলামিক গান প্রতিযোগীতায় হাসান ১ম হয়ে গেল কাকতালীয় ভাবে আর মোহনা ২য়। সেই প্রথম মোহনা গান এ ২য় হল। কিন্তু পরাজয়ে যে কেউ এত পুলকিত হতে পারে, সেদিন মোহনা কে না দেখলে কেউ ভাবতেও পারবে না। এটা যেন তারই বিজয়। ওরা এখন ক্লাশ ফাইভে।

একদিন স্কুলে হাসানের বাবা আসলেন। তিনি দেশের বাইরে থাকেন। ছুটিতে এসেছেন বাংলাদেশ। তার ৩ ছেলে-মেয়ের মাঝে সব থেকে প্রিয় হাসান। তিনি হাসান দের ক্লাশে আসলেন, হাসানের বন্ধু-বান্ধবীদের অনেক ছবি তুললেন।

ক্লাশের সবার মাঝে শুধু মোহনার চিবুকে হাত দিয়ে আদর করে জিজ্ঞাস করলেন, "মামনি তোমর নাম কি?" মোহনা লজ্জায় লাল হয়ে শুধু তার নাম টা উচ্চারন করল। মোহনা হাসান কে কোন বই পড়তে দিলে হাসান আগে বইয়ের পাতা গুলোতে চোখ বুলিয়ে নেয়। কারন হাসান জানে, কিছু না কিছু মোহনা লিখবেই হাসানের জন্য। জন্মদিনে ,ঈদে ওরা একে অন্যকে উপহার দিতে কখনই ভুলেনা। ওদের কয়েক জন বন্ধু একদিন হেড স্যার কে যেয়ে বলে, হাসান মোহনা কে ক্লাশে বিরক্ত করে।

এই কথা শুনে স্যার রা অনেক রেগে যান। দপ্তরিকে বলেন হাসান কে ডেকে নিয়ে আসার জন্য। হেড স্যারের রুমে যেয়ে হাসান দেখে তার ২জন বন্ধু দাড়িয়ে আছে। হেড স্যার হাসানকে বললেন, " হাসান, তুমি নাকি মোহনা কে বিরক্ত করো? কথা টা কি সত্য?" হাসান যেন নিজের কানকে বিশ্বাস করতে পারছে না। তার এত প্রিয় মানুষটিকে সে কিভাবে বিরক্ত করবে? লজ্জায়, অপমানে হাসান লাল হয়ে যায়।

শুধু একটা কথাই সে বলতে পারে, "স্যার, আপনি একবার শুধু মোহনা কে জিজ্ঞাস করে দেখেন। ও যদি বলে, আমি ওকে বিরক্ত করি, তারপর আপনি আমাকে যা শাস্তি দিবেন, আমি তাই মেনে নিব"। মোহনাকে স্যাররা সবাই এত ভালবাসেন, তারা তো কখোনই কিছু তাকে জিজ্ঞাস কররবেন না। তবে তারা বুঝতে পারেন, অভিযোগটি সত্য নয়। যারা এই মিথ্যা কথা বলেছে, তাদেরকে তিনি শাস্তি দেন।

স্যারের রুম থেকে বেরিয়ে হাসান সরাসরি বাথরুমে যায়। দরজা বন্ধ করে অনেক কাঁদে। তারপর যখন ক্লাশে ফিরে, মোহনা তাকে দেখে অবাক হয়ে যায়। জানতে চায় তার কি হয়েছে। হাসান তাকে কিছুই বলতে পারে না।

শুধু মাথা নিচু করে বসে থাকে। চলবে..

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।