সামুদ্রিক বিভ্রম
আমার চিন্তাগুলো সবসময়ই এলোমেলো ভাবে তৈরী হয়। লেখালেখির ক্ষেত্রেও এই এলামেলোতার প্রভাব পড়ে। সুচিন্তিত ভাবে তেমন কিছুই লিখতে পারিনা। হুটাহাট লিখে ফেলি। আমার ভাবতে কষ্ট হয়, আজ পর্যন্ত আমি সুচিন্তিত ভাবে, সুপরিকল্পিত ভাবে তেমন কিছুই লিখিনি।
আমার কবিতা সমুহ -অবশ্যই কোন না কোন সুনির্দিষ্টতা সামনে রেখে সম্পন্ন- কোনটিই সুচিন্তিত ভাবে রচিত নয়। অবশ্য দু’একটা যে নেই তা নয়। আছে। যেমন, একটি পংক্তির জন্য কবিতাটি। এটি রচনার পূর্বেই এর কাঠামো এবং এর সমাপ্তি পরিকল্পনা করে নেওয়া হয়েছে।
কিন্তু আমার অধিকাংশ কবিতাগুলোই এরকম ভাবে রচিত হয়নি। ঐ সমস্ত কবিতাগুলো একরকম হুট করেই লেখা হয়েছে। কবিতার প্রথম পংক্তিটি লেখার সময় শেষ পংক্তিটি সম্পর্কে আমার কোন ধারনাই থাকেনা। ফলে একটি কবিতা লেখার পরে বেশ কয়েকবার সংশোধন অনিবার্য হয়ে উঠে। এরকম সংশোধন করতে করতে কখনো কখনো এমন হয় যে, কবিতার আদিরূপের (এমনকি অর্থ সহ) বিলুপ্তি ঘটে।
আমার মাথায় স্বতস্ফুর্ত ভাবে পংক্তি তৈরী হলেও কবিতা তৈরী হয় না। তৈরী করে নিতে হয়। এই তৈরী প্রক্রিয়াও আবার কখনো সখনো বেশ সময় সাপেক্ষ। এক অর্থে আমি মূলত পংক্তি তাড়িত হয়েই কবিতা লিখি। হ্যাঁ, এটা স্বীকার করতে আমার বিন্দুমাত্র দ্বিধা নেই, আমার কবিতা পংক্তি প্রধান।
পংক্তিই এখানে ঈশ্বর। পংক্তিই এখানে বাইজী। পংক্তির পর পংক্তি সাজাতেই আমার অধিক ভালো লাগে। কবিতা লেখার চেয়েও। এইসব পংক্তি সমষ্টি সবসময়েই যে কবিতা হয়ে উঠে, তা নয়।
বরঙ অধিকাংশ সময়ই কবিতার দেখা মেলে না। রাত পেরিয়ে যায়।
অবশ্য এর অর্থ এই নয় যে, আমার কবিতা সমূহ শুধুমাত্র পংক্তিসর্বস্ব অধারাবাহিক ‘পড়ে পাওয়া’ রচনা সমষ্টি মাত্র। ঐ যে বলালম, সংশোধিত হয়। প্রতিটি কবিতা লেখার জন্য সংশোধন নামক এই অনিবার্য অশেষ যন্ত্রণার মধ্য দিয়ে যেতে হয় আমাকে।
এটা অবশ্য আমার আনন্দও। এটা একধরনের খেলা- কিছুটা গণিতও বটে। এই খেলাটা খেলতে খেলতে আমার কবিতারা কিছুটা কথিত দুর্বোধ্যতার চাদর জড়িয়ে নেয়। কুয়াশার মতোন আর্দ্র জটিল এই সব কবিতারাশি কখনো কখনো আমার নিজের কাছেও মোহময় অবোধ্য মনে হয়। আমার কবিতা।
কিন্তু আমি এটা উপভোগ করি। যে জীবন যাপন করে চলছি নানা অভিজ্ঞতার মধ্য দিয়ে তা-ইতো চুড়ান্ত ভাবে নিরর্থক। সেইখানে আমার কবিতার অর্থবহতার বিশেষ প্রয়োজন আছে কি?
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।